আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুলেট, ব্যালট ও ভোট বয়কট

সাংবাদিক

বুলেট, ব্যালট ও ভোট বয়কট শান্তনু দে ‘বন্দুকের নলই রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। ’ মাওকে কে ‘কোট’ করে স্বঘোষিত বন্দুক-বিপ্লবীরা এখনও এই স্লোগান দিয়ে চলেছেন। অথচ, নির্বাচিত সামরিক নিবন্ধের ‘প্রবলেমস অব ওয়ার অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি’ অধ্যায়ে মাও শুধু এটুকু বলেই থামেননি। সঙ্গে আরও বলেছেন, ‘আমাদের নীতি হলো, পার্টি নির্দেশ দেবে বন্দুককে। বন্দুক যেন কখনও পার্টিকে নির্দেশ না দেয়।

এবং কখনোই তাকে আমাদের অনুমোদন করা উচিত নয়। ’ যদিও ঘটনা হলো, লালগড় থেকে রাজনন্দগাঁও, বেলপাহাড়ি থেকে বস্তার — বন্দুকই নির্দেশ দিচ্ছে পার্টিকে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধে ‘সমরাস্ত্রই শেষ কথার’ মতো একতরফা দৃষ্টিভঙ্গীকেও সংশোধন করে দিয়েছিলেন মাও। ওই নির্বাচিত সামরিক নিবন্ধেরই ‘অন প্রোট্র্যাক্টেড ওয়ার’ অধ্যায়ে মাও বলেছেন, ‘সমরাস্ত্রই সবকিছু নির্ধারণ করবে — যুদ্ধের প্রশ্নে এই তথাকথিত তত্ত্ব নিছকই একটি যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী। এবং অবশ্যই বিষয়ীগত ও একতরফা একটি দৃষ্টিভঙ্গী।

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী এর বিরোধী। আমরা শুধু সমরাস্ত্রকে দেখি না। দেখি মানুষকেও। সমরাস্ত্র — যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ঠিকই। তবে তা কখনোই নির্ণায়ক উপাদান নয়।

’ তাহলে নির্ণায়ক শক্তি কে? মাওয়ের উপলব্ধি, ‘আসলে নির্ণায়ক শক্তি হলো জনগন। .....সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির চেয়েও অনেক বড় শক্তি হলো জনশক্তি। ’ অথচ, বন্দুকবাজ এই বিপ্লবীদের একমাত্র ভরসা এ কে ৪৭-এ। ‘শ্রেণী শত্রু’ নিধনের যে অভিযান আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে ওরা শুরু করেছিল, আজও তা অব্যাহত। শ্রেণী শত্রু কারা? দরিদ্র খেত মজুর, গরিব ছৌশিল্পী।

ডাক্তার, নার্স। স্কুল মাস্টার, ভোট কর্মী। তাঁদের মেরে কোন্‌ বিপ্লব? হয়তো ওদের চোখে এই নিরীহ অসহায় মানুষগুলো সব ‘মহান ভারতীয় বিপ্লবের শত্রু’, ‘সাম্রাজ্যবাদের পা-চাটা কুত্তা’। ওঁরা গরিব ঘরের বাচ্চাদের স্কুল ওড়ান। গ্রামগঞ্জের স্বাস্থ্যকেন্দ্র পোড়ান।

মাস্টারমশাইকে পেটান। স্কুলের বাচ্চাদের সামনেই তাদের প্রিয় মাস্টারমশাইকে খুন করেন। আর ভোট আসলেই দেন ‘ভোট বয়কটের’ ডাক। লালগড় থেকে রাজনন্দগাঁওয়ে। মাওবাদীদের দাবি, ভারতীয় গণতন্ত্র সোনার পাথরবাটির চেয়ে বেশি কিছু নয়।

সেকারণে এখানে নির্বাচন অর্থহীন। এখন অবধারিত প্রশ্ন হলো, নির্বাচন যদি সত্যি অর্থহীনই হয়, তবে তারা একে বানচাল করার জন্য এত সক্রিয় কেন? নির্বাচন যদি আক্ষরিক অর্থেই প্রহসন হয়, তবে স্বঘোষিত এই বিপ্লবীরা কেনই বা একে পন্ড করতে এত মূল্যবান সময়, এত মহার্ঘ বুলেট খরচ করে চলেছে? ওঁরা বলেন, ‘সংসদকে শূয়োরের খোঁয়াড় বলেছিলেন লেনিন। ’ ওঁদের কে বলবে লেনিন যে সংসদকে (প্রথম ডুমা) ‘শূয়োরের খোঁয়াড়’ বলেছিলেন, তা লেনিনের মূল্যায়ণে ‘আদৌ কোনও সংসদ ছিল না। ’ তাছাড়া, যে লেনিন প্রথম ডুমা বয়কটের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন, সেই লেনিনই কিন্তু দ্বিতীয় ডুমা বয়কটের নীতি ‘পুনর্বিবেচনা’ করার কথা বলেন। কেন? ‘পরিস্থতি বদলে যাওয়ায় ও বিপ্লব অবসন্ন হয়ে পড়ার দরুন।

