আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকটি বুলেট



রাত খুব বেশি গভীর হয়নি। কিন্তু আকাশে চাঁদ না থাকায় রাতটা গভীরই বলা যায়। রাস্তার লাম্পপোস্টগুলো অবশ্য যথেষ্ট আলো দিচ্ছে। কিন্তু মেইনরোড ছাড়া বাকী অলি-গলি রাস্তাগুলো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। সেরকম এক গলির ভিতর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শাওন।

পরিচিতরা ডাকে শাইন্যা বলে। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। টহলরত পুলিশও নয়। গলির শুরুতে একটি গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে। কাছে আসতেই শাওন পথের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে।

যেন কোন কিছুকেই ভয় করে না সে। কাছে এসে গাড়ি থেমে যায়। শাওন তার সাইলেন্সার লাগানো বন্দুকটা বের করে গাড়ির দিকে তাক করে। তার গলা চড়ে ওঠে,'ওই হালা! বাইর হ গাড়ির থেইক্যা!' গাড়ির চালক তার কথা না শুনে গাড়ি চালিয়ে দিতে যায়। শাওন একটা গুলি করেই পাশে লাফ দেয়।

গাড়ি কিছুদূর গিয়েই থেমে যায়। গাড়ি থেকে এক মহিলার আর্ত চিৎকার শোনা যায়। হইচই লেগে যাওয়ার আগেই শাওন দৌড়ে গিয়ে গাড়ির জানালার উপর দিয়েই মহিলার উপর গুলি ছোড়ে। কাঁচ ভেঙে দরযা খুলে দেখে দু'টি নিস্তেজ দেহ বসে আছে। ক্ষত জায়গা থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে।

তার ধারণা হয় বিপদ কেটে গেছে। এত সহজেই কাজটা হয়ে যাবে ভাবেনি। কিন্তু তার খুন করারও মতলব ছিল না। সে এর আগে শুধু পথচারীদের ছিনতাই করত। তাতে যে তার হাতে কেউ খুন হয়নি তা নয়।

তবে আজ যে কাণ্ডটা করেছে তা আর কখনই সে করেনি। আসলে একেবারে অনেক টাকার লোভ সামলাতে পারেনি। এবার শুধু লাশগুলো সরালেই হল। কিন্তু লাশগুলো নিতে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে পিছনের ছিটে ঘুমন্ত ছোট্ট এক শিশুর দিকে। চমকে ওঠে শাওন।

বের হয়ে পিছনের দরজা খুলে ভাল করে দেখার চেষ্টা করে। পাঁচ-ছয় মাসের এক বাচ্চা। নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে। একটু আগে তার বাবা-মার সাথে কি ঘটেছে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে থাকে শাওন।

সম্বিৎ ফিরে পেতেই চিন্তার ঝড় ওঠে তার মাথায়। কি হবে এই শিশুর এখন? সাথে করে নিয়ে গেলে কি পারবে এর দেখাশোনা করতে? এত ছোট্ট একটা বাচ্চা। কি মায়াবী চেহারা। কিছুতেই ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে তাকে আপন করে নেয়ার।

কিন্তু শাওন কি পারবে কখনো এর সামনে চোখ তুলে তাকাতে? সে তো নিজেই শেষ করে দিয়েছে বাচ্চাটার ভবিষ্যৎ। তার থেকে ফেলে যাওয়াই ভাল। কিন্তু ফেলে রেখে গেলে একদিন হয়তো শাওনের মতই কোন ছিনতাইকারী হয়ে উঠবে। খুন করবে আরও বাবা-মাদের। শাওন উপলব্ধি করল আজ সে প্রথমবার নিজেকে ঘৃণা করছে।

অপরিচিত এক শিশুকেও সে নিজের মত হতে দিতে চায় না। এরপর তার কাছে একটাই উপায় ছিল। বন্দুকটা তার হাতেই ছিল। তাক করল শিশুটির মাথা বরাবর। ট্রিগারে চাপ দিল।

নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইল আরেকটি দেহ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।