http://www.facebook.com/Kobitar.Khata ঘটনার সূত্রপাত একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে। আমার প্রিয় একজন ব্লগার যিনি একজন আলেম, তারেক মাসুদ যেদিন মারা গেল সেদিন তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলেন। সেই স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম যে উনার কোন এক বন্ধু তারেক মাসুদের মৃত্যুতে ইন্নাল্লিাহ..... না পড়ে আলহামদুল্লিাহ পড়েছেন। কারণ তিনি মনে করেন তারেক মাসুদ ইসলাম বিরোধী ছবি (মাটির ময়না) বানিয়ে ''কান চলচিত্র উৎসব'' থেকে পুরুষ্কার ভাগিয়ে এনেছেন। তারমানে, তিনি বুঝাতে চাইলেন তারেক মাসুদ একজন ইসলাম বিরোধী লোক ছিলেন।
আমার ফেসবুক বন্ধুটিও দিব্যি তা বিশ্বাস করে আছেন। যদিও তিনি ছবিটি দেখা তো দূরের কথা তারেক মাসুদের নামও কখনো শোনেনি। (আমাদের মোল্লারা সাধারণত এমনই হয়ে থাকেন, না জেনে না বুঝে কথা বলেন। নারীনীতি পড়েন নি কিন্তু তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে দেবেন, কারণ তারামনে করে আমীনি পড়লেই হবে। ) তখন আমি এই নিয়ে কিছু না বলে কাঠ মোল্লাদের নিয়ে বিপদে আছি।
তারেক মাসুদকে নিয়ে অপপ্রচার। নামে একটি পোষ্ট করি। এই পোষ্টেই আমার সেই ফেসবুক ফ্রেন্ড এর সাথে তর্কের সূত্রপাত। তিনি রাগের সহিতই আমাকে বললেন মাটির ময়নার লিংক দিতে যেহেতু ছবি দেখলে গুনাহ হয় না সেহেতু তিনি তা দেখবে। (কথাটি খোঁচা মেরে বলা)।
তখন আমি উনাকে প্রশ্ন করলাম ''সিনেমা দেখা গুনা এই কথাটা কোরআনের কোন আয়াতে লেখা আছে আগে প্রমান দেন। আপনি তো কোরআনে হাফেজ। নিশ্চয় জবাব রেডি আছে?''
আমি এই প্রশ্ন করার কারণ, আমি জানি তিনি এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন না। কারন, মদ, জুয়া, অশ্লীল নাচ, অশ্লীল গান ইত্যাদির ব্যাপারে ইসলামে সরাসরি নিষেধ আছে, কিন্তু সিনেমার ব্যপারে নয়। কারণ তখন তো সিনেমা নামক কোন বস্তুই ছিল না, নিষিদ্ধ থাকার প্রশ্ন আসবে কোথা থেকে? (এ ব্যপারে পরে বিস্তারিত লিখছি।
)
তিনি তার উত্তর দিলেন,
শেষ দিকে (২১ কমেন্ট) তিনি বলেছেন, অশ্লীলতার সংজ্ঞা আপনার কাছে অস্পষ্ট,
আমাদের কাছে নয়।
আর যার কাছে অশ্লীলতার সংজ্ঞা স্পষ্ট তার কাছে সিনেমা অশ্লীল কিনা তাও তার কাছে স্পষ্ট।
নবী করীম সা. এর স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, হে নবী পত্নীগন
তোমরা জাহেলী যুগের মত সাজ সজ্জা করে রাস্তায় বের হয়ো না। সূরা আহযাব।
মাটির ময়নাতে নাচ নাই, গান নাই বলার পর তিনি এই যুক্তি দিয়েছেন।
এখন আমি যদি বলি এই ছবিতে জাহেলী যুগের মতো সাজ সজ্জার কোন ব্যাপারও ছিল না এমন তিনি কি যুক্তি তুলে ধরবেন আল্লাই ভাল বলতে পারেন।
সিনেমা দেখা হারাম কিনা হালাল?
