আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংলাপ ২০০৭: আল মাহমুদ, জয় গোস্বামী, ব্রাত্য রাইসু

স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার।
ব্রাত্য রাইসু: মাহমুদ ভাই, বললেন জ্বর আসছে আপনার, সিগরেট খাচ্ছেন যে? আল মাহমুদ: সিগারেট খাচ্ছি, সিগারেট ছাড়া থাকতে পারি না, কী করবো? মানুষের তো…এটাই তো আছে। আর তো কোনো শখ নাই, কিছু নাই। কোনো কিছু করি না।

জয় গোস্বামী: আপনি সুরা পান করেন না? মাহমুদ: না। আমি সুরা পান করতে পারি না। সুরা পান করলে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। জয়: আপনার চোখের অবস্থা ভালো নয়, কিন্তু আমি আমার কবিতা সংগ্রহ-এর তৃতীয় খণ্ডটি নিয়ে এসেছি। আপনার কাছে রেখে যাবো।

কখনো সময় পেলে একটু উলটে দেখবেন। মাহমুদ: ঠিক আছে, আমি দেখব। জয়: কখনো সুযোগ পেলে একটু বইটা পড়ে দেখবেন। এই আর কি। …বাবা তোমার নাম কী? (ঘরে আসা একটি মেয়েকে নাম জিজ্ঞেস করেন জয় গোস্বামী।

) মাহমুদ: এই, এদিকে আসো, নাম বলো। (আল মাহমুদ মেয়েটিকে নাম বলতে বলেন। ) জয়: নাম কী? অ্যাঁ? মেয়েটি: প্রথমা। জয়: প্র থ মা! ও বাবা! কী সুন্দর নাম! মাহমুদ: আমার নাতনী। জয়: বুঝেছি।

কাবেরী (জয় গোস্বামীর স্ত্রী) আসতে পারল না এজন্যে যে আজগে যেহেতু আমরা চলে যাব, আমাদের সমস্ত কিছু এদিক-ওদিক হয়ে গেছে। সকাল থেকে লোক আসতে শুরু করেছে হোটেলের ঘরে। বিভিন্ন কারণে দেখা করতে করতে আমাদের সব পিছিয়ে গেছে। স্নান ট্নান কিছু হয়নি। ও আর কিছুতেই বেরুতে পারল না।

ওর খুব ইচ্ছে ছিল যে আপনাকে একবার দেখবে। আমরা তো এলামও অনেক দেরিতে। যে সময়টা দিয়েছিলাম সে সময় আসতে পারলাম না। মাহমুদ: ঠিক আছে। জয়: ব্রাত্য, আপনার কাছে কি কলম আছে? রাইসু: হ্যাঁ।

মাহমুদ: কী চাও তুমি বলো (সাক্ষাৎকারগ্রহীতাকে)? রাইসু: ইন্টারভিউ নেব একটা। আপনাদের দুজনের। একটা হইল রেকর্ড করব। ক্যামেরাটাও থাকল আর কি। মাহমুদ: হাতে লিখে নিতে পারলে ভালো হতো।

জয়: ক্যামেরাও থাকল, মেশিনও থাকল। দুই-ই থাকল। রাইসু : লিখতে হবে না আর। হবে? মাহমুদ: ঠিক আছে। আমার দিক থেকে অসুবিধা নাই।

…তো, জয়? জয় : আজ্ঞে। মাহমুদ: দেখলেন ঢাকা শহর? জয়: আজ্ঞে হ্যাঁ। মাহমুদ: কেমন লাগলো? জয়: আমি ঢাকা যতটুকু দেখতে পেরেছি, আমি প্রধানত তরুণ কবিদের সঙ্গেই ছিলাম। আর আমি শহরের ভিতরে ভিতরে ঘুরে বেড়িয়েছি। এই প্রথম আমার মনে হলো - এর আগেও আমি ঢাকায় এসেছি - যে, ঢাকা শহর তার ধমণীর মধ্য দিয়ে আমাকে একবার ছুড়ে দিচ্ছে আর একবার তার দিকে লুফে নিচ্ছে।

খুব ভালো লেগেছে। এদের সঙ্গে ঘুরতে পেরে। আর আপনাকে দেখলাম। একটা ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম কালকে। সেখানে পাঁচিলের উপর পা ঝুলিয়ে একটা মেয়ে বসেছিল।

