আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাপগল্প: লাল স্রোত

প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)
১. ধড়পড় করে উঠে বসে ইমরান। পাশ থেকে সাজিয়া ও। ইমরানের সারা কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম অথচ ছাদের তলায় বনবন ঘুরছে ফ্যান টা। মুখে হাত চাপা দিয়ে কাঁপছে। সাজিয়ার উৎকন্ঠা বাড়ে।

কি হয়েছে তোমার? রক্ত!অনেক রক্ত,সাজিয়া..!!রক্তের স্রোত!! ইমরান ফিসফিস করে। ভয় পেয়ে যায় সাজিয়া। গত কয়েকরাত ধরেই হঠাৎ কাঁপতে কাঁপতে জেগে যায় ইমরান। জানতে চাইলে শুধু বলে রক্ত! কিন্তু কিসের রক্ত?কার রক্ত? ইমরান চেয়ে থাকে। কিন্তু কিছুই দেখে না কিংবা দেখলেও কি দেখছে বুঝতে পারে না অনেকক্ষণ! সাজিয়া আলতো করে চেপে ধরে হাত দুটো।

এখনো মৃদু মৃদু কাঁপছে। কালই ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার,সাজিয়া ভাবে। হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে পানি ঢেলে গ্লাস বাড়িয়ে ধরে। ইমরান ঢকঢক গিলতে গিয়ে অনেকখানি গড়িয়ে দেয় ঠোঁটের কোণে। সাজিয়া আঙুলের ডগায় পানির দাগ মুছে বুকের উপর টেনে আনে ইমরানের মুখ।

দুঃস্বপ্নের ঘোর থেকে বের করে আনতে হবে। সাজিয়ার জানা আছে,তার কোমল বুকে নাক ডুবালেই মাতাল হয়ে যায় ইমরান। কিন্তু এখন সে নাক ঘষে না। মাতাল ও হয় না। সাজিয়া কে ক্রমশঃ উদ্বিগ্ন করে কাঠ হয়ে পড়ে থাকে।

২. সকালে নাস্তার টেবিলে সাজিয়ার ডাক্তার চেম্বারে যাওয়ার কথায় কিছু বলে না ইমরান। চুপচাপ চা টুকু শেষ করে বেরিয়ে যায় অফিসের দিকে। রিকশায় বসে বসে ঘামতে থাকে অনেকক্ষণ। সাপের মত এঁকেবেঁকে দীর্ঘ সারি তে স্থির হয়ে আছে তিন আর চার চাকা রা। দুপাশে ঝকমকে দালানে মানুষের ভীড়।

দালানের ঘাড় আর রাস্তার মাঝে মাঝে বিলবোর্ডের মুখোশ। হঠাৎ রিকশাঅলার পিঠে চোখে পড়তেই কেঁপে উঠে ইমরান। ময়লা শার্টের পেছন টা পুরোপুরি রক্তে মাখা। মনে হচ্ছে কেউ যেন ছুরি গেঁথে দিয়েছে পিঠ টায়। ইমরানের গলা ছিরে অদ্ভুত একটা শব্দ খসলে রিকশাঅলা বিরক্ত মুখে তাকায়।

ইমরান আবার কেঁপে উঠে। নাক চোখ দিয়ে গলগল রক্ত পড়ছে । ছিটকে পড়ছে দু'পাশে স্থির গাড়িগুলোর গায়ে। ছড়িয়ে যাচ্ছে সবক'টা তিন আর চার চাকায়!ধীরে ধীরে রক্তে ডুবে যাচ্ছে সব। হাস্যরতা মেয়েটার গলা ছিরে রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিলবোর্ড! ইমরান চিৎকার করে উঠে।

কিন্তু গলায় শব্দ হয় না। রিকশাঅলার ঝাকুনি তে অনেকক্ষণ পর চোখ খোলে সে। না। রিকশাঅলার পিঠ ঘামে ভেজা। ফুটপাথে মানুষের মিছিল আর মেয়েটা হাসছে সাদা বিলবোর্ডে।

কোথাও এক ফোঁটা রক্ত নেই!!! ৩. রাত সাড়ে তিন টা। ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ মেলে বসে আছে ইমরান। পাশে গভীর ঘুমে সাজিয়া। অনেকক্ষণ ইমরানের সাথে জেগে ঘুমিয়ে গেছে নিজের অজান্তেই। ইমরান সাজিয়ার মুখের উপর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

ওদের বিয়ে হয়েছে মাত্র দেড় মাস। রাত বাড়ার সাথে সাথে দু'জনেই কামার্ত হয়ে উঠে। মেতে উঠে পারস্পরিক। অথচ এই এক হপ্তা সাজিয়া বঞ্চিত হচ্ছে। নিজেকে অপরাধী মনে হয় ইমরানের।

আজো সাজিয়া অনেকভাবে কাছে টানতে চেয়েছে। নিজেকে মেলে ধরেছে ইমরানের চোখের ভেতর। কিন্তু ইমরান সাড়া দেয় নি। কিংবা দিতে পারে নি। ক্লান্ত চোখ ঘুমে জড়িয়ে যায়।

সাজিয়ার পাশে কাত হয়ে পড়ে সে। মাঝঘুমে আবার রক্ত। আবার চিৎকার। ইমরান আর বোধহয় ঘুমাতে পারবে না! ৪. ইমরান অফিসে যায় না। ঝিম মেরে পড়ে থাকে বিছানায়।

