When a man has put a limit what he will do, he puts a limit in what he can do
আজ ক্যালকুলাস ক্লাসটি একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল, মনে হচ্ছিল কেউ একজন অনুপস্থিত….. কিন্তু বুঝতে পারছিলামনা কে সে??? আগামী ২৫ তারিখ সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম শুরু, ক্যালকুলাস পরীক্ষা ১ এপ্রিল, আজ ছিল ক্যালকুলাসের শেষ ক্লাস। স্যার ব্রিফিং দিলেন ফাইনাল এক্সাম এর প্রশ্নের ধরন কেমন হবে, মান-বণ্টন কেমন হবে…… খুবই চিন্তিত লাগছে পরীক্ষা নিয়ে। আবার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে আজ হঠাৎ ক্লাস এমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল কেন? সবাই তো উপস্থিত, কিন্তু বিশেষ কেউ নিশ্চয়ই আসেনি, নাহলে ক্লাস এমন ফাঁকা ফাঁকা কেন লাগবে…… অন্যদিন নাহয় ক্লাস ফাঁকি দিল, আজকের ক্লাসটা খুবই গুরুত্ব্বপূর্ণ ছিল, এই ক্লাস ফাঁকি দেয়ার তো কোন মানে হয়না!!! এসব ভাবতে ভাবতেই যখন ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে HS ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলাম, দেখা হল ফাহাদের সাথে। এবার মনে পড়ল কেন ক্লাসটা এমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল আমার কাছে…….???
আমি তখন E0 বিল্ডিং এর নিচতলায়, ক্যান্টিনে যাচ্ছি। ফাহাদকে দেখলাম E0 বিল্ডিং এর দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে……… খুব অবাক হলাম আমি :-S……. কি ব্যাপার?? আজ ও ক্লাসে আসলোনা কেন? ক্লাসে না এসে এখানে কি করছে ও? আকাশের দিকে তাকিয়েই বা কি ভাবছে ও? ওকে তো কখনো এমন গোমড়া মুখে দেখিনি!!! সবসময় হাসিখুশি থাকে…. দেখে আসেই কি হল ওর, পা বাড়ালাম সিঁড়ির দিকে…..
প্রথমে ফাহাদের পরিচয়টা দিয়ে নেই।
ফাহাদ আমার ফিলিস্তিনী বন্ধু। ওর বাড়ি ফিলিস্তিনের বহু পুরনো শহর “হেবরন”- এ। খুবই মেধাবী ছাত্র। অন্যান্য বন্ধুতের তুলনায় আমার ফাহাদকে একটু বেশি ভাল লাগে কারণ সে এখানকার অন্যান্য ফিলিস্তিনী শিক্ষার্থীদের মতো নয়। অন্যান্য ফিলিস্তিনী ছাত্র যেখানে আড্ডাবাজি এবং ঘুরোঘুরিতে ব্যস্ত, সেখানে সে তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
সদা হাস্যজ্জ্বল এবং বেশ পড়ুয়া একজন ছেলে। মিডটার্ম পরীক্ষায়ও তার মার্ক্স ঈর্ষণীয়। পড়ালেখায় ওর কাছ থেকে খুব সাহায্য পেয়েছি আমি।
দোতলায় উঠে দেখি, তখনো সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে….. দেখলাম চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝড়ছে ওর। সবসময় ওকে আমি হাসিমুখে দেখে এসেছি, আজ হঠাৎ কি হল ওর?? ফাহাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, আস্তে করে ডাক দিলাম, “ফাহাদ”…..
কিন্তু ওর কোন নড়াচড়া নেই, মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে।
দু’চোখ দিয়ে আরো দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল ফাহাদের চোখ থেকে। আমি এবার ওর হাতের উপর আমার হাত রাখলাম, আবারো ডাকলাম, “এই ফাহাদ, কি হয়েছে তোমার?” ও এবার চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকালো….. মুখে হাসি আনার বৃথা চেষ্টা করে বলল—
- কিছু হয়নি….
- উহু, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার কিছু হয়েছে! বল কি সমস্যা??
- আরে বললাম তো কিছু হয়নি!!
- উহু, কিছু না হলে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছ কেন? তোমাকে তো কোনদিন ক্লাস মিস দিতে দেখিনি, আজ ক্লাসে আসলেনা যে?? শরীর খারাপ নাকি?
