তুমি মহাসৃষ্টির সহোদর, সহোদরা জলন্ত অগ্নির,অগ্নি চেতনায় শান্ দাও । বানিয়েছি ডুগডুগি বাজাও বাজাও।
হে বিষন্ন বিখচিত জীবন,সমস্তটাই মুছে দেবার বা যাবার মত নয়-আকাশ বা উদ্যান।
বাগান এখনো বার মাসই ফুল ফুটাতে উদগ্রীব,আর আকাশটাও ঝুঁকে দেখছে মুখ এখনো।
চাই শ্রম,চাই পাখি,চাই রৌদ্র,চাই বীজ-এই সব চাওয়ারও কোনো বিরতি বা বিরাম নেই।
বিষয়ের শেকড়ে কুড়োল চালিয়ে উৎসন্ন উৎখাত করতে যে সকল দিন মান থাকে ওঁৎ পেতে,
তাদের বিরুদ্ধে আমি তো এখনো দাড়িঁয়েই আছি আয়নায়,দেখে নিও প্রতিবিম্বে তুমি নিজেকে।
কিন্তু ওই প্রতিবিম্বে আরো যে কেবলি ছবি পড়ছে-অসুস্থতার ও অন্ধকারের,আর হয়ে যাচ্ছে হিসেবের গোলমাল,যোগের সঙ্গে বিয়োগের,ভাগের সঙ্গে গুণের,সরল রেখার সঙ্গে বক্রতার
তার উপর দিয়ে অনবরত কালো কালো পাখির ঝাঁক,তাদেরও আমি নামতে দেখেছি বিক্রমে।
নখরে তারা চিরে ফেলছে নক্ষত্রের বীজ আর ওংকারটিকেও তারা ভাসিয়ে দিয়ে চলেছে কা-কা রবে।
এ সবই যে আমার গ্রন্থনার বিরুদ্ধে,তোমার মুখশ্রীর উপর বলাৎকারের লক্ষে সেটা বলাই বাহুল্য।
আমি তো সন্তুষ্ট থাকতে পারি নি আমার আমার বসন আর ব্যসন নিয়ে,সে কথাও অবিদিত নয় কিছু।
কেন যে আমি বমনমুখী রুগীর মতো বারবার উগরে ফেলতে চেয়েছি এই সব,আর
সবুজ ঘাসের শিস দাঁতে কেটেছি নিরাময় পেতে,অক্ষরের ভেতরে উদ্যান ও আকাশ পেতে,
তার সংবাদ তুমি রেখেছ কি রাখ নি,সন্ধান করো তোমার হীরকদ্যুতি জলধারার ভেতরে।
সেই জল যেদিন আমি তৃষ্ণায় প্রথম চেয়েছি,আর তুমি যে চিৎকার করে উঠেছিলে তফাৎ !
এখন সেই জলধারা ভিজিয়ে চলেছে পৃথিবীর যাবৎ কৃষ্ণ ঠোঁট সকল,সেটাওতো আমি দেখেছি !
সেই প্রথম দিনেই তুমি তোমার অগ্রাধিকারটি প্রদর্শন করেছিলে ওভাবেই। আর আমি!-আমি!-
প্রান্তেরও ওপারে এক আশাহীন পান্তরে দাড়িঁয়ে বয়ন করতে শুরু করেছিলাম বস্ত্র আর নকশাগুলো
খচিত রচিত হতে থাকল বিপুল এক ক্রোধের চুমকি ও ভালবাসার কার্পাসজনিত সুতোয়।
আমি তা দিয়ে পতাকাও একটি বানিয়েছিলাম,হে বিষন্ন বিখচিত জীবন,তোমার রাষ্টের।
দ্যাখো আমি তোমার ছায়াটিকে সঙ্গে নিয়েই একাকীজনের মিছিলে আজো চলেছি পতাকাবাহী।
আমার মানচিত্রের ভিতরে বিরাগ বা বিচ্ছেদের খাদ কিংবা শংকার কোনো পাহাড় আকাঁ নেই।
ভেতরের তুমুল চিৎকারগুলোকে আমি অবিরাম বিমুক্ত করে চলেছিআমার বাকযন্ত্র কি বাক্য থেকেই-
আর প্রতিদিনের জিহবায় আমি তাদের উচ্চারনযোগ্য করে চলেছি এই বোবা মানুষের গ্রামসকলে।
সমস্তটাই মুছে দেবার বা মুছে দেবার মত নয়! অমোচ্য কালি দেবগসের কলম আমার প্রার্থনায়।
আমি কুসুম সংগ্রহ করে চলেছি এখনো,আর এখনো আমি মাল্যের প্রতিভা নিয়ে সুঁচসুতো হাতে।
প্রান্তর উজার উৎসন্ন হলেও এরই শেষপ্রান্তে কিন্তু পড়ে আছে তুমারই দীর্ঘটানের ছায়াটি।
হে বিষন্ন বিখচিত জীবন,হে জীবনবেদের দেবীকাঠামো,তুমি স্থাপিত হও সমুখে-এসো এবং
আমার হাতেই গ্রহন কর মৃত্তিকা,নাও তুমি চোখ ফুটাবার তিসিতেল,উন্মোচিত হও দেবী।
আমি তুমারই আরাধনায় একটি জীবন-আর এ জীবনে তুমি বিনা কেইবা আছে আর আরাধ্য।
(সৈয়দ শামসুল হকের লেখা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।