Repor 1 to 6
দেশের মানচিত্রে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার অস্তিত্ব খুঁজে পেতে হিমশিম খান অনেকেই। ইতিহাস বলে একসময় সীতাকুণ্ডের পরিচিতি ছিল শুধু প্রসিদ্ধ হিন্দু তীর্থ স্থান হিসেবে। এর বাইরে উপজেলাটির পরিচয় দেবার মত বিশেষ কিছু ছিল না। কিন্তু বিগত ৪ দশক সময় বদলে দিয়েছে সব কিছু। দেশের মানচিত্রে এবং আপন সরকারের কাছে চরম অবহেলিত এই উপজেলাটির নাম এখন বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানচিত্রের শিল্প এলাকায় বিশেষ চিহ্নে চিহ্নিত! আর এর নেপথ্যে যে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের গৌরব কথা লেখা সে কথা না বললে ও চলে।
আশ্চর্য হলে ও সত্যি শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের মাত্র ৪০ বছরের প্রতিদিনই জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে এই শিল্প। ৬০ এর দশকে পথ চলার শুরু থেকে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখনো অভিষ্টের লক্ষ্যে অবিচল উদ্দ্যেক্তরা। আর এই সময়ে এখানেই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সন্ধানে এ পেশায় সরাসরিভাবে জড়িয়ে গেছে স্থায়ী অস্থায়ী অর্ধলক্ষ্য শ্রমিক সহ দেশের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। আর পরোক্ষভাবে সেই সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আজ অসংখ্যা কলকারখানা নির্ভর করে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের উপর নির্ভরশীল।
সরকার পাচ্ছে প্রায় ৮’শ কোটি টাকা রাজস্ব। কিন্তু এই কার্যক্রমের শুরুটা খুব ভাল হলেও মাঝে ৮৫ থেকে ২০০৭ইং পর্যন্ত এ শিল্পের ক্রমশ ভাটা পড়ছিল। ইয়ার্ড মালিকরা জানান, বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলির আমলে ব্যাপক চাঁদাবাজি, মালিকদের মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে চরম হয়রানি সহ মাসে কয়েবার হরতাল বা হানাহানির ঘটনা, সমুদ্রের নাব্যতা কমে যাওয়া সহ বিদেশ থেকে জাহাজ কিনতে গিয়ে মালিকরা নিজেদের মধ্যে অহেতুক প্রতিযোগিতা অর্থাৎ সমন্বয়নহীনতায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছিল এই শিল্প। সেই সাথে ঘন ঘন দুর্ঘটনা এই শিল্পের কর্মকান্ডকে বিতকির্ত করে তুলেছিল। এর মাঝে বিগত জোট সরকারের মেয়াদ পূতির পর সম্ভাব্য নির্বাচনকে ঘিরে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখা দিয়ে ছিল তা অব্যাহত থাকলেও এই শিল্পের জন্য যে কী ভয়াবহ দূর্দিন অপেক্ষা করছিল তা ভাবতেই চমকে উঠছিলেন সংশ্লিষটরা।
মোটের উপর অনেকটা ধ্বংসের দ্বারে দাড়ানো শিল্পটি পুনরায় মাথা তুলে দাড়ায় বিগত তত্ত্বাবধায় সরকারের আমল থেকে। তত্বাবধায়ক সরকারের দূর্নীতি বিরোধী অভিযানের ফলে শীপইয়ার্ড এলাকায় লোহা, তামা, পিতলসহ মূল্যবান দ্রব্যগুলোর চোর সিন্ডিকেড গুলো পূর্বের তুলানায় অনেক সর্তক হয়। ফলে ইয়ার্ড মালিকদের সাথে অনেকটা শান্তিতে ব্যবসা করেছেন সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান। আবার শ্রমিকদের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিনের দাবী বিএসবিএ হাসপাতালের নির্মান কাজও দীর্ঘ ৪০ বছর পর শুরু হয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে । শ্রমিকরাও এ খবর শুনে আনন্দিত।
ম্যাক করপোরেশন এক শ্রমিক হানিফ ও কবির ষ্টিলের শ্রমিক দেলোয়ার বলেন, এ হাসপাতাল হলে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচবে অনেকে। সেই সাথে পঙ্গুত্ব বরনকারী শ্রমিকের সংখ্যা ও কমবে। বিগত ১বছরের মূল্যায়ন সম্পর্কে তারা বলেন, তাদের মনে পড়ে না যে কোন্ অতীতে তারা এমন ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছিল। দেলোয়ার আরো বলেন, তারা কাজ না করে বেতন পান না। ইতোপূর্বে হরতাল অবরোধ সহ নানা কারণে প্রায়ই ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ থাকত।
সে সময় তাদের সংসার চালানোই মুস্কিল হয়ে পড়ত। বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে উপার্জন থাকায় শান্তিতে আছে তারা। এভাবেই শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ড সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কার্যক্রমেই ফিরে এসেছে সেই ৮০ দশকের প্রানচাঞ্চল্য কর্মতৎপরতা। এসব দেখে নতুন করে এই শিল্পে বিনিয়োগে প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন উদ্দেক্তারা। বিএসবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে অনেকেই বিএসবিএর সদস্যপদ লাভের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিগত কয়েকমাসেও গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ৫/৬টি ইয়ার্ড। এভাবে একসময় ফৌজদারহাটে একটি জাহাজ কাটার মধ্য দিয়ে যে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু হয় এখন সেই ইয়ার্ড সংখ্যা প্রায় ১শ। তাছাড়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ৪৯টি। যার অর্থ অদূর ভবিষৎতেই এখানে দেড়শ ইয়ার্ডে একসাথে জাহাজ ভাঙ্গা শুরু হবে। আর তা হলে ভাসমান লৌহখনি খ্যাত সীতাকুণ্ডের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য হয়ে উঠবে অতিগুরুত্বপূর্ণ শিল্প।
তাই একথা মানতেই হবে যে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প শুধু সীতাকুণ্ডের নয় সমগ্র দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই দেশের স্বার্থেই এ শিল্পকে বাঁচাতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।