ক্রীড়নকদের নামই কেবল জানা যাচ্ছিল না। নইলে খেলার বাইরে বিপিএল যে আসলে ক্রিকেট-জুয়ারও আসর, এমন ফিস্ফাস তো প্রথম আসর থেকেই শোনা যাচ্ছিল। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে মোহাম্মদ আশরাফুলের সংশ্লিষ্টতা অনুমানের সত্যি প্রমাণিত হওয়া একটা অংশ মাত্র। তবে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের অধিনায়ক বলেই আশরাফুলের নাম এত জোরে শোনা যাচ্ছে। নইলে ম্যাচ ফিক্সিং তো আর স্পট ফিক্সিংয়ের মতো শুধু একজনের কাজ নয়।
ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের দুটি ম্যাচ নিয়েও আইসিসির নিরাপত্তা ও দুর্নীতি দমন বিভাগের (আকসু) তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসতে পারে সে রকম তথ্য। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরের আরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম জড়িয়ে যেতে পারে বিপিএলের ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারির সঙ্গে।
বিপিএল নিয়ে আইসিসির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও বিসিবি সভাপতির কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে প্রয়োজন বোধ করলে আবারও বাংলাদেশে আসতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তারা। চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে অপরাধের গুরুত্ব, মাত্রা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিসিবিই নির্ধারণ করবে দোষীদের শাস্তি। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আশরাফুলের সঙ্গে ম্যাচ পাতানোয় সম্পৃক্ত হিসেবে দোষী প্রমাণিত হতে পারেন পেসার মাহবুবুল আলমসহ আরও দু-একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার।
এ ছাড়া তদন্ত দলের কাছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কোচ ইয়ান পন্ট এবং অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় ড্যারেন স্টিভেন্সের বিরুদ্ধেও নাকি আছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ। তবে তদন্ত দল এখন পর্যন্ত ওই দুই ম্যাচে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের প্রতিপক্ষ চিটাগং কিংস ও বরিশাল বার্নার্সের বিরুদ্ধে কোনো কিছু খুঁজে পায়নি। ম্যাচ ফিক্সিংটা বাইরের ফিক্সারদের মাধ্যমে হয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।
জানা গেছে, এ রকম অভিযোগ আসতে পারে অনুমান করেই দু-দুবার বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসকে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার ব্যাপারে কোনো সাহায্য করেনি বিসিবি। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো বিসিবির হাতে না এলেও এ-সংক্রান্ত কিছু তথ্য বিসিবির শীর্ষ পর্যায়ের জানা।
শুরু থেকেই তদন্তপ্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখা হয়েছে বোর্ডের বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে। সম্পৃক্ত আছেন মাত্র তিনজন—বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী এবং অস্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক। প্রথম দুজন এ মুহূর্তে রয়েছেন ভারত সফরে। আর বিপিএল-সচিব এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংমুক্ত টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে দ্বিতীয় বিপিএলে আকসুর চার কর্মকর্তাকে প্রায় ২ কোটি টাকায় ভাড়া করে আনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
মল্লিক জানিয়েছেন, চলমান তদন্ত সেটিরই ধারাবাহিকতা, ‘এই তদন্ত আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের সঙ্গে করা বিসিবির চুক্তি অনুযায়ী হচ্ছে। চুক্তিতে বলা ছিল, টুর্নামেন্টে কোনো সমস্যা খুঁজে পেলে পরে সেটারও তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন বিভাগ। এই তদন্ত সেই প্যাকেজ চুক্তির আওতায়। এর জন্য তাদের বাড়তি কোনো টাকা দিতে হবে না। ’ চূড়ান্ত তদন্ত শুরুর আগে আকসু ও বিসিবির মধ্যে আরেকটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী তদন্তকাজে আইসিসিকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে বিসিবি।
তবে তদন্তে শেষ পর্যন্ত আশরাফুল বা আর কেউ দোষী প্রমাণিত হলেও অন্য দেশের খেলোয়াড়দের মতো থানা-পুলিশ করতে হবে না তাদের। টানতে হবে না জেলের ঘানিও। বাংলাদেশের আইনে ম্যাচ গড়াপেটার কোনো শাস্তি না থাকায়, দোষীদের শাস্তি বলতে আইসিসির নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া শাস্তিই। সেটার