সিনেমা দেখা হারাম কি হালাল আমার দৃষ্টিকোন থেকে এখন বলছি। উল্লেখ্য এখানে কোরআন হাদিসের থেকে কোন রেফারেন্স দিচ্ছি না।
আমি (হয়তো আপনারাও) ছোটকাল থেকে এই শুনতে শুনতে বড় হয়েছি যে, ছবি তোলা হারাম। কেউ যদি ছবি তোলে তবে সেই ছবিতে রুহ দিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে কেন ছবি তোলা হয়েছে।
(কোরআন হাদিস অনুসারে কতটুকু সত্য জানি না) এমন কি এও শুনেছি যে, যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি থাকে সেই ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশ করেন না। যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে নামাজ পড়লে নামজ হয় না।
এই কথা যদি সত্য হয় তবে অবশ্যই সিনেমা হারাম। সে ছবিতে যত ভাল ভাল কথা থাকুক আর যত কোরআন হাদিসের বাণীই থাকুক। যেহেতু কোন প্রাণীর ছবি তোলা গুনাহ সেহেতু একবাক্যে সিনেমা হারাম।
এরপর দেখলাম ঘটনার উল্টো পিঠ। আমাদের দেশে ক্যাসেটে ওয়াজ বাজানো এখনো হয়ে থাকে (যদিও হুজুরেরা রেডিও ক্যাসেটের বিরুদ্ধেও ওয়াজ করেন। ) যখন দেশে ভিডিওর চল শুরু হলো তখন দেখলাম মাওলানা সাঈদির ওয়াজের ভিডিও মানুষ আগ্রহ নিয়ে দেখে, এমন কি চা'য়ের দোকানে বসেও। কিছুদিন পর যখন দেশে বেশ কিছু টিভি চ্যানেল চালু হলো তখন টিভিতে বিভিন্ন ইসলামীক অনুষ্ঠানগুলোতে দেশের খ্যাতনামা মাওলানাদের দেখা যেতে লাগল। তখন খুব ধাঁধাঁয় পড়ে গেলাম।
আসলে কি হচ্ছে? যে মাওলানারা রেডিও, টিভি, সিনেমার বিরুদ্ধে গলা ফাটায় তারা কেন টিভি পর্দায়? তাদের কি গুনা হচ্ছে না? তাদের ছবিতে রুহ দিয়ে কি আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেনা ' তোমরা ছবি তুলেছ কেন?' এদিকে ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে ''আল বাইয়্যানাত" নামক একটি ধর্মিয় সংগঠনের দেয়াল লিখনে ভরে গেল। তারা দেয়ালে দেয়ালে লিখে রেখেছে, যে মাওলানারা ইসলামী অনুষ্ঠানের নামে টিভিতে মুখ দেখায়, রেডিওতে যাদের গলা শোনা যায় তারা বেদায়াতি। এটা সর্ম্পূন হারাম। যারা টিভি রেডিওতে অনুষ্ঠান করে তাদের সামজিক ভাবে বর্জন করার কথাও বলা হয়েছে।
অন্যদিকে যারা মনে করে তারা এদেশে ইসলামের ঝান্ডা এখন পর্যন্ত উচু করে তুলে ধরে আছে তারাও আনন্দের সাথে ছবি তোলে।
সাংবাদিকের ক্যামেরা মাইক্রোফোন দেখলে মুখটি এগিয়ে দেয়, সাংবাদিক ডেকে কনফারেন্স করে (কনফারেন্স মানেই ছবি তোলা। ) এমন কি বেগানা মেয়ে (আমিনী, নিজামীদের কাছে খালেদা তো বেগানা মেয়ে মানুষই তাইনা? নাকি তাদের আম্মা লাগে?) মানুষের সাথে বসে ইফতার করে, মুনাজাত করে এমন ছবি দেখে সত্যিই বিপদে পড়ে যাই।
মনের মধ্যে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খায়।
কোনটি সত্য?
কোনটি সত্য?
কোনটি সত্য?
