কুরআন মাজিদ :
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি জীবন্ত মুজিজ
মূল: ড. মাজহার কাজি
অনুবাদ: ফয়জুল্লাহ মুজহিরী
সৌজন্য: http://www.hidayatv.com
‘মিরাকল’ বা মুজিজাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, তা এমন একটি কাজ যাকে প্রকৃতির নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না বা তা এমন একটি বিষয় যা মানুষের মতা ও সাধ্যের ঊর্ধ্বে। কিংবা তা এমন একটি ঘটনা যা মানবিক কার্যকারণ ও যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না। এ থেকে বুঝা যায়, মুজিজা যেহেতু মানুষের মতা ও যোগ্যতার মাধ্যমে আয়ত্ব করা যায় না, তাই তা অবশ্যই সরাসরি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার কর্ম বলেই বিবেচিত।
মুজিজা- আল্লাহ তাআলার প্রত্য কাজ হিসেবে- আল্লাহ তাআলার সার্বভৌম মতা ও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের প্রতিফলন ঘটায়।
মুজিজা মানবীয় বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ। এটি অনস্বীকার্য পরিষ্কার সত্য যে, আল্লাহ তাআলা বিশ্ব-জাহানের একমাত্র প্রভু। তাই তিনি তাঁর সকল সৃষ্টিকে তাঁরই আনুগত্যের নির্দেশ দেন। ইতিহাস স্যা দেয়, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সফলতা ও মুক্তির পথ দেখানোর জন্যে অনেক নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। যখন কোনো সম্প্রদায়ের কাছে কোনো নবী প্রেরিত হতেন তখন তারা তাঁর কাছে এই দাবি করত যে, তিনি যেন তাদেরকে মুজিজা পেশ করে দেখান।
তারা নবী কিংবা রাসুলের আখলাক ও আচরণের প্রতি ততধিক গুরুত্বারোপকারী ছিল না; সেই বাণীর প্রতিও নয় যা তিনি তাদের জন্য নিয়ে এসেছেন। বিপরীতে তারা এ ব্যাপারে অধিক উদগ্রীব ছিল যে, তিনি পারলে তাদেরকে কোনো অতি প্রাকৃতিক ব্যাপার দেখিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিবেন। ত আদম আ. থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রাসুলই এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।
উম্মতের প্রতি সকল নবী-রাসুলের জবাব ছিল একটিই- ‘আমি আল্লাহ তাআলার একজন বান্দা বৈ অন্য কিছু নই এবং তোমাদের জন্যে তার প থেকে একটি নির্দেশনা বা হেদায়েত নিয়ে এসেছি। আমার কোনো অতিরিক্ত মতা নেই।
আমার ইচ্ছা মাফিক কিংবা তোমাদের দাবি অনুসারে কোনো মুজিজা দেখাতে আমি সম নই। ’ যা হোক, আল্লাহ তাআলা তাঁর অপরিসীম দয়ায় প্রত্যেক নবী-রাসূলকে বহু মুজিজা দান করেন। এভাবে তিনি সব ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের উর্ধ্বে তাঁর নবী-রাসুলগণের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। একদল লোক এসব মুজিজাকে বক্রাঘাতমূলকভাবে জাদু ও ভেলকিবাজি বলে একেবারে উড়িয়ে দিত, পান্তরে যারা তাদের বিচার-বুদ্ধি, যুক্তি ও সাধারণ বোধকে কাজে লাগাত তারা নবী-রাসুলের এই অতিপ্রাকৃতিক কর্মসমূহকে আল্লাহ তাআলার প থেকে মুজিজা হিসেবে গ্রহণ করত এবং সম্মানিত নবী-রাসুলের বাণী অনুসরণ করত।
ইতিহাসও আমাদের এ কথা বলে, প্রত্যেক নবী-রাসুল যে সম্প্রদায় বা যে স্থানে প্রেরিত হয়েছিলেন সে সম্প্রদায় ও স্থানের জন্যে তাদেরকে বহু মুজিজা প্রদান করা হয়েছিল।
একইভাবে এ কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর েেত্রও সত্য। তিনি অগণিত মুজিজা দেখান, যা তার সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রত্য করেছিল এবং ইতিহাস ও সিরাত গ্রন্থে তা যথাযথভাবে লিখিত রয়েছে। তম্মধ্যে কতিপয় হল : তাঁর আদেশে স্বস্থান থেকে একটি গাছের সরে আসা, সামান্য খাবার দিয়ে বহু লোককে আহার করানো, তাঁর সাথীদের আঙ্গুল থেকে আলোর বিচ্ছুরণ হওয়া, তাৎণিকভাবে রোগের নিরাময় করা, আঙ্গুলের ইশারার মাধ্যমে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করা ইত্যাদি। তাছাড়া তিনি বহু ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যার সবকটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলার প্রেরিত নবী-রাসুলগণের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ।
