কালের স্রোত
একটা সময় আমাদের চলচ্চিত্র ছিলো আমাদের অহংকার। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সবার প্রিয় এ শিল্প ধীরে ধীরে হারিয়েই যেতে বসেছে। এর কারণ হিসেবে অনেকগুলো কারনের মধ্যে অন্যতম একটি হলো আমাদের সিনেমা হল। নোংরা পরিবেশ, সুস্থ মানসিকতার লোকের অভাব, পতিতাদের আনাগোনা ইত্যাদি কারনে সাধারণ মানুষজন সিনেমা হল তথা পুরো চলচ্চিত্র থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
আমাদের ঢাকার বুকে বেশ কয়েকটি উন্নতমানের ও ভালো মানের সিনেমা ছিল কিন্তু বর্তমানে তার কিছুই নেই।
ঐতিহ্যবাহি গুলিস্তান সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই হল ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে আসে। বলাকা, মধুমিতাসহ দু’একটি হল বাদ দিয়ে অন্যান্য সিনেমা হলের পরিবেশ কল্পনাতীত বাজে। চারপাশে নোংরা, ভ্যাপসা গরম, ছারপোকা ইত্যাদির জন্য বেশিরভাগ সিনেমা হলে বসে ছবি উপভোগ করা অসম্ভব। এছাড়া কিছু কিছু সিনেমা হল তো ইতোমধ্যেই মিনি পতিতালয় হিসেবে গড়ে উঠেছে। ফার্মগেটে অবস্থিত ছন্দ সিনেমা হলের সামনে দিয়ে পুরুষরা হেঁটে গেলে বিভিন্ নোংরা ইঙ্গিতের মাধ্যমে ‘কাস্টেমার’ ডাকে।
এ ব্যাপারে ঐ জায়গার দায়িত্বপালনরত পুলিশের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আরে ভাই ওরাও তো মানুষ! ওরা পেটের দায়ে এসব করে। পুলিশের এ বক্তব্য শুনেই বোঝা যায় মাসিক মাসোহরা নিয়ে প্রশাসন এ ব্যাপারে জেনেও নিশ্চুপ থাকে।
সিনেমা হলগুলোর এ বেহাল দশার আরেকটি প্রধান কারণ হলো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানদের দ্বৈরাত। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে ধীরে ধীরে প্রায় সব হলই এখন বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
সময় পরিবর্তনের সাথে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকার মানুষ আমাদের নিজস্ব চলচ্চিত্রের দিকে নজর না দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে মেতে থাকে।
আমাদের শাকিব খান, রিয়াজদের কোন ছবি কবে মুক্তি পাচ্ছে তা জিজ্ঞাসা করলে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা চুপ করে থাকা ছাড়া আর কোন কিছুই করবে না কিন্তু বলিউডের সাধারণ নায়ক অর্জুন রামপলের ছবি কবে মুক্তি পাবে তা তারা লাফ দিয়ে বলতে পারবে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, এতে আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের প্রতি তরুণ প্রজন্মের মন উঠে গেছে। তারা ভারতের চলচ্চিত্রের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট। এ প্রসঙ্গে তরুণ সমাজের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে তারা সিনেমা হলগুলোর পরিবেশের কারণেই ছবি দেখতে যান না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের বিবিএর ছাত্র শফিক রহমান বলেন, আমরা কেন সিনেমা হলে যাবো? হিন্দি ছবির নকল করে জগাখিচুরি মার্কা ছবি দেখতে আর সিনেমা হলের ভেতরে পতিতা ও বিকৃত রুচির মানুষদের নোংরা কর্মকান্ড দেখতে।
প্রায় তাকে সমর্থণ করেন এআইইউবি’র ছাত্রী জান্নাত। তিনি বলেন, আমরা মেয়েরা একা হলে যেতে পারিনা। আমরা যখন পরিবারের সাথে হলে গিয়ে এ পরিবেশ দেখি তখন আমাদের লজ্জ্বায় মাথা নিচুঁ হয়ে যায়। ’
উপরোক্ত তরুণ প্রজন্মের দুই প্রতিনিধির বক্তব্যই বলা যায় যে আমাদের দেশের তরুণ সমাজের বক্তব্য সিনেমা হলের ব্যাপারে।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় সিনেমা রধলের সংখ্যা প্রায় ২০।
সিনেমা হলগুলো হলো বলাকা, রাজমনি, স্টার সিনেপেক্স, অভিসার, মধুমিতা, শ্যামলী, সনি, জোনাকী, গীত সঙ্গীত, আনন্দ, ছন্দ, পূরবী, এশিয়া, আগমন, গ্যারিসন, বিডিআর সিনেমা হল, আজাদ ইত্যাদি। কিন্তু বলাকা ও সিনেপেক্স ছাড়া অন্যান্য হলগুলোর অবস্থা যাচ্ছে তাই। সেজন্যই সিনেমা হলে দর্শকরা হলে যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক প্রযোজক ও পরিচালক। প্রযোজনা- পরিচালকদের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকারের শক্ত পদপে আশা করছেন। এছাড়া নির্মাণ সংস্থাগুলোর প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে যে তারা যেন সিনেমা হলের জায়গা দখল করে নিজেদের ব্যবসা করেন।
সিনেমা হলের উপরের থেকে যদি ব্যবসায়ীদের কালো হাত, হলের ভিতরের নোংরা পরিবেশ, পতিতাদের আনাগোনা না রোধ করা যায় তাহলে বর্তমানে যে পরিমান দর্শকের আগমন ঘটছে অদূর ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারনা করছেন সিনে বোদ্ধারা। সুতরাং এসব সমস্যার দূরীকরণ করে রুচিশীল দর্শকদের সিনেমা ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় আমাদের এ শিল্পটি নষ্ট হয়ে পড়বে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।