তন্ময়-অন-রান.ব্লগস্পট.কম বুলেটের চেইনটা ঠিকমতো লেগেছে কিনা তা আরেকবার দেখে নিলো অনুপ। সব ঠিকই আছে। ভোর রাতের নিস্তব্ধতায় টুং টাং শব্দও ভীষণ কড়া মনে হচ্ছে। দিবালোকে এই ফ্লাইওভারের ওপরও জ্যাম বাধে। আর এখন, কেমন যেনো কল্পবিজ্ঞাণের গল্পের মতো ১০০০ বছর পরের কোন শহরের রাস্তা মনে হচ্ছে।
অনুপের চারপাশে বড় বড় বহুতল অভিজাত সব দালান। অনুপের ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি।
ঢাকা শহরে প্রথম পা দেবার দিনটির কথা মনে পড়ে অনুপের। কী বিস্ময়, কী আনন্দ, কী উত্তেজনা ভর করে ছিলো সেদিন অনুপকে। বাসটা যখন আমিনবাজার পার করে ব্রিজে উঠলে তখন অনুপের চোখের দিগন্তে ভেসে উঠলো নদীর তীর ঘেষে থাকা বিস্তির্ণ বিশাল ঢাকা শহর, ঠিক যেনো ভিউকার্ডের নিউইয়র্ক-শিকাগো।
টিভির পর্দায় দেখা ঢাকা শহরে প্রথম পদচিহ্ন আঁকলো অনুপ। এত প্রসস্থ রাস্তা দেখেও অবাক হলো অনুপ, তার মনে হচ্ছিলো যে এই রাস্তাগুলোর এক পাশ থেকে আরেক পাশে যেতে রিক্সা নেওয়া লাগবে মনে হয়। বড় বড় দালানগুলোর চাইতেও অনুপের কাছে বড় মনে হতে লাগলো বিশাল রঙ্গিন সব বিলবোর্ডগুলোকে। বিলবোর্ডের কথা মনে পড়তেই ধ্যান ভাঙ্গলো তার।
এই বিলবোর্ডগুলো অনেক জ্বালিয়েছে তাকে।
সুন্দরী সহপাঠী, কিম্বা বন্ধুদের আড্ডা বা নেশা ... কোন কিছুই ছাপ ফেলতে পারেনি অনুপের মনে। ছাপ ফেলেছিলো এই বিলবোর্ডগুলো। স্বপ্ন দেখিয়েছিলো অনুপকে। স্বপ্ন দেখেছিলো অনুপ।
অনুপের খেয়াল হলো সে আবারো দেরী করে ফেলছে।
যা করার তা তাড়াতাড়ি করতে হবে। ঐ নতুন সূর্য জ্বলে উঠবার আগেই বা অনুপদেরকে জ্বালাবার আগেই।
বিশাল বিলবোর্ডে "জ্ঞানার্জন" শব্দটি খুঁজে বের করলো সে। উঁচু করে ধরলো তার মেশিনগান। ঘার ঘুরিয়ে বাকি বিলবোর্ডগুলোও দেখলো সে।
শব্দগুলি পড়ে নিলো আরেকবার... "জ্ঞানার্জন", "সেবা", "টাকা", "স্বপ্ন পূরণ", "অধিকার", "জীবন", "শিক্ষা", "সুখ-শান্তি", "আইন", "চিকিতসা", "ফ্ল্যাট", "ভালোবাসা", "বিশ্বাস", "আস্থা", "সঞ্চয়", "নিরাপত্তা"। মোট ৮ টি বিলবোর্ড।
উফফফ... আবারো দেরী করে ফেলছে অনুপ। অবশ্য সব কিছু সময় মতো করেইবা কী লাভ হয়েছিলো অনুপদের, কী-ইবা পেয়েছিলো তারা। অনুপরা অনুপই রয়ে গেছে।
মায়ের মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। মা যেনো ডাকছে তাকে। বলছে "চলে আয় বাবা, তুই চলে আয়, আমার কিচ্ছু চাই না, তুই আমার বুকে আয় বাবা..."। হু...হু করে কেঁদে উঠলো অনুপ। ভোরের কাকের কা কা ডাকে জলে ভেঁজা ঝাপসা চোখ মেললো অনুপ।
কখন যেনো মেশিনগানটা কোলে নিয়ে বসে পড়েছিলো সে।
সামনের বিলবোর্ডের দিকে তাকালো অনুপ। ক্রমেই তার চোখ দুটি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা ছড়িয়ে লাল হয়ে উঠলো, চোখের জল যেনো বাষ্পীভূত হয়ে গেলো। গর্জে উঠলো মেশিনগান। ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে থাকলো বিলবোর্ডগুলি।
বিকট ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী চিতকার করে অনুপ মেশিনগান ঘুরিয়ে যেতে থাকলো এক বিলবোর্ড থেকে আরেকটাতে। এই প্রতিটি বুলেটে অনুপ এক একজন অমানুষের নাম লিখেছিলো। কিন্তু অনুপ পারবে না এই বুলেট গুলো ঐ অমানুষগুলোর বুকে গেঁথে দিতে, কিন্তু এই বিলবোর্ডগুলোকে আজ সে হত্যা করবেই।
এটাই অনুপের শেষ স্বপ্ন ছিলো। আর অনুপের এই ছোট্ট জীবনের এই শেষ স্বপ্নটি ভেঙ্গে যায় নাই।
আর কোন স্বপ্ন তার ভাঙ্গবে না কোনদিনও। কারণ অনেকক্ষণ ধাক্কাধাক্কী আর মুখে জল ছিটানোর পর সহযাত্রীরা বুঝতে পারলো অনুপ আর নেই। ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে অনুপ।
______________
ব্যাক লিংক :: ডোন্ট ক্লিক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।