অন্যান্য নবী-রাসুলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন কোনো বিশেষ স্থান ও সময়ের জন্য। আর আল্লাহ তাআলা এসব নবী-রাসুলকে কিছু বিশেষ মুজিজা দান করেছিলেন, একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাঁদের স্বজাতিকে প্রদর্শন করার জন্যে। এসব মুজিজা সময় ও স্থানের সঙ্গে সীমাবদ্ধ ছিল। এসব মুজিজা কেবল গল্প আকারে আজও বিদ্যমান রয়েছে মানব ইতিহাসের অংশ হিসেবে। অপরপে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন সর্বশেষ রাসুল হিসেবে।
পুরো মানব জাতির জন্যে এবং আগত পুরো সময়ের জন্যে। এই বিষয়টির দাবি হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে থাকবে এমন একটি সার্বজনীন মুজিজা যা স্থান-কাল নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে। মানব ইতিহাসের প্রতিটি যুগের প্রত্যেক ব্যক্তি, পৃথিবীর যে অংশেই সে বসবাস করুক না কেন, যথার্থই বলতে পারে, ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমানে যদি আমার জন্য নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমি পছন্দ করব, আমার জন্য বর্তমানে একটি মুজিজাও থাকবে। ’
আল্লাহ তাআলা মানব জাতির সর্বশেষ রাসূল হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাকে যে সার্বজনীন মুজিজা দান করেছেন তা হল কুরআন মাজিদ। পণ্ডিত, ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা কুরআন মাজিদের বিস্ময়কর প্রকৃতির বিবরণ দিয়ে অসংখ্য, অগণিত পৃষ্ঠা রচনা করেছেন।
বস্তুত বিগত চৌদ্দশ বছর ধরে প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক প্রজন্মই কুরআন মাজিদের নতুন নতুন বিস্ময় ও মুজিজা আবিষ্কার করেছে। এই অশেষ মুজিজা এ কথার শাশ্বত ও স্থায়ী প্রমাণ যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার রাসুল এবং কুরআন মাজিদ আল্লাহ তাআলার প থেকে পুরো মানবজাতির জন্যে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত— গ্রন্থ।
কুরআন মাজিদের বিস্ময়কর প্রকৃতিকে আরও ভালভাবে হৃদয়াঙ্গম করতে হলে আমাদেরকে সে স্থান ও কালের দিকে ফিরে দেখতে হবে যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৫৭১ ঈসায়ি সনে। তৎকালে মানবিক জ্ঞানের স্তর এতই অধপতিত ছিল যে, ঐতিহাসিকরা তাকে মানব ইতিহাসের ‘অন্ধকার যুগ’ বলে অভিহিত করেন।
তখন মানুষের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ন্যূনতম জ্ঞানও ছিল না। তাছাড়া সাধারণ মানুষ না জানত লেখা-পড়া, না জানত মুদ্রণের কলা-কৌশল। ফলে যদি কোনো ব্যক্তি একটি সুনির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করতে সম হত তবে সে জ্ঞান একটি সুনির্দিষ্ট বলয়ে সীমিত থাকত। সে জ্ঞান প্রচার-প্রসারের কোনো উপায় বা মাধ্যম ছিল না।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবের মক্কা নামক একটি ছোট শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।
তাঁর জন্মের সময়কালে আরব উপদ্বীপের জীবন ব্যবস্থা ছিল খুব সেকেলে। দেশটিতে যে কেউ দেখতে পেত কেবল সীমাহীন মরুভূমি ও বালিয়াড়ি। না ছিল সেখানে কোনো রাস্তা-ঘাট, না ছিল কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ, না ছিল কোনো বুনিয়াদি কৃষিব্যবস্থা। আরব উপদ্বীপের আবহাওয়া এমনকি বর্তমানেও এত উষ্ণ যে, ছায়ার মধ্যেও তাপমাত্রা প্রায়ই ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উন্নীত হয়। এহেন রূঢ় আবহাওয়া ও দারিদ্রের কারণে আরব উপদ্বীপ বিদেশি বণিক কিংবা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে নি।