মাহমুদ: কোথায়? জয়: ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। মাহমুদ: আচ্ছা। জয়: দেখে খুব ভালো লেগেছে আমার। রাইসু: মাহমুদ ভাই? মাহমুদ: নিঃসঙ্কোচে বলো। রাইসু: সঙ্কোচই নাই।

নিসঙ্কোচ কেমনে হবে। এই যে আপনাদের সাক্ষাৎ হইল। জয়দা তো আগে একদিন আসছিল, না? মাহমুদ: আগে একদিন এসছিল। রাইসু: মাহমুদ ভাই কি এখন আর স্মরণ করতে পারেন কিনা কীভাবে কবিতা লিখতে শুরু করছিলেন? বা জয়দা? মাহমুদ: আমি খানিকটা স্মরণ করতে পারবো বোধহয়। কারণ আমি ইশকুলেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম।

স্কুলে যখন পড়ি। লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লিখতাম আমি। আমাদের বাড়িতে, যদিও খুব রক্ষণশীল ধর্মীয় পরিবার, কবিতার একটা জায়গা দিল। কারণ আমার দাদা কবিতা লিখতেন। তাঁর নাম ছিল আবদুল ওহাব মীর।

তাঁর নানা শখ ছিল। লড়াইয়ের মুরগী পুষতেন তিনি, লড়াইয়ের মুরগী। আসলি রাতা। আর কবিতা জারী গান লিখতেন। সারী গান করতেন।

যেমন একটা জারী গানের ধোঁয়া হলো এরকম, ‘পত্র পাইয়া হানিফায়, পত্র পাইয়া হানিফায় শূন্যে দিল উড়া - দুই ভাই মইরা গেল কবুতরের জোড়া। ’ এটা একটা ধোঁয়া। ঘুরে ঘুরে এসে এটা বলতেন। পায়ের মধ্যে ঘুঙুর বাঁধা থাকত। এই পরিবেশে আমি কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম।

জয়: আচ্ছা ব্রাত্য, আমি কি একটা প্রশ্ন এই সূত্রে ওঁকে জিজ্ঞেস করতে পারি? রাইসু: নিঃসন্দেহে পারেন। জিজ্ঞেস করার দরকার নাই আমারে। জয়: সেটা হলো যে কবিতায় যাকে চিরকালের মহিমা বলে তা আপনি ইতিমধ্যেই অর্জন করেছেন। এবং সেটা আজ নয়, অনেক দিনই আপনি অর্জন করেছেন। আপনি যে নিয়মিত এখনও লিখে চলেছেন - গদ্য এবং কবিতা - আমি গতকাল আবার আপনার একটি গদ্য রচনা পরলাম পত্রিকায়।

এই যে লিখছেন, অন্তঃপ্রেরণা যাকে বলে, এই যে কবিতা ভিতর থেকে আসছে বা গদ্য রচনা ভিতর থেকে আসছে। আপনার কবিতা বিষয়ক গদ্য রচনা ঢাকাতে এসে দুটি পড়েছি। এই অন্তঃপ্রেরণা জন্মে বা আসতে আপনার কোনো অসুবিধা হয় না, না? কী করে তাকে পারেন, এটা একটু বলুন। মাহমুদ: প্রথম কথা হলো যে আমার চিন্তার বিষয়টা কী দেখতে হবে। আপনি মনে করেন, আপনি কলকাতায় থাকেন, আপনি জানেন আপনার এক বন্ধু আছে ঢাকায় লেখেন।

তার নাম আল মাহমুদ। এখন আমার চিন্তার বিষয়টা কী? চিন্তার বিষয়টা না ধর্ম, না কোনো দেশ, না কোনো কিছু। আমার চিন্তার বিষয়টা হলো কাব্য। কবিতা সৃষ্টি করার জন্য সবসময় একটা প্রয়াস আমার মধ্যে সেই অল্পকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। আমি যখন শিখে ফেলেছি যে কবিতা লিখতে হলে বসতে হয়, ঘুরে বেড়ালে চলে না।

