আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশিদের অনীহা

সরকার ও নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারিতে নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এগিয়ে চললেও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিদেশি সংস্থাগুলো। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে অনীহাও কাজ করছে তাদের মধ্যে। কারণ সবার অংশগ্রহণ ছাড়া অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগের একক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থাকার উদাহরণও রয়েছে তাদের সামনে। সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করা তিন সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) ঢাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা যায়।

অপরদিকে, জাতিসংঘও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে কারিগরি প্রস্তুতি সত্ত্বেও সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া আগ্রহী নয়।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যবেক্ষক পাঠাতে অনুরোধ করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাসচিবকে বলেছি, যত বেশি ইচ্ছা পর্যবেক্ষক পাঠান দেখুন কতটা সুষ্ঠু হয়েছে নির্বাচন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকার জাতিসংঘ দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, মহাসচিব বান কি-মুন যেহেতু ইতোমধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে ভিন্নমত নিয়ে নিজের উদ্বেগ জানিয়ে দুই দলের সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। সেহেতু এখানকার নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সমঝোতার আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে না জাতিসংঘ।

এটাকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা জানান, তবে সমঝোতা হলে নির্বাচনে সব ধরনের সহায়তার জন্য জাতিসংঘের কারিগরি প্রস্তুতি আছে। জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ১৫০ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল ইইউ। এরপর ৮১ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপর সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) স্বল্প মেয়াদে ৬০ জন ও দীর্ঘ মেয়াদে ২০ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করেছিল। ইইউ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা সফর করেছেন একটি প্রতিনিধি দল।

পাঁচ সদস্যের এই প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করে নির্বাচন কমিশন, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, কূটনীতিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে। তাদের প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছে পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত। তারা প্রতিবেদন দেবেন ব্রাসেলসে ইইউ সদরদফতরে। ঢাকার দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখা ইইউ এখনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইইউ সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে।

তবে ২০০৬ সালে এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) সূত্র জানায়, প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতির ওপর একটি সমীক্ষা করবে এনডিআই। ২০০৬ সালে ভোটার তালিকায় এক কোটিরও বেশি ভুয়া ভোটার এমনি একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল। এ ছাড়া ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) বাইরে থাকা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় এনজিওদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। তবে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনডিআই পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করবে না।

ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) সূত্র জানায়, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আইআরআই ঢাকা কার্যালয় পুনর্বিন্যাস করে এ জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ নিষ্পন্ন না হলে বা সব বড় রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ না নিলে পর্যবেক্ষণে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

২০০৬ সালেও বিরত ছিল সংস্থাগুলো : ২০০৬ সালে বিএনপি জোট সরকারের অধীনের নির্বাচন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

তখন পর্যবেক্ষণ করেনি ইইউ, কমনওয়েলথ, এনডিআই, আইআরআই ও ইডবি্লউজি। বিরত থাকার কারণ হিসেবে ইইউ বলেছিল, জনগণের অধিকার ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইইউসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা সফল হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে এবং সব কটি প্রধান রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইওএমের (নির্বাচন পর্যবেক্ষণ) কার্যক্রম আশানুরূপ ফল বয়ে আনবে না। এ কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ইওএমের কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.