গোটা বিশ্ব থেকে দেশটি ছিল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ফলে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও রোমে যে সামান্য জ্ঞানের চর্চা ছিল তাও আরব উপদ্বীপে পৌঁছতে পারে নি।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, লোকেরা সেখানে যাযাবরের মত বসবাস করত। তারা তাদের গবাদিপশু ও পরিবারের জন্য বৃষ্টি ও চারণভূমির তালাশে নিয়মিত একস্থান থেকে আরেক স্থানে ঘুরে বেড়াত। সেখানে ছিল না কোনো সরকারি ব্যবস্থাপনা, না ছিল কোনো নাগরিক আইন।
এমনকি তথায় ছিল না কোনো সুসংহত নগর জীবন। লোকেরা গোত্রে গোত্রে বসবাস করত। গোত্রের শক্তি ও প্রতিপত্তিই একজন ব্যক্তির মতা ও অধিকার হিসেবে বিবেচিত হত। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ কেবল এই একটি নীতিই সে ভূখণ্ডে বলবৎ ছিল। অপোকৃত শক্তিধর গোত্রগুলি দুর্বল গোত্রদের ওপর প্রায়ই লুটতরাজ ও লুণ্ঠন চালাত।
এটিই ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। অধিকন্তু গোত্রের শক্তি-সামর্থ নির্ভরশীল ছিল পুরুষদের সংখ্যার ওপর। নারীদেরকে বোঝা মনে করা হত। অধিকাংশ লোকই এ বোঝা বহন করতে প্রস্তুত ছিল না। ফলে তারা তাদের নবজাতক কন্যা সন্তানকে হত্যা করত।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মকালীন পরিবেশ-পরিস্থিতি ও তৎকালীন বিরাজমান অবস্থার উল্লেখ করার পর তাঁর শৈশবকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও উল্লেখ করা উচিত বলে মনে করছি।
জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। ছয় বছর বয়সে তিনি তার মাকেও হারান। অতঃপর তাঁর পিতামহ দেখাশোনার ভার নেন। কিন্তু তিনিও পরপারে পাড়ি জমান যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বয়স মাত্র আট।
এসময় তিনি তাঁর এক দরিদ্র চাচার গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই চাচা তাঁকে কেবল আশ্রয়ই দান করতে সম ছিলেন। তিনি তাঁর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করতে কিংবা জীবন ধারণের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণে সম ছিলেন না। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও গবাদি পশু চরিয়ে চাচাকে সহযোগিতা করতেন। যে কেউ দেখতে পাবেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাল্য জীবন ছিল খুবই কঠিন ও অসাধারণ।
তিনি তাঁর পিতা, মাতা কিংবা দাদার ভালবাসা ও সেবা-যতœ লাভ করতে পারেন নি। তার ছিল না স্থায়ী কোনো ঠিকানা। এক অভিভাবক থেকে আরেক অভিভাবকের কাছে স্থানান্তরিত হয়ে হয়ে তিনি বড় হন। এই বিরূপ ও রূঢ় পরিস্থিতির কারণে ন্যূনতম জ্ঞান কিংবা শিা, যা তৎকালে মক্কায় সুলভ ছিল- তাও অর্জন করার সুযোগ তাঁর ছিল না। ঐতিহাসিকরা লিখেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না লিখতে জানতেন, না পড়তে।
এমন কি তিনি নিজের নামটি পর্যন্ত স্বার করতে জানতেন না। অধিকন্তু তাঁর জীবনের এহেন রূঢ় ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাঁকে সেসব হাতে গোনা গুটিকয়েক শিতি লোকদের সাহচর্যে বসারও সুযোগ দেয় নি, যারা তৎকালে মক্কায় বসবাস করত।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে কেবল দু’বার দীর্ঘ সফর করেছেন। প্রথম সফর ছিল তাঁর আট বছর বয়সে। দ্বিতীয়বার সফর করেন যখন তাঁর বয়স পঁচিশ বছর।
উভয় সফরই ছিল সিরিয়ার অভিমুখে বাণিজ্যের উদ্দেশে এবং খুবই সংপ্তি। কোনো ঐতিহাসিক কখনও একথা লিখেন নি যে, এই সফরগুলি তাঁকে এমন কিছু জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করেছিল যা তিনি পরবর্তীতে কুরআন মাজিদে সন্নিবেশিত করেছেন। তিনি একজন সাধারণ আরব বেদুঈনের মত খুব সহজ সরল ও সাধাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি না একজন জনসমাবেশের বক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, না একজন কাব্য রচয়িতা ছিলেন, আর না অন্য এমন কোনো কাজ সম্পাদন করেছিলেন যা তাঁর প্রতি অন্যান্যদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছিল।
তিনি কোনো ধরনের বিতর্ক, ঝগড়া-বিবাদ কিংবা যুদ্ধে জড়াতেন না।