রাইসু: এই বসাটা কী রকম মাহমুদ ভাই? মাহমুদ: যেমন কবিতা নিয়ে নানা কথা বললাম আড্ডা-টাড্ডায়, কিন্তু লিখলাম না। ঘরে ফিরে এসে না লিখলে কবিতা হয় না। তো আমার একটা সবসময় প্রয়াস ছিল যা বলি, যা করি, যা বিনিময় হয় এই শহরে, আমি কবিতা একটা লিখে ফেলবো। আমি সবসময় ভেবেছি আমার যে বিরোধিতা…আপনি তো জানেন, আমার প্রবল বিরোধিতা আছে এবং অত্যন্ত অন্যায় ভাবে বলা হয় যে আমি মৌলবাদী। আমি বরং বিশ্বাস করি।

এ দেশে বিশ্বাস করলেই তাকে মৌলবাদী বলা হয়। তো আমি সবসময় ভেবেছি লিখতে হবে। এ কৌশলটা আমার নিজের। অন্য কেউর কাছ থেকে শিখিনি আমি। যে লিখতে হবে, এবং লিখলে ঘরে ফিরে আসতে হবে।

আজিজ মার্কেট বসে থাকলে লেখাটা হবে না। জয়: আমার আরেকটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করে সেটা হলো যে, এই যে এখনো আপনার ভেতরে অবিরল ভাবে যে লেখাটা আসে, এই যে দুটি খণ্ড কবিতা সংগ্রহ আছে আপনার। দুটি খণ্ড কবিতা সংগ্রহের মধ্যে বই আছে প্রায় চব্বিশ পঁচিশটি। আছেই, ছোটদের বই টই ইত্যাদি আছে। কিন্তু এর পরেও আপনার ভেতরে কবিতার যে স্রোত তা কিন্তু বয়ে চলেছে।

তো এইটা বাঁচিয়ে রাখবার উপায়টা আপনি বলছেন যে এসে বসা, না? ও আচ্ছা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। রাইসু: আপনার অভিজ্ঞতাটা কী? জয়: আমি ওঁকে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলাম একটা পথপ্রদর্শককে জিজ্ঞেস করার মতো। কারণ আমার এরকম মাঝে মাঝেই হয় যে সমস্তটা শূন্য হয়ে যায়। সমস্তটা।

সকাল থেকে বসে থাকি। কিছুই আমার হয় না। এবং আমার জগতে মনে হয় না কোথাও কিছু আছে। বা কখনও একটা লাইনও কবিতা আমি লিখেছি। আপনার সামনে আমি আমার নিজের কবিতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করছি বলে আমাকে ক্ষমা করবেন।

কিন্তু এ কথা ওঠাচ্ছি এজন্য যে এটা আমি আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে চাই যে কী উপায়ে যুদ্ধ করা যায় এই নিষ্ফলা বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে। যখন তাই বন্ধ্যাত্ব আসে এবং সেটা দীর্ঘ সময় চলে এবং কতগুলো মুখ মনে পড়ে। লিখতে গেলে কতগুলো মুখ মনে পড়ে। এদের মুখগুলো মনে এলে আর লিখতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় লিখে কিছু হবে না।

এই যে আমি নিজের বাইরে বেরুতে পারি না, আপনার কাছে আমি যেটা জানতে চাইছি যে এই নিষ্ফলা এই বন্ধ্যাত্ব এইটার সঙ্গে আপনি নিশ্চয়ই পরিচিত। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে একবার বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন তাঁর সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যসংগ্রহ-এর ভূমিকায় যে, যে-সমস্যা সুধীন্দ্রনাথের কাছে উত্থাপন করেছি…যে সাহিত্যিক সমস্যা, সব সময়ই দেখেছি, সেটি তার পূর্ব পরিচিত। তো আমি আপনার কাছে যেটি উত্থাপন করেছি, আমার ধারণা আপনি এর মধ্যে দিয়ে গেছেন। এই যে বিরাট একটা শূন্য, মনে হয় যে শেষ হয়ে গেল। রাইসু: জয়দা, আপনি যে বললেন মুখ মনে পড়ে, এর অর্থ কী? জয়: কয়েকটা মুখ মনে পড়ে মানে হলো মনে হয় যে, আমার কবিতা যখনই বেরুবে, ছাপা হবে, তখন এরা পড়বে।

যখনই এটি মনে হয় তখনই লিখতে ইচ্ছা করে না। এটা হলো এক। দুই নম্বর কথা হলো যে, মানুষ যেমন যাকে ভালোবাসে তার সামনে নগ্ন হতে পারে। বা মায়ের সামনে সেবিকার সামনে, মানে আমরা যখন চিকিৎসার জন্য যাই, সেবিকার সামনে আমরা নগ্ন হতে পারি। ধাত্রীর সামনে আমরা যখন নগ্ন হই তখন আমাদের সে চেতনা থাকে না যে আমি নগ্ন।

