আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশিদের দ্বারে জামায়াত

তর্ক করে কি লাভ হবে আপসেতে যুক্তি চলে

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে উদ্বিগ্ন জামায়াতে ইসলামী বিদেশিদের দ্বারস্থ হচ্ছে। জাতিসংঘকে এই বিচার-প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে সম্পৃক্ত করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করছেন জামায়াতের নেতারা। পাশাপাশি তাঁরা আইনি মোকাবিলার জন্য একটি আইনজীবী প্যানেলও গঠন করেছেন। জামায়াতের সূত্র জানায়, দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান বাংলাদেশে জাতিসংঘের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে জামায়াতের নেতারা জানতে চেয়েছেন, জাতিসংঘ এই বিচার-প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারে কি না।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের মানবাধিকার-বিষয়ক কমিটির কাছেও গেছে জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল। জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক আছে। মধ্য ও নিচের সারির নেতারা শীর্ষ নেতাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা বারবার জানতে চাইছেন, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। ফলে দল নিয়েও জামায়াতের নেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন।

দলের নেতাদের রক্ষায় আইনগত প্রস্তুতিও নিচ্ছে জামায়াত। জামায়াতের আইনজীবী নেতা ও ডানপন্থী আইনজীবীদের সমন্বয়ে এই প্যানেল প্রাথমিক কাজও শুরু করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের কয়েকজন নেতা। জামায়াতের নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকেই আছেন, আমাদের নিয়ে চিন্তা করেন। তাঁরা ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, গ্রেপ্তার হয়েছি কি না। ’ তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সরাসরি এবং তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে।

রেনাটার সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে—জানতে চাইলে কামারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা নিজেরা কিছু বলিনি। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, জাতিসংঘের সহযোগিতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। আমরা বিষয়টি জানতে চেয়েছি। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের এ বিষয়ে করার কিছুই নেই। তবে যেসব জায়গায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, সেখানে কিছু কারিগরি ও তথ্য দিয়ে সাহায্য করার নজির আছে।

’ হাউস অব কমন্সে জামায়াতের প্রতিনিধিদল: যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত জামায়াতের নেতা-কর্মীরা যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সেও গিয়েছিলেন। সেখানে জামায়াতের নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাজা দিতে চায়। তাঁদের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে জামায়াতের নেতারা ন্যায়বিচার পাবেন না। কামারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ অভিযোগ পাওয়ার পর হাউস অব কমন্সের হিউম্যান রাইটস (মানবাধিকার) কমিটি ২০০১ সালে ভিয়েনায় প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখানকার যুদ্ধাপরাধ-বিষয়ক কমিটির ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন চলতি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করতে সরকারকে একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে।

ওই প্রতিনিধিদলে কারা ছিলেন—জানতে চাইলে কামারুজ্জামান বলেন, এখান (বাংলাদেশ) থেকে কেউ যাননি। ওখানে (যুক্তরাজ্যে) বাংলাদেশি যাঁরা আছেন, তাঁরা গেছেন। পাকিস্তানের দিকেও তাকিয়ে জামায়াত: জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা পাকিস্তানের সাহায্যের দিকেও তাকিয়ে আছেন। তাঁরা মনে করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচার না করে সহযোগী হিসেবে এ দেশের কারও বিচার করা হলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ওই নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই আসবে।

এ বিষয়টি পাকিস্তান নিশ্চয়ই চাইবে না। আর পাকিস্তান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই বিচারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। জামায়াতের এই নেতার আশাবাদ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক আছে। আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে পাকিস্তানকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়াবে।

এই মতের বিষয়ে কামারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানকে সমর্থন করার কারণে যদি জামায়াতের নেতাদের বিচার করতে হয়, তাহলে তো অনেকের বিচার করতে হবে। ’ জামায়াতের নেতারা তখন শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী প্রভৃতি গঠনে জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন—এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কামারুজ্জামান বলেন, এগুলো তো লুকানোর বিষয় নয়। এসব ক্ষেত্রে সহযোগী ছিল, তবে এ জন্য জামায়াতের বিচার করলে অনেকেরই বিচার করতে হবে। চীনপন্থী বামরাও তো পাকিস্তানের পক্ষে ছিল।

কামারুজ্জামান জানান, জামায়াতের আইনজীবী নেতাদের সমন্বয়েই এই প্যানেল হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি তো আইনগত। এ বিষয়ে আন্দোলন করে তো লাভ নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.