হ্যা, নারীর মস্তিষ্ক পুরুষের মস্তিষ্ক থেকে ভিন্ন। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কল্যাণে নারী-পুরুষ মস্তিষ্কের ভিন্নতা বা পার্থক্য সম্বন্ধে বিচিত্র সব তথ্য বের হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কে গঠনগত দিক দিয়ে সামান্য কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। বাহ্যিকভাবে এই পার্থক্য যতই নগণ্য হোক না কেন, এই সামান্য পার্থক্যই নারী-পুরুষের আচার-আচরণ এবং মানসিক গড়নে ব্যাপক পার্থক্যগত ছাপ ফেলে। নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে আয়তনের ক্ষেত্রে।
দেখা গিয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষের মস্তিষ্কের আয়তন একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর মস্তিষ্কের আয়তনের তুলনায় গড়ে দশ শতাংশ বড় এবং পুরুষ মস্তিষ্কে কোষ সংখ্যাও নারী মস্তিষ্ক থেকে গড়ে চার শতাংশ বেশী। তবে এতে পুরুষদের বেশী খুশী হওয়ার কারণ নেই কেননা নারীদের মস্তিষ্কে পুরুষদের মস্তিষ্কের তুলনায় স্নায়ুকোষের সংখ্যা এবং আন্তঃকোষীয় সংযোগ বেশী থাকে।
আবার নারীদের মস্তিষ্কের ‘কর্পাস ক্যালোসাম’ পুরুষদের তুলনায় বড় হওয়ায় নারীরা পুরুষদের তুলনায় দ্রুত মস্তিষ্কের বাম এবং ডান হেমিস্ফিয়ারের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান করতে পারে। আর সম্ভবত এজন্যই পুরুষদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানের সময় “কাজের কথায়” আসার প্রবণতা বেশী থাকে। বিপরীতে, নারীদের এই ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় অনুভূতি প্রকাশে অনেক বেশী সৃজনশীল হতে দেখা যায়।
নারী ও পুরুষ মস্তিষ্কের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে মস্তিষ্কের ‘লিম্বিক সিস্টেমের’ আয়তনের পার্থক্য। নারী মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমের আয়তন এবং গভীরতা পুরুষ মস্তিষ্কের তুলনায় বেশী হয়ে থাকে। আর এই কারণে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশী আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে এবং যেকোন আবেগকে পুরুষদের তুলনায় অনেক গভীরভাবে প্রকাশ করে থাকে। তাছাড়াও এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দরুন নারীদের পুরুষদের তুলনায় সম্পর্ক গড়ে তুলতে বেশী তৎপর দেখা যায়। আর এই কারণেই বেশী আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বিষন্নতায় বেশী ভুগে থাকে।
আর এজন্যই নারীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা প্রচেষ্টার প্রবণতা পুরুষদের চেয়ে তিনগুণ বেশী দেখা যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, পুরুষরা এক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে তিনগুণ বেশী সফল হয়। সম্ভবত এই কারণেই, পুরুষরা নারীদের তুলনায় আত্মহত্যার জন্য অপেক্ষাকৃত বেশী নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে। নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কের ভিন্নতা তাদের ‘অসমতা’র পরিচায়ক নয়, বরং এই ভিন্নতা মানুষের সামাজিক জীবন-যাপনের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজন পূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও, নব আবিষ্কৃত এই তথ্যসমূহ নারী-পুরুষভেদে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার পার্থক্য নিরুপনে আরো বেশী সাহায্য করবে বলে গবেষকরা ধারণা করছেন।
তবে এর চেয়েও বড় ব্যাপার হল, এ তথ্যগুলো পুরুষ এবং নারীর পরষ্পরকে আরো ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
ন্যাশনাল নিউজ ডেস্ক,০৯ মার্চ ২০১০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।