তো সেবিকার সামনে আমরা নগ্ন হতে পারি আর যাকে ভালোবাসি তার সামনে নগ্ন হতে পারি। এ ছাড়া অন্যের কাছে কি আমরা নগ্ন হতে পারি? পারি না তো। তেমনি মনে হয় মনের এই কথাগুলো আমি যে বলছি, এই যে নিজেকে ওপেন করছি, এটা আমি কার সামনে করছি! এটা মনে করলেই নগ্নতা মানে আপনি জামা কাপড় ভালো করে পরে নেই এই অবস্থায় ঘরে কেউ ঢুকলে আপনার যে সংকোচ হয় এবং আপনার যে রকম ভাবে ভেতরটা গুটিয়ে যায় আমারও কবিতা লিখতে গেলে ওরকম কিছু কিছূ কথা মনে পড়ে আর তখন আমার ভেতরটা গুটিয়ে যায়। আমি একটা নিষ্ফলা বন্ধ্যাত্বের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হই। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি আমাকে কি একটা পথ দেখাতে পারেন? মাহমুদ: আচ্ছা, একটা কথা বলব যে, এরকম যে আমি চেষ্টা করি নাই তা না।

একটা সময় যায়, কিছু লেখা হয় না। শুধু চিন্তা চিন্তা। কিন্তু সময়টা বয়ে যায়। আমার মনে হয় যে এটা ঠিক বন্ধ্যাত্ব না। এটা হলো সৃজনশীলতার জন্যে সময়ের ভেতরে সময়ের মধ্যে একটা অপেক্ষা।

আমি তো মাসের পর মাস লিখতে পারিনি। আমার নিজেরই মনে হতো আমি বোধহয় ফুরিয়ে গেছি, শেষ হয়ে গেছি - এসব। ভয় লাগতো আমার। কিন্তু আবার তো লিখেছি। লেখাটা শুরু করে দিয়েছি।

আমি ফিরে আসতে পারি। সময়ের ভেতর থেকে সময়ের কিনার ঘেষে আমি বেরিয়ে আসতে পারি। আমি লিখি, পড়ি। জয়: সময়ের ভেতর থেকে সময়ের কিনার ঘেষে আমি বেরিয়ে আসতে পারি! (স্বগতোক্তি) আচ্ছা। মাহমুদ: আর আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো নারী।

এবং এটা অকপটে বলা উচিত। জয়: এবং সেটা সৌন্দর্য। আপনার কাছে নারী মানে সৌন্দর্য। রাইসু: মাহমুদ ভাই কি স্বীকার করেন কিনা যে নারী মানেই সৌন্দর্য? মাহমুদ: না, নারী মানে সৌন্দর্য এটা আমি বলি না। কিন্তু নারী আকর্ষণ করে।

জয়: না, আমি বলছি কবিতায় এই যে নারীর উদ্দীপনা আপনার মধ্যে যা তৈরি করে তা দিয়ে যে কবিতাটা লেখেন সেটা একটা সৌন্দর্যের উপাসনা। রাইসু: আল মাহমুদ কী বলতে চাচ্ছেন, সাবজেক্ট হিসাবে নারী না উদ্দীপনার জন্যে নারী? মাহমুদ ভাই কোনটা বলছেন? মাহমুদ: দুইটাই মিলে মিশে থাকে অবশ্য। রাইসু: এবং এইটা সব সময় সৌন্দর্য কিনা। বা সৌন্দর্যের বাইরে নারী আছে কিনা? মাহমুদ: ব্যাপারটা হলো তুমি সুন্দর বলো কাকে? কী কী বিষয়কে সুন্দর বলো। তুমি যেইটা সুন্দর বলো সেইটা কি সত্যিই সুন্দর।