- নাহ!!! আমার মন খারাপ আসলে…..
- তা তো বোঝাই যাচ্ছে রে ভাই, সে জন্যই তো জিজ্ঞেস করছি যে কি হয়েছে?? বলতো কি হয়েছে, আমার শুনতে ইচ্ছে করছে।
- অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে তারিক, অনেক কিছু…….
- কি? কি ঘটল হঠাৎ?? আমাকে কি বলা যায়না???
- তোমাকে বললে তুমি সহ্য করতে পারবেনা, এ অনেক কষ্ট…..
- কেন পারবোনা?? বলনা শুনি, হঠাৎ কি হয়েছে তোমার??? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
- পারবেনা তো!!
- পারব!
- আমরা ফিলিস্তিনীরা ছোটবেলা থেকেই এসব ঘটনা দেখে আসছি, তাই আমরা সহ্য করতে পারি হয়তো, তুমি পারবেনা। আর আজ যা হয়েছে তা আরো কষ্টের, আজ পর্যন্ত আমার জীবনের সবচাইতে কষ্টকর ঘটনা……
বুঝতে পারলাম যে নিশ্চয়ই বেশ বড় কিছু ঘটে গিয়েছে…. অনেকবার অনুরোধ করলাম আমাকে বলার জন্য, আমি কষ্ট পাব বলেই ও আমাকে বলছিলনা…..!!!!
অবশেষে সে রাজি হল……
“তারিক তুমি জান যে আমার এই বাড়ি যাবার কথা ছিল।
আমার বড় আপুর বিয়ে হবার কথা ছিল এপ্রিলে। আমি এপ্রিলের শর্ট সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে দু’মাসের জন্য বাড়ি যাব ঠিক করেছিলাম। আপুর বিয়ে আরো আগেই হয়ে যেত, শুধুই আমার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সবাই……”……এ কথা বলে সে যেন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলনা, আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল……. আমি তো হতবাক হয়ে পড়লাম :-S…… আমি ওকে ধরে নিয়ে একটা ক্লাসরুমে গিয়ে বসলাম।
ফাহাদ খুব কাহিল হয়ে পড়েছিল, প্রচণ্ড দুর্বল দেখাচ্ছিল ওকে। ও বসে থাকতে পারছিলনা।
পরে আমার কাঁধে মাথা রেখে আবার বলা শুরু করল। ওর সারা শরীর প্রচণ্ড জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম যে এখন আগে ক্লিনিকে যাই, সুস্থ হয়ে নাও, পরে তোমার কথা শুনব। ও রাজি হলনা, বলল আগে আমাকে সবকিছু বলবে, তারপর যা করার করবে। আমি বুঝতে পারছিলাম প্রচণ্ডরকম মানসিক আঘাত পেয়ে সে দিশেহারা হয়ে গিয়েছে…… ও আবার বলা শুরু করল…….
“আমার আপুর সাথে যার বিয়ে হবার কথা ছিল, অর্থাৎ আমার দুলাভাই, তিনি আমাদের অনেক আগে থেকেই পরিচিত।
তার নাম খালিদ। খালিদ ভাইর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের পরিচয় অনেক আগ থেকেই, আমাদের বাড়িও একই গ্রামে। গত বছর আমার আপুর সাথে খালিদ ভাইর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে হবার কথা ছিল এই মার্চ মাসে, আমার জন্য এক মাস তা পিছিয়ে এপ্রিলে নেয়া হয়। কিন্তু………”……. এটুকু বলেই ফাহাদ আবার কান্না শুরু করে দিল।
ওর বুকের মধ্যেখানে যেন প্রচণ্ড এক ব্যাথা লুকিয়ে আছে। আমি ওকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলাম, ও আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে দুপিয়ে কাঁদতে লাগলো……
হঠাৎ করেই ফাহাদ চিৎকার করে বলতে লাগলো, “তারিক, ওরা খালিদ ভাইকে মেরে ফেলেছে। খালিদ ভাই শহীদ হয়ে গিয়েছেন। তিনি যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন যোহরের নামায পড়তে তখন ঐ কুত্তাগুলো আক্রমণ করেছে ওনাকে। ওনার পেটে ৩টা গুলি করছে, পায়ে ২টা গুলি করছে........