একথা সর্বজন বিদিত যে, মক্কার লোকেরা মূর্তিপূজা করত এবং যখন তারা কাবা শরিফে প্রবেশ করত, তখন পুরুষ-মহিলা সকলে কাপড় খুলে ফেলত। এটি ছিল তাদের প্রার্থনা-রীতির একটি অংশ। এটিও সর্বজন বিদিত যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না তাদের প্রথার সমালোচনা করতেন, আর না তাদের মূর্তিপূজার। একটি মাত্র বিষয় যা ঐতিহাসিকরা তার বাল্যজীবন সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন তা হল, তিনি তাঁর সততা এবং সদাচারের জন্য পরিচিত ও সকলের সম্মানের পাত্র ছিলেন। আর এ জন্যই মক্কার লোকেরা তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী এবং ‘আস-সাদিক’ বা সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত করে।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁকে পুরো মানবজাতির জন্য সর্বশেষ রাসুল হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব তখন হঠাৎ করে পাল্টে যায়। অনতিবিলম্বেই তিনি নানা ভূমিকা পালন করেন। যেমন, একজন ধর্মপ্রচারক, রাষ্ট্রনায়ক, বক্তা, সৈনিক, সেনানায়ক, নেতা, আইন প্রণেতা, বিচারক, চুক্তিসম্পাদনকারী, ব্যবসায়ী, শিক, স্বামী, পিতা ইত্যাদি।
তিনি এসব বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিটিতেই এতই সফল ছিলেন যে, একজন ইহুদি ঐতিহাসিক মাইকেল এইচ হার্ট মানবজাতির একশজন মহান ব্যক্তিত্বের তালিকায় তাঁকে সবার শীর্ষে রেখেছেন।
মানবতার প্রতি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হল আল্লাহ তাআলার আসমানি গ্রন্থ কুরআন মাজিদ, মানবজাতির ইতিহাসে যার কোনো তুলনা নেই। অন্যান্য নবী-রাসুলের মুজিজা তাদের জীবনকাল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কুরআন মাজিদ কিয়ামত পর্যন্ত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন্ত মুজিজা হিসেবে বিদ্যমান থাকবে। কুরআন মাজিদ এমন অসংখ্য তথ্য ধারণ করে আছে যা তা অবতীর্ণ হওয়ার সময় মানুষের জানা ছিল না।
এসব তথ্যের অনেকগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে নিশ্চিত সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
বস্তুত প্রত্যেক যুগে মানুষ কুরআন মাজিদে নতুন নতুন ‘মিরাকল’ বা মুজিজা আবিষ্কার করেছে। মানুষের জ্ঞানের পরিধি যতই প্রসারিত হচ্ছে, ততই তা কুরআন মাজিদের মুজিজার তালিকাকে সমৃদ্ধ করেছে। পান্তরে, কুরআন মাজিদের বিষয়বস্তুতে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের অসঙ্গতি কিংবা বিজ্ঞানের প্রামাণ্য সত্যের পরিপন্থী কোনো বিষয় পাওয়া যায় নি।
আগত পৃষ্ঠাগুলি কেবল কুরআন মাজিদের সমুজ্জ্বল মুজিজাসমূহের একটি সংপ্তি বিবরণ প্রদান করবে।
এসব মুজিজা একথার সমর্থন ও স্যা দেয় যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত একজন নিরর মানুষ কুরআন মাজিদ রচনা কিংবা তাঁর মানবীয় কল্পনাশক্তির মাধ্যমে তার চিত্রকল্প তৈরি করতে পারেন না। উপরন্তু তা একথা প্রমাণ করে যে, কুরআন মাজিদ সর্বজ্ঞাতা ও মহামহিম আল্লাহ তাআলার প থেকে প্রেরিত একটি আসমানি মুজিজা। ইরশাদ হয়েছে-
‘তুমি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব পাঠ করতে না। আর না তুমি তোমার দণি হাত দ্বারা তা লিখতে পারতে। এমনটি হলে, অবশ্যই মিথ্যাবাদীরা (কুরআন সম্বন্ধে) সন্দেহ পোষণ করত।
’ (আনকাবুত, ২৯ : ৮৮)
‘আর এই কুরআন এমন নয় যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ তা বানিয়ে নেবে। অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে এবং সে কিতাবের বিশ্লেষণ করে যাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বজাহানের পালনকর্তার প থেকে। নাকি তারা বলে, তিনি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা বানিয়ে এনেছেন? তুমি বলে দাও, ‘তাহলে তোমরা নিয়ে আস এর মত একটি সুরা এবং আহ্বান কর (সাহায্যের জন্য) যাদেরকে তোমরা সম হও, আল্লাহ ব্যতীত। যদি তোমরা (তাতে) সত্যবাদী হয়ে থাক।
’ (ইউনুস, ১০; ৩৭ : ৩৮)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।