একদিন একটি টিভি চ্যানেলে এক মাওলানা এক দর্শকের প্রশ্নের উত্তরে বিষয়টির ব্যপারে তার মতামত খোলাশা করে বললেন। তিনি যা বলতে চাইলেন তা হলো, তারা টিভি রেডিওর মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে কথা বলছেন, মানুষকে ভাল ভাল আদেশ নির্দেষ দিচ্ছে।
আর মিডিয়ার কল্যানে তাদের কথাগুলো মূহুর্তেই কোটি কোটি মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। এতে করে মানুষ অনেক কিছু জানছে, এতে করে মানুষের ভাল ছাড়া খারাপ তো হচ্ছেনা।
মাওলানার কথা শুনে অনেক ভেবে চিন্তে মাওলানার সাথে আমিও একমত হলাম। আসলেই তো!! তারা টিভি রেডিওতে ভাল ভাল কথা বলছে তাতে ভাল ছাড়া তো খারাপ কিছু হচ্ছে না। আমরা বড় বড় অনেক মাওলানার নাম শুনেছি তাদের কখনো দেখিনি।
টিভির কল্যানে তাদের দেখছি, তাদের ওয়াজ শুনছি, চাইলে তাদের সরাসরি প্রশ্নও করছি। এটা তো অনেক বড় একটি সুযোগ সাধারণ মানুষের জন্য। তাহলে টিভিতে তাদের ছবি দেখানো গুনাহ হবে কেন? তখন থেকে ধরে নিলাম ছবি তোলা ও দেখা অবশ্যই গুনা না যদি সেটা হয় ভাল কাজে। যে ছবি মানুষের জন্য ভাল ও কল্যানের কথা বলে সেটা অবশ্যই ভাল।
ছোটকাল থেকে জেনে আসছি সিনেমা দেখা গুনাহ।
আমিও একমত। কারণ ইসলামে চটুল গান, নাচ, বেপর্দা নারী-পুরুষ, ধর্ষণ, ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা নিষেধ। আর আমাদের সিনেমা মানেই এগুলোতে ভরপুর। সুতরাং অবশ্যই সিনেমা দেখা গুনাহ। এতে কোন সন্দেহ নাই।
কিন্তু এর পর যখন তারেক মাসুদ, আবু সাঈদ, তানভির মোকাম্মেল'রা কিছু ছবি বানাল তখন আবার ধাঁধাঁয পড়লাম। কারণ সিনেমা বলতে এতদিন যা জেনে এসেছি (চটুল গান, নাচ, বেপর্দা নারী-পুরুষ, ধর্ষণ, ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা) তাদের ছবিতে যে এগুলো কিছুই নেই। এই ছবিগুলোতে আছে ভাবনার খোরাক জোগানোর মতো কিছু, শেখার মতো কিছু। তবে কি এই ছবি দেখলেও গুনাহ হবে? কেন হবে? ইসলামে যে সব অশ্লীলতা নিষিদ্ধ (চটুল গান, নাচ, বেপর্দা নারী-পুরুষ, ধর্ষণ, ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা) এগুলো তো এসব ছবিতে কিছুই নেই। কোরআন হাদিসে তো বলা আছে অশ্লীলতা নিষিদ্ধ।
সিনেমা নিষিদ্ধ কোথাও তো লেখা নাই। তবে অশ্লীলতা মুক্ত সিনেমা কেন নিষিদ্ধ হবে?
দিপু নাম্বার টু দেখে শিখেছিলাম মাতৃভক্তি কাকে বলে, একজন দুষ্ট প্রকৃতির ছেলেকে কি করে ভালবাসা দিয়ে ভাল করা যায়, একজন গরিব বন্ধুর প্রতি, বন্ধুর পাগল মায়ের প্রতি আমাদের কি কর্তব্য হওয়া উচিত, এতে অশ্লীলতা কোথায়?
তারেকের মাটির ময়নাতে দেখেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেই উত্তাল সময়কে, একজন অনুর আবেগ অনুভুতি, একজন কুসংস্কারাছন্ন মাওলান এবং বড় হুজুরের মতো ধার্মিক ভালমানুষ একজন মাওলানা। (মাটির ময়না সিনেমা এত ছোট জিনিস নয় যে দু কথায় বুঝাতে পারব কি দেখেছিলাম। )
মাটির ময়নাতে চটুল গান, নাচ, বেপর্দা নারী-পুরুষ, ধর্ষণ, ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশার মতো কোন ব্যপারই ছিল না। এমনকি ''জাহেলী যুগের মত সাজ সজ্জা করে রাস্তায় বের হওয়ার'' মতো কিছুও না।
তবে এই সিনেমা দেখা কেন গুনাহ হবে? এই ব্যপারে কাঠ মোল্লাদের কি যুক্তি?
আমার সোজা কথা হলো ছবি তোলা যদি গুনাহ হয় তবে অবশ্যই সিনেমা বানানো ও দেখা গুনাহ। সে ক্ষেত্রে সিনেমা আর ওয়াজ মাহফিল একই কথা। আর ভাল কাজে যদি ছবি তোলা গুনাহ না হয়, ছবির মাধ্যমে যদি ভাল কোন মেসেজ দেয়া গুনা না হয় তবে ভাল ছবি দেখাও গুনাহ হওয়ার কারণ নাই। সে ক্ষেত্রেও সিনেমা আর ওয়াজ মাহফিল একই কথা।
এখন মাওলানাদেরই খুজে বের করতে হবে ছবি তোলা গুনাহ নাকি গুনাহ না।
সিনেমা দেখা গুনাহ নাকি গুনাহ না। অবশ্যই থাক যথেষ্ট যুক্তি প্রমান সহকারে প্রকাশ করত হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।