’ ‘শূয়োরের খোঁয়াড়’ জেনেও, দ্বিতীয় ডুমা সম্বন্ধে লেনিনের মত ছিল, পরিস্থতি বদলে যাওয়ায় ও বিপ্লব অবসন্ন হয়ে পড়ার দরুন বলশেভিকদের ‘নিশ্চয়ই স্টেট ডুমা বয়কট করার নীতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ’ লেনিন তৃতীয় আন্তর্জাতিকে কর্তব্য নির্ধারণের সময় লিখেছিলেন, ‘(কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এবং তা হবে ব্যতিক্রম) কোনও অবস্থাতেই পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা ও কাজকে এবং বুর্জোয়া গণতন্ত্রের সমস্ত ‘স্বাধীনতাকে’ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা চলবে না, সেগুলিকে প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবী শ্রেণীসংগ্রামের উপজাত হিসেবেই শুধু দেখতে হবে। ’ লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, লেনিন বলছেন, ‘সেগুলিকে (পার্লামেন্টকে) প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবী শ্রেণীসংগ্রামের উপজাত হিসেবেই শুধু দেখতে হবে। ’ অস্ট্রিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি তখন দেশের বুর্জোয়া পার্লামেন্ট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লেনিন তাদের ভুল সংশোধন করার জন্য অস্ট্রিয়ার কমিউনিস্ট পার্টিকে চিঠি লিখেছিলেন।

জার্মানির স্যোশাল ডেমোক্র্যাটরা যখন সেদেশে সংসদে যোগ দেওয়ার আপত্তি করেছিলেন, তখন এই লেনিনই তাঁদের তীব্র সমালোচনা করে সংসদে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ভুল দেখিয়ে দিয়েছিলেন ‘বামপন্থী ডাচ’ কমিউনিস্টদের। মাওবাদীরা বলেন, ‘তথাকথিত সংসদীয় গণতন্ত্রের একমাত্র বাইরের খোলসকেই যাঁরা শুধু দেখেন, তাঁদের কাছে নিশ্চিতভাবেই (কেন আমরা সংসদীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করি না) এটি একটি সঙ্গত প্রশ্ন। কিন্তু শুধু গঠন নয়, যেটা গুরুত্বপূর্ন তা হলো, এর মর্মবস্তু, এর নির্যাস, এর সারমর্ম। যখন আপনি গণতন্ত্রের বাইরের পোশাককে বিবস্ত্র করবেন, তখন আপনি দেখবেন এর মধ্যে রয়েছে পচা, দুর্গন্ধময় ফসল।

’ ঠিকই, কিন্তু দেশের আমজনতা কি তাই মনে করছেন? আপনারা যে শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন বলে দাবি করেন, সেই শ্রেণী কি তাই মনে করছে? বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তাঁরা কি আপনাদের মতোই পুরোদস্তুর ওয়াকিবহাল? ‘লেনিনবাদের সমস্যা’য় স্তালিন বলেছেন, ‘কথাটা এই নয়, অগ্রণী অংশ পুরনো ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার অসম্ভবতা এবং তার উচ্ছেদের অনিবার্যতা উপলব্ধি করেছেন কি না। কথাটা এই যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অনিবার্যতা বুঝেছেন কি না এবং তার অগ্রণী অংশকে সমর্থনে তাঁরা প্রস্তুত কি না। আর জনগণের এই উপলব্ধি কেবলমাত্র তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই আসতে পারে। ’ লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, স্তালিন বলেছেন ‘কথাটা এই যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অনিবার্যতা বুঝেছেন কি না এবং তার অগ্রণী অংশকে সমর্থনে তাঁরা প্রস্তুত কি না। ’ আরও লক্ষ্য করার মতো বিষয়, স্তালিন বলেছেন, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের’কথা।

