আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমাতে আমাতে,শুধু নীরবে ভুঞ্জন



আজ আমার মন ভালো নেই। মন ভালো থাকার কোনো কারনও ঘটে নাই। চোখের চার পাশে সবকিছুই ক্রমশ এলোমেলো ঠেকছে। কিছুই আমার আয়ওে থাকছে না। মানুষে মানুষে সম্পর্ক টা এখন বড় যান্তিক হয়ে গেছে।

বাবা-মা থেকে শুরু করে সবার কাছ থেকেই দূরে সরে যাচ্ছি। কিন্তু আমি চাই মা-বাবা আমাকে তাদের লক্ষী সন্তান হিসেবে কাছে টেনে নিক,তখন আমার আর 'হিমি'র সামনে কোনো বাঁধা থাকবে না। জীবনে অনেক কথা আছে অনেক আপন মানুষকে ও বলা যায় না। আর তাছাড়া মানুষ সবসময় তো সব প্রশ্নের জবাব জানেও না। খামোকা অনিদিষ্ট কারনে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা-ঘোরি করি।

কখনো রাস্তার এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকি। আমি রাস্তার মানুষ জন দেখি। 'হিমি'র কথা কিছু ভাববো না ঠিক করেছি। কিন্তু কিছু না ভেবে কি আর পারা যায়?অনবরত হাজার হাজার সৃস্তি গভীর কোথা থেকে উঠে এসে আমাকে তছনছ করে দেয়। তখন খুব কষ্ট হয় নিজেকে সামলাতে।

সবকিছু কি আর সামলানো যায়?আমি খুব বুঝতে পারি,যে আমাকে দেখবে ,সেই ঠিক বুঝবে এক পরাজিত পুরুষ আমি। এক সময় বিরক্ত হয়ে রাস্তার ফুটপাতেই বসে পড়ি। সব কিছু ছাপিয়ে টের পাই এক আকাশ অসম্ভব ক্লান্তি শরীরে। আহ্ এখন কেউ যদি এক গ্লাস লেবুর সরবত করে দিত!আবার উঠে হাঁটতে শুরু করি। হন হন করে হাঁটতে থাকি।

পরক্ষনেই হাসি পায়,হন হন করে হেঁটে যাওয়ার মতো কোনো গন্তব্য নেই আমার। নিজের বাসাতেও না তবে ওভাবে হাঁটছি যে?এই প্রশ্নের ঊওর নেই। আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে খুব ক্ষিধে পেয়ে গেল। রাস্তার পাশে একটা দোকানে ডুকে পড়ি। প্যাকেটের অবস্থা বেশী ভালো না।

একটা সিঙ্গাড়া এক কাপ চা নিলাম। তার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে কষে টানতে থাকি। মাথার উপরে শেষ দুপুরের ক্লান্ত রোদ। বাসাতে ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না। সামনে রাস্তা।

ওই রাস্তার দিকেই পা বাড়িয়ে দিলাম। কিছু দূর যেতেই এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। কাছের বন্ধু। অনেকদিন দেখা হয় না। ওই বন্ধুর সঙ্গেই থাকি অনেক ক্ষন।

সন্ধ্যার দিকে বন্ধুর সাথে আমাদের সেই পুরানো আড্ডায় যাই। আমি এ আড্ডা ছেড়ে দিয়েছি বহুদিন আগে। কাপের পর কাপ চা চলছে,সবার হাতে দামি সিগারেট। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আড্ডা থেকে উঠে পড়ি। তারপর ফুরফুরে বাতাসে হাঁটতে হাঁটতে বাসা'য় ফিরে আসি।

আমার ঘুমের সমস্যা অনেক দিনের। মাঝে মাঝে সারারাত একবারে ঘুমহীন কেটে যায়। খুব বুঝতে পারি আজ রাতেও ঘুম আসবে না। খুব পুরোন কিছু বই এখনও খুব যত্নে আমার কাছে আছে। সেগুলো উল্টে পালটে দেখি।

শেষে যখন টের পাই বাসা'র সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়েছে,তখন ব্যালকনিতে গিয়ে বসি। সিগারেট ধরাই। বাইরে দূরে তাকিয়ে থাকি। খুব 'হিমি'র কথা মনে হয়। 'হিমি' তুমি কি জানো,এই মানব জীবনের তাৎপর্য কি?তোমার কাছে অনেক ঋনি থেকে গেলাম।

ভালো লাগে না। কিন্তু আমার'ই ভালো লাগার কথা ছিল। তবে ভালো লাগে না কেন?হিমি'র জন্য?হ্যা,হিমি'র জন্যই। কিন্তু আমি কি হিমি'র মুখোমুখি হতে পারবো কখনো?এই ভেবে দিন-রাত চলে যাচ্ছে। অধিকাংশ সময় একা থাকি বলেই হিমি'র কথা মনে পড়ে।

তখন কান্না পায়। আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল। সারা বাড়ি নিশ্চুপ। ভাবলাম অনেকদিন ভোরের আকাশ দেখি না। আজ ভোর হতে দেখবো।

হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম রমনা পার্কে। সকালের পরিবেশটা আসলেই দারুন। মন ভরে যায়। একটা অভ্যাস আছে আমার। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার দু'পাশের দোকান পাট,মানুষ জন,সাইন বোর্ড খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করি।

এই অভ্যাস অনেক দিনের। সময় খারাপ কাটে না। আবার যখন ঘুম আসে না,তখন বিছানায় শুয়ে 'হিমি'র কথা ভাবি। আমি আর 'হিমি' যে সূতায় বাঁধা,সে তো সব সময়'ই ধরা ছোঁয়া'র বাইরে। একদিন বিকেলে আজিজ মার্কেটের পিছনে এক চায়ের দোকানে বসে আছি।

কিন্তু চা খেতে বসে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। চিকুন স্বাস্থের এক লোক যার শরীরে লাল কাপড় এবং গলায় বিভিন্ন রকম পাথরের মালা। হাতে একটা বাঁকানো লাঠী। দোকানে ঢুকে ঠিক আমার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে খুব গম্ভীর গলায় বললো 'দে'। কী দেব! এ ধরনের আধ-পাগলা লোক আমার কখনোই ভালো লাগে না।

চায়ের কাপে মাএ একটা চুমুক দিয়েছি,আমি চোখ তুলে অনেকক্ষন পাগলা লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকি,গলার স্বর মোটা করে বলি, কী চাই? লোকটা আবারো রেগে গিয়ে বললো। 'দে'। আমার আশে পাশে অনেক মানুষ জমে গেছে। তারা খুব মজা পাচ্ছে। আমি চায়ের কাপে আবার চুমুক দেই,কিন্তু চুকুম দেবার আগেই পাগলা লোকটা হাত বাড়িয়ে কাপ সরিয়ে দেয়।

তখন কিছু চা ছিটকে টেবিলে আর আমার হাতে পড়ে,পাগল লোকটা বলে 'দে! আমার তখন আর কিছুই করার থাকে না। আমি দোকান থেকে উঠে আসি। আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা দিয়ে লেখাটা শেষ করবো। এই পৃথিবীর মধ্যে ছিল অনন্ত এক শীতল পাটি। অনেক দাঙ্গা ঝগড়া ঝাঁটি পার হয়ে তাই ভালোবাসা জাগিয়েছিল অনেক আশা, ফুটিয়েছিল অজস্র রং খানিকটা তার গদ্য এবং খানিকটা তার পদ্য ছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।