এ প্রশ্নটা করতে হবে। অনেক কবিরা যাকে সুন্দর বলেছেন সেটা প্রকৃতপক্ষে তার কাছেই সুন্দর। অন্যের কাছে সুন্দর ছিল না। রাইসু: মাহমুদ ভাই, সেক্ষেত্রে যখন আপনার কাছে নারী আকর্ষণীয়, জয়দা যদি তখন বলেন সেই নারী সুন্দর বইলাই আকর্ষণীয়… মাহমুদ: সেইটা উনি বলতেই পারেন। রাইসু: আপনার কী মত এই ব্যাপারে? মাহমুদ: সুন্দরটা নির্ভর করে তো আমার আকাঙ্ক্ষার উপর।

আমি কামনা করি। আমি চাই। আমি শুয়ে পড়তে চাই তার সাথে। রাইসু: সেইটা কি সুন্দর-অসুন্দর নির্বিশেষে আপনি চান না? জয়: কী অপূর্ব! কী অপূর্ব! মাহমুদ: এই যে আমার যে আকাঙ্ক্ষা, এই যে ভোগ করার যে লালসা, আর্টের সর্বক্ষেত্রে আমার মনে হয় এইটা আছে। রবীন্দ্রনাথেও আমি খুব ভালো করে পাই।

রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে বেশি এসব বিষয় নিয়ে ভেবেছেন। কিন্তু বলেছেন অত্যন্ত কম। লিখেছেন অনেক বেশি। রাইসু: দুয়েকটা উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের, এরকম? মনে পড়লে বইলেন। আমি জয়দারে মাঝখানে আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি।

জয়দা, আপনি যেটা বললেন যে, সৌন্দর্য ব্যতিরেকে নারীর প্রতি যে লালসা এটারে শিল্পের জন্য আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কিনা? বা শিল্পে এইটা থাকে কিনা? জয়: আমার ক্ষেত্রে ব্রাত্য একটা কথা বলার দরকার। সকল মানুষের ক্ষেত্রে যেমন একই রকম খাদ্যরুচি নয়, সকল দেশের মানুষের পক্ষে যেমন পোশাক পরিচ্ছদ গাত্রবর্ণ যৌনরুচি একই রকম নয়, এমনকি একই দেশে একই সমাজের বিভিন্ন মানুষের যৌনরুচি ভিন্ন হতে পারে। তেমনি শিল্পের ক্ষেত্রে কোনটি কার পক্ষে সর্বোচ্চ উদ্দীপক সেইটে বলা যায় না। আর একটি মেয়ে আপনার কাছে আসায়, তার সঙ্গে সময় কাটানোয় আপনি উদ্দীপিত বোধ করেছেন এবং কবিতা লিখেছেন। না, ব্রাত্য রাইসুর কথা বলছি না।

আপনি হয়তো কোনো মেয়ের দ্বারা উদ্দীপিত হয়েই কবিতা লিখেন নি। এমন হতেই পারে। না, এটা হতেও পারে। ধরুন, অমল বাবু, তিনি একটি মেয়ের দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে কবিতা লিখলেন। মাহমুদ: কে? জয়: ধরা যাক একটা নাম বলছি অমল বাবু।

তিনি তার জীবনে একটি মেয়ে আসায় উদ্দীপিত হয়ে কিছু কবিতা লিখলেন। কবিতাগুলি উৎকৃষ্ট হলো। এইবার কমলবাবু হয়তো সেই মেয়ের সঙ্গেই মিশে কোনো আকর্ষণই বোধ করেন নি। একেবারে একই জিনিস কিন্তু একটি মেয়ের ক্ষেত্রেও হতে পারে, আরেকটি পুরুষের ক্ষেত্রেও। সে তার কাছে উদ্দীপক নয়।

ফলে শিল্পে সর্বাবস্থায় সর্বকালের জন্য এইটি বা ওটি একমাত্র উদ্দীপক বা প্রধান উদ্দীপক এমন কিছু জিনিস আমি ঠিক জানি না। কারণ মানুষ তো অনেক রকম। মানুষের উদ্দীপনাও অনেক রকম। রাইসু: কিন্তু আমি একটু বলে নেই জয়দা, উদ্দীপনার… মাহমুদ: সিগারেট দাও। সিগারেট দাও একটা।

রাইসু: সিগারেট খাবেন আবার? মাহমুদ: সিগারেট খাই না! বসে বসে উত্তেজিত করে ফেলছো। রাইসু: কী করছি? মাহমুদ: উত্তেজিত করে ফেলছো। [...] (বাকি অংশের জন্য ক্লিক করুন) ছবি। সিউতি সবুর, ২০০৭
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।