লেনিনের শিক্ষা কী? লেনিন বলেছেন, ‘পার্লামেন্টারি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করাকে কেউ কেউ সময় নষ্ট বলে দাবি করছেন। পার্লামেন্টের ব্যাপারে সমস্ত শ্রেণীর যতটা আগ্রহ আছে, অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা আছে কি? এমন প্রতিষ্ঠান কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না। পার্লামেন্টারি সংগ্রাম সমস্ত শ্রেণীকে যে টেনে আনে তার কারণ পার্লামেন্টে সমস্ত শ্রেণীস্বার্থ ও শ্রেণীবিরোধ প্রতিফলিত হয়। যদি সর্বত্র এরকম সম্ভব হতো যে, এখনই একটি নির্ণায়ক সাধারণ ধর্মঘটে এক ধাক্কায় ধনতন্ত্রকে উচ্ছেদ করা যেতো, তাহলে এতদিনে অনেক দেশেই বিপ্লব হয়ে যেতো। কিন্তু বাস্তব যা, তা তো আমাদের মানতেই হবে।

এবং তা হলো পার্লামেন্ট শ্রেণী সংগ্রামের একটি মঞ্চ। ’ এটা ঠিক, বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বহু ত্রুটি রয়েছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারী, জাত-পাতের বৈষম্য নিয়ে মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক অসন্তোষ রয়েছে। সঙ্গত ক্ষোভ রয়েছে রাষ্ট্রের অপশাসন, দুর্নীতি নিয়েও। এই শূণ্যতাকে কোথাও কোথাও পুঁজি করছেন মাওবাদীরা।

এও ঠিক, ভোট বয়কটের জন্য সার্বিক প্রচারাভিযান চালানোর পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার মাওবাদীদের রয়েছে। কিন্তু মাওবাদীরা একে নিছক রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। প্রতিটি নির্বাচনে তাঁরা নিয়ে চলেছেন সমাজের সবচেয়ে নিরস্ত্র, নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্বলতম গ্রন্থিতে বেপরোয়া হিংসা ও সন্ত্রাসের রাস্তা। তাঁদের এই সন্ত্রাস আসলে তাঁদের জনবিচ্ছিন্নতাকেই প্রমাণ করে। বেআব্রু করে দেয় তাঁদের মতাদর্শের দেউলিয়াপনাকে।

নির্বাচনী গণতন্ত্রের কার্যকারিতা ও সাফল্য খতিয়ে দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হলো নির্বাচন। আজ থেকে চারদশক আগে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন নকশালপন্থীরা। লাভ হয়নি। ওদের চোখে নকশালবাড়ি তখন ‘ভারতের ইয়েনান’, ‘ভারতের ভিয়েতনাম’। আর আজ সেই নকশালবাড়িতেই ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য লম্বা লাইন।

গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া এই সময়ে ভারতীয় সমাজের শিকড়ে আরও দৃঢ়ভাবে গেড়ে বসেছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক, হতদরিদ্র অসহায় মানুষই আজ সবচেয়ে সাগ্রহে, সোৎসাহে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আয়, শিক্ষা, সামাজিক শ্রেণীবিন্যাশ এবং প্রান্তিকীকরণ — সমস্ত কিছুই নির্বাচনী অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে ব্যস্ত অনুপাতে সম্পর্কযুক্ত। শোষিত বঞ্চিত মানুষের কাছে একজনের ভোটাধিকার প্রয়োগই হয়ে দাঁড়ায় শক্তি সম্পর্ককে দুর্বল করার সংগ্রামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যা পালটা ‌আঘাত হানে শোষণ প্রক্রিয়ায়।

বস্তুত, এপ্রশ্নে এই মুহূর্তে রয়েছে একাধিক জোরালো শক্তিশালী প্রমাণ। গরিব আদিবাসী দলিত ভোটাররা আজ নিজেরাই তাঁদের সিদ্ধান্ত নেন। জোতদার-ঠিকেদার, মাফিয়া-মহাজন অথবা মাওবাদীদের চোখ রাঙানি, প্রলোভন-প্ররোচনা, হুমকি-শাসানিতে কমই প্রভাবিত হন। মাওবাদীরা সাধারণত দাবি করেন, ছত্তিশগড়ে আদিবাসী প্রধান এলাকায়, যেখানে তাঁরা ‘বিপ্লবী জনগণের কমিটি’, কিংবা ‘বিপ্লবী কৃষক কমিটি’ তৈরি করতে পেরেছেন, সেখানে রয়েছে এই ভারতের ‘সর্বোচ্চ ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’। ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ই যদি থাকে, তবে কেন সেখানে বন্দুকের নলের মুখে দাঁড় করিয়ে ভোট বয়কটের ডাক? যদিও ঘটনা হলো, তাঁদের ভোট বয়কটের ডাককে উড়িয়ে দিয়ে সেখানেই মানুষ কোথাও মোট ভোটারের অর্ধেক, কোথাও তিনভাগের দু’ভাগ ভোট দিয়েছেন।