সকাল থেকে দুই বার বিছানা ছেয়ে গেছে রক্তে। সাজিয়ার গলা ছিরে গলগল করে পুরো মেঝে ভেসে গেছে একবার। চায়ের কাপে এক কাপ রক্ত পান করে ঝিম মেরে থাকে। সাজিয়া কে সব কিছু বলা দরকার। না।

বলে কি হবে?সাজিয়া তো কিছু জানে না। এই ভালো। জানলে সাজিয়ার জীবন ও বিষাক্ত হয়ে যাবে। ইমরানের চোখের কোণে এক ফোঁটা জল গড়ায়। সে মোছে না ভয়ে।

হয়তো দেখা যাবে হাতে রক্ত লেপ্টে আছে! ৫. খাটের বিপরীত দেয়ালে লালপর্দায় দৃশ্য গুলো ঘুরে যায় কিংবা হয়তো অসীম দূরত্ব হতে তার রেটিনায় জমে লাল বিম্ব। তিসা। ভার্সিটি তে একসাথেই পড়েছে। সজীব ভালোবাসতো। ও ইমরানের কলেজ হতে বন্ধু।

তিসা সাড়া দেয় নি। ব্যবসায়ী বাবার কাছে যা চেয়ে তা পেয়ে অভ্যস্থ মেনে নিতে পারে না। ক্ষেপে উঠে সে। কঠিন পরিকল্পনা সাজায়। খুলে বলে ইমরানের কানে।

ইমরান রাজি হয় না। একসময় প্রতিরোধের বাঁধ ভেঙে যায় সজীবের চাপে। সাথে যে যৌবনের আগ্রহ ও ছিলো না,তা নয়! সেদিন বিকেলবেলা ইমরান ডেকে আনে তিসা কে। নির্ধারিত স্থানে আসামাত্রই সজীবের হ্যাচকা টানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সজীবের ক্যাডিলাকে। কালো ধানব তিসার আর্তচিৎকার উপেক্ষা করে হাজির হয় সজীবদের নির্মিতব্য বাড়ির নিচে।

ঘন্টাখানেক পড়ে বাড়ির চারতলায় ইটের স্তূপের ফাঁকে তিসার নগ্ন গোঙানি দেখে পুলকিত হয় সজীব আর ইমরান। হঠাৎ জোরে হেসে উঠে ইমরান। পরমূহুর্তে সাপের মত হিসহিস করে। শালি! প্যান্টের পকেট থেকে বের করে ক্ষুর। ইমরান চিৎকার করে ঝাপটে ধরে সজীব কে।

এক ঝটকায় ছিটকে পাশের বালির স্তূপে। আতংকিত চোখে ইমরান দেখে,ক্ষুরের এক পোঁচেই তিসার গলা দু'ভাগ হয়ে গেছে। তীব্র গোঙানির সাথে ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে আসছে রক্ত! ইমরান আর সহ্য করতে পারে না। দৌড়ে নেমে আসে নিচে। সজীবের বাবার টাকার জোরে আইনের কাছ থেকে বেঁচে গেলে ও নিজের কাছে ধরা পড়ে গেছে ইমরান আজ।

৬. সেই রাতে ও অনেক্ষণ জেগে থেকে ঘুমিয়ে পড়ে সাজিয়ার পাশে। মাঝরাতে তিসা হাসে। মিষ্টি হাসি। ইমরান অবাক হয়ে দেখে তিসার সুন্দর দাঁত। তিসা হাত বাড়িয়ে ডাকে।

বাতাসে তার চুল দোলে। হঠাৎ কেঁপে উঠে তিসা। হাসি মরে গিয়ে মুখ বিকৃত হতে শুরু করে। দুধরঙ মুখ ধীরে ধীরে নীল হতে গাঢ় নীল হয়। মুখের কষা আর নাকের ফুটো বেয়ে রক্ত গড়ায়।

তিসা যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলে ইমরান দেখে,প্রত্যেক টা দাঁতের গোড়া থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে। হঠাৎ ফেটে যায় গলা। তিসার পুরো দেহের চামড়া ফেটে তীব্র বেগে রক্ত বের হতে থাকে। ইমরান চিৎকার করে। কিন্তু কোন শব্দ হয় না।

তিসা কে আর দেখা যায় না। ওখানে রক্তের তীব্র ঘূর্নি!স্রোতের মত তীব্র বেগে এগিয়ে আসছে। ইমরান কে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ইমরানের চিৎকারে ধড়মড় উঠে বসে সাজিয়া। দেখে,ইমরান থরথর কাঁপছে।

হাত ধরতেই এক ঝটকায় ছিটকে পড়ে সাজিয়া। আতংকিত চোখে দেখে,ইমরান একটানে খুলে ফেলেছে আলমিরার নিচের ড্রয়ার। ভয়ে কেঁপে উঠে সাজিয়া। জানে,ওখানে আছে ইমরানের লাইসেন্স করা পিস্তল! পরদিন সকালে ইমরান সাজিয়ার ফ্ল্যাট থেকে একটি গুলিবিদ্ধ লাশ নিয়ে ছুটে যায় পুলিশের গাড়ি আর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।