প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)
অতল দৃশ্যে নির্বাসন ....(সকাল পর্ব)
Memories consume /Like opening the wound /I’m picking me apart again /You all assume ...................
মুঠোফোনে লিংকিন'পার্ক। রুপা। রুপার এটা বাতিকের মত হয়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসবে। এক হাতে নাস্তা করবে আর অন্য হাতে আমার সাথে কথা বলবে।
নাস্তা করতে করতে কথা বলার কারণ টা জিজ্ঞে করেছিলাম। ফাজিল টার জবাব,তুই এমন কেউ না যে তোকে আলাদা সময় নিয়ে ফোন করতে হবে। তোর কি ধারণা,তুই মহামান্য রাষ্ট্রপতি?তোর সাথে কথা বলার জন্য তিন দিন ধরে প্রিপারেশান নিতে হবে!!হি হি হি।
রিসিভ করতে আহ্লাদী গলায় বললো,কি করো জান?ঘুম থেকে উঠেছো?আজ তো ক্লাস নেই। চল না আজ দু'জন কাপ্তাই লেক থেকে ডুব মেরে আসি।
আমি কিছু বললাম না। পুরোটাই তার ফাজলামি। ফাজলামির কোন উত্তর হয় না।
সে আবার হি হি করে উঠে। কিরে,কথা বলছিস না কেন?টাসকি খেয়েছিস নাকি?তোর কি ধারণা,রুপা তোর প্রেমে হাবুডুবু?শোন,তুই হলি পিউর বেকুব।
রুপা কোন বেকুবের প্রেমে পড়বে না। হি হি হি।
আমি অদ্ভুত ভাবে খেয়াল করলাম,আমার ক্ষুধা লেগে গেছে। এই মেয়েটার হাসি শুনলেই আমার কেন জানি ক্ষুধা লেগে যায়।
আমি মোটামুটি কঠিন গলায় বললাম,রুপা।
তোরে না বলছি,আমার সাথে হি হি করবি না?
সে আবারো হি হি করে। ওহ স্যরি স্যরি। তোর কি ক্ষুধা লেগে গেছে?ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি ক্যান্টিনে আয়। তোকে আজ খাওয়াবো।
কুইক!!
হাত মুখ ধুয়ে আমি ক্যান্টিনে চলে এলাম। রুপা এখনো আসে নি। রুপার সাথে মাসখানেক পরে দেখা হচ্ছে। আমি ক্লাস করছি না। পালিয়ে পালিয়ে হাওয়া খাচ্ছি।
ওয়ার সিমেট্রি তে সারাদিন বসে থাকছি। খুলশী রোড ধরে হাঁটছি। রাত এগারোটার ট্রেনে চড়ে ভোরবেলার কমলাপুর দেখছি। বসুমতির রোদ গায়ে মাখছি। বিকেলবেলা একা একা অ্যাপোলো হসপিটালের পাশে মোহাম্মদিয়া হোটেলে কাবাব-রুটি খাচ্ছি।
যা খুশি তাই করছি।
যা খুশি তাই করার ইচ্ছে টা অনেক দিন আগ থেকে। এতদিন সুযোগ ছিলো না। এখন মনে হয় সুযোগ এসেছে।
রুপা ক্যান্টিনে ঢুকেই চমকে উঠলো।
চমকে উঠার কারণ আছে। পুরুষদের মোট চারস্থানের পশম কর্তন করতে হয়। সেই কর্তন কার্যক্রম আমি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছি। রুপা শুধু দু'স্থানের পশম দেখছে। বাকি দু'স্থান দেখানো যাবে না।
আমরা ভদ্রসমাজে বাস করি।
রুপা চমক গলাতেই বললো,ওমা!তোর এ অবস্থা কেন?তুই তো পাগলা বাবার মত হয়ে গেছিস!!দাঁড়ি চুলে কি বিশ্রী অবস্থা!!গা ঘিনঘিন করছে!!
নাস্তা করেই সোজা নাপিত মামার সেলুনে যাবি। এক ঘন্টার মধ্যে আমি তোকে ক্লীন দেখতে চাই। ক্লিয়ার?
রুপা হড়বড় করে কথা বলছে। মেয়েটার এ এক সমস্যা।
মনে হয়,কেউ মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছে। কথা বলা বন্ধ করলেই ঠাস!!!
আমি কিছু বলছি না। একমনে জিলাপি খাচ্ছি। সকালের নাস্তা হিসেবে জিলাপি অসহ্য!আমি ইদানিং অসহ্য জিনিস গুলো করছি। আমাদের রাসূলে করীম মিষ্টি পছন্দ করতেন।
মিষ্টি পছন্দ করার মত জিনিস না। রাসূল কেন পছন্দ করতেন বুঝতে পারছি না।
জিলাপিবিষয়ক ভাবনা থেমে গেলো রুপার ঝাড়ি খেয়ে। কথা বলছিস না কেন?
আমি মুখে জিলাপি নিয়ে বললাম,কি বলবো?খাচ্ছি দেখছিস না!!আমাদের রাসূল বলেছেন,খাওয়ার সময় কথা.........