একের পর এক ভোট বয়কটের ডাক মানুষ উপেক্ষা করায় মাওবাদীরা এখন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনপ্রিয় অংশগ্রহণকে আটকাতে ভোটারদের সন্ত্রস্ত করছে। ভয়ে-ভক্তিতে প্রাথমিকভাবে মানুষ বশ্যতা স্বীকার করলেও, পরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। সন্ত্রাসকে অস্বীকার করছেন। এই বেপরোয়া মনোভাব, প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার এই অবাধ্য স্পর্ধায় আসলে প্রতিফলিত হচ্ছে সেইসব মানুষের অভিপ্রায়, যাঁদের নামে তাঁরা রক্ত ঝরান। মতাদর্শের বিশুদ্ধতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে কোনও রাজনৈতিক শক্তি যখন তার প্রতিদিনের অনুশীলনে জনগণকে তাঁর স্বাধীন ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করতে সন্ত্রাসরাজ কায়েম করে, তবে তাকে স্বৈরাচার বলা কি অন্যায় হবে? মাওবাদীরা ঠিক কী চান? জনযুদ্ধ, না কি জনগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ? যদি বলেন, ‘চলমান জনযুদ্ধ’।

তাহলে তো ধনতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণী সংঘাত সততই চলমান। তাছাড়া, গত শতকের ‘বিশ ও তিরিশের দশকের তুলনায় বিশ্ব আজ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। উৎপাদিকা শক্তিগুলি এখন এক নতুন অবস্থানে। সাম্রাজ্যবাদ এখন এক নতুন অবস্থানে। এর বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামও এখন এক নতুন অবস্থানে।

তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিতেও বিশ্ব এখন এক নতুন অবস্থানে। সেকারণে সর্বহারার সামরিক কৌশলেরও এখন এক নতুন অবস্থান হওয়া উচিত। এবং এটা একান্ত প্রয়োজন। ’ একথা কিন্তু প্রকাশ কারাত বলেননি। বলেছেন পুস্প কমল দহল।

নেপালে মাওবাদীদের চেয়ারম্যান। আর এঁরা এখনও ‘রেডিমেড’ বিপ্লবের ভক্ত। চান এক্ষুনি, এই মুহূর্তে বিপ্লব করতে। এঁরা মার্কসবাদকে কর্মক্ষেত্রের পথনির্দেশিকা হিসেবে গ্রহণ করে না, গ্রহণ করেন আপ্তবাক্য হিসেবে। তাই সব সময়েই এঁরা অতি বিপ্লবী, বামপন্থী গোঁড়ামি, মতান্ধতা, হটকারিতার ব্যাধিতে আক্রান্ত।

নিছক অভিলাষ, বিপ্লবী বুলি, ধৈর্যের অভাব — এই ত্র্যহস্পর্শে এঁরা বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণের ধার ধারেন না। এঁদের কাছে সবসময়েই ‘সিচুয়েশন ফার্স্ট ক্লাস, সিচুয়েশন এক্‌সেলেন্ট। ’ কর্মীদের প্ররোচিত করতে সবসময়েই ব্যবহার করেন মাওয়ের সেই ‘কোট’ — ‘একটি স্ফূলিঙ্গই তৈরি করতে পারে একটি দাবানল। ’ ঠিক। কিন্তু তার জন্য জঙ্গলকে শুষ্ক শুকনো হওয়া প্রয়োজন।

স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে, হাজার দেশলাই কাঠি জ্বাললেও দাবানল হবে না। মার্কস এঁদের সম্পর্কে কী বলেছেন? ১৮৫০এ কমিউনিস্ট লিগের সভায় মার্কস বলেছেন, ‘এঁরা বাস্তব অবস্থার পরিবর্তে নিছক অভিলাষকেই বিপ্লবের ক্রিয়াশক্তি হিসেবে মনে করে থাকেন। ’ এঁরা বলেন, ‘অবিলম্বে ক্ষমতা দখল করতে হবে, অন্যথায় আমরা শুয়ে পড়তে পারি এবং ঘুমোতে যেতে পারি। ’ পরে স্তালিন আমাদের শিখিয়েছেন, ‘একথা ভুললে চলবে না যে দক্ষিণপন্থীরা ও অতি বামপন্থীরা হচ্ছেন প্রকৃতপক্ষে যমজ। এবং উভয়েই সুবিধাবাদী পথ গ্রহণ করেন।

কিন্তু উভয়ের মধ্যে তফাৎ হচ্ছে এই যে, দক্ষিণপন্থীরা সর্বদা তাঁদের সুবিধাবাদকে লুকিয়ে রাখেন না। কিন্তু অতি বামপন্থীরা অপরিহার্যভাবেই তাঁদের সুবিধাবাদকে বিপ্লবী কথার আড়ালে লুকিয়ে রাখেন। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।