খালিদ ভাই যখন রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছিল, তখন ওনার কাছে এম্বুলেন্স আসতে দেয়নি ঐ কুত্তাগুলো.... তারা উল্টো খালিদ ভাইর রক্তাক্ত দেহের উপর আরো নির্যাতন করছিল...... এরপর ঐ কুত্তাগুলো ওনাকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যায়..... এরপর ওনাকে জেরুজালেমের এক হাসপাতালে নিয়ে যায় ওরা।
তিন সপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা এটা..... ৩ সপ্তাহ আগে!!!! কিন্তু আমার মা, আমার আপু আমাকে কিছুই বলেনি..... আজ খালিদ ভাই মারা গেলেন, চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে........ ঐ কুত্তাগুলো আমার ভাইয়াকে মেরেছে...... ঐ কুত্তাগুলোর কারণে আমার যে বোন কিছুদিন পর নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন বুনছিল, তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে তারিক......
খালিদ ভাইর পরিবার, আমার পরিবার অনেক অনেক অনুরোধ করেছিল শুধুমাত্র একটিবারের জন্য দেখা করে আসবে ওনার সাথে। কিন্তু ঐ কুত্তাগুলো সে অনুমতি দেয়নি। মৃত্যুর আগে অনেকবার নাকি চিৎকার করে আমাদের সবাইকে ডেকেছিলেন, কিন্তু আমরা কেউই তার পাশে যেতে পারিনি……..”……. এটুকু বলার পর অজ্ঞান হয়ে গেল ফাহাদ। ইতিমধ্যে ওর চিৎকারে আশেপাশের ক্লাস থেকে কিছু ছাত্র চলেও এসেছিল আমাদের কাছে। ফাহাদকে এরপর আমরা ভার্সিটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম।
ডাক্তার বললেন, প্রচণ্ড মানসিক আঘাত, প্রচণ্ড জ্বর এ দু’টো মিলে ওকে খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে গিয়েছে। তবে সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে। জানিনা ২৫ তারিখ শুরু হওয়া সেমিস্টার ফাইনাল এক্সামে ও এটেন্ড হতে পারবে কিনা। আমি বুঝতে পারছিলামনা আমি কি করব……
ক্লিনিকের বেডে শুয়ে আছে ফাহাদ…….. এখনো তার জ্ঞান ফিরেনি। আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ফাহাদের দিকে।
কি মায়াবী চাহনী তার!! কিছুক্ষণ পর ওর জ্ঞান ফিরে এল। জ্ঞান ফেরার পরই ইশারায় আমাকে কাছে ডাকল। আমি পাশে গিয়ে বসলাম, জ্বর এখন কিছুটা কমেছে, কিন্তু যে মানসিক ধাক্কা সে পেয়েছে তা সেরে উঠা খুবই কঠিন। ওর মোবাইলটা আমার কাছেই ছিল। ও বলল ওর মায়ের সাথে কথা বলবে, ওর মায়ের নাম্বারে ফোন লাগিয়ে দিতে…..
ফোন করলাম ওর মায়ের কাছে, কিন্তু ওর মা তখন অসুস্থ…….. ও শুধু কাঁদতে কাঁদতে ওর মাকে একথাটুকুই বলল- “মা, তুমি দুঃখ করোনা মা, ওরা আমাদের কিচ্ছু করতে পারবেনা।
আমরা তৈরী হচ্ছি, তৈরী হয়ে আসছি ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মা……”
ওর কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল….. আমার মনে পড়ে গেল Sami Yusuf এর Forever Palestine গানটা……..
Mother don’t cry for me
I’m doing what I must
God almighty is my witness that I trust
Palestine, Forever Palestine
Children being killed for throwing stones in the sky
They say to their parents “don’t worry, God is on our side”
Palestine, Forever Palestine
Mother don’t worry when they come for us at night
Surely they’ll be sorry when God puts them right
Tell me why they’re doing what was done to them
Don’t they know that God is with the oppressed and needy
Perished were the nations that ruled through tyranny
Palestine, Forever Palestine
Children of Palestine are fighting for their lives
They say to their parents, “we know that Palestine is our right”
They to say to their parents, “we’ll fight for what is right”
They say, “not to worry! God is on our side”
They say, “we’ll die for Palestine”
Palestine, Forever Palestine
in Sonarbangladesh.com - Click This Link
in my Blogspot -
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।