আমি থেমে গেলাম দু'টো কারণে। এক,রুপা চোখ গোল করে তাকিয়ে আছে।
এমনিতে ওর চোখগুলো সুন্দর। টানা টানা। কিন্তু গোল করলে ওকে পেত্নির মত দেখায়। দুই,ও মুসলিম না। রাসূলে করীমের কথার গুরুত্ব ওর বোঝার কথা না।
রুপার চোখ লম্বা হলো। পেত্নী থেকে মানবী। এই রুপান্তর টা যতবারই হয়েছে,আমার বলতে ইচ্ছে করেছে,রুপা,আই লাভ ইউ।
কিন্তু বলিনি। কোনদিন আর বলতে পারব বলে মনে হয় না।
এটা একটা ফালতু কথা। শুধু ফালতু না,চরম ফালতু।
মানবী রুপা কোমল গলায় বললো,তোর হয়েছে টা কি বলতো?কয়দিন পর পরীক্ষা। আগের দু'টা ব্যাকলগ। এবার তো মনে হয় পুরো সেমিষ্টার ড্রপ দিবি!!
আমি আরেকটা জিলাপি তে কামড় দিলাম।
কথা বলছিস না কেন?কেন এরকম করছিস?কোন লাভ আছে এতে?যার জন্য করছিস,সেকি তোর খবর রেখেছে?রাখেনি। তোকে আর প্রয়োজন নেই। ভালোবাসার চেয়ে অর্থ বড়। সে সেটা বুঝতে পেরেছে।
তুই কেন বোকার মত নিজেকে শেষ করছিস?কাল থেকে ক্লাস কর।
পরীক্ষা দে। পাগলামি অনেক হয়েছে। আর না।
ওকে থামানো দরকার। ঠিক আছে,ক্লাস করবো,পরীক্ষা ও দেব।
খুশী?
ওর হতাশ গলা। আগে পরীক্ষা দে। তারপর খুশী-অখুশী। তোকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।
আমি হাসলাম।
আমি আমাকেই বিশ্বাস করি না। ও করবে কী?
সিগারেট ধরালাম। মুখ গোল করে রিং ছাড়লাম।
রুপা তাকিয়ে আছে। তবে আমার দিকে না রিঙের দিকে বোঝা যাচ্ছে না।
আমাদের মাঝে ধোঁয়ার দেয়াল। সবার মাঝে এরকম একটা একটা দেয়াল থাকে। আমরা ভাবি,সে দেয়াল ফুঁড়ে ফেলেছি। ওপাশের মানুষটাকে চিনে ফেলেছি। আসলে ভুল।
ধোঁয়ার দেয়াল ভেঙে রুপার হাত সিগারেট টেনে ফেলে দিলো। আর টানতে হবে না। উঠ। চল।
টেনে নিয়ে গেলো সেলুনে।
আমার মাথা ও মুখের পশম কর্তন হবে। বাকি দু'স্থানের পশম ও কেট্বে নেবো কিনা বুঝতে পারছি না। মনে হয় ঠিক হবেনা।
কর্তন শেষে আমরা হাঁটা ধরলাম। রুপা কথা বলতে বলতে আমার হাত ধরেছে।
আমি কথা শুনতে শুনতে ওর হাত ধরে রেখেছি। রুপার হাত অনেক নরম। তুলো তুলো ভাব আছে। আমার অস্বস্তি হচ্ছে। এত নরম হাত ধরতে আমি অভ্যস্থ নই।
গত কয়েক বছর ধরে যে হাত ধরে হেঁটেছি,তা এত নরম নয়।
আমি আড়চোখে রুপার দিকে তাকালাম। সে খুব হাসছে। বাতাসে রুপার চুল উড়ছে। রুপার চুল গুলো সুন্দর।
তবে অতটা নরম না। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম,আমার খুব ভালো লাগছে। রুপাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
আবার প্রচন্ড রাগও হচ্ছে। থাপড় দিয়ে ওর দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।
কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
মানুষের রাগ আর আনন্দ কি এক সাথে হতে পারে?এটা বুঝতে পারছি না।
আমি বিশাল ভুল করেছি। কেন,কিভাবে জাতী্য় চিন্তা আমার জন্য নিষিদ্ধ। ডাক্তার স্পষ্ট করে বলছে,দুয়ে দুয়ে চার হয়,এটা তুমি চিন্তা করতে পারো।
সমস্যা নেই। কিন্তু দুই দু'গুনে কত হয়,এটা চিন্তা করবে না।
আমি রাগ আর আনন্দ কি একসাথে হতে পারে জাতীয় জটিল চিন্তা করছি। আমার মাথাব্যথা করছে। একজনের কথা মনে পড়ছে।
তার বুকের কথা মনে পড়ছে। যেখানে নাক ডুবিয়ে আমি অনেকগুলো রাত ঘুমিয়েছি। অদ্ভুত হলো,আমি তার গন্ধ পাচ্ছি। সে কি আশপাশে আছে?সে আশপাশে কিভাবে আসবে?
আমি তার গন্ধ পেতে চাচ্ছি না। রুপার হাত ধরতে চাচ্ছি।
রুপা দুরে সরে যাচ্ছে। নাগাল পাচ্ছি না।
হঠাৎ সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। আমার আর কিছু মনে নেই।
[বিকেল পর্বে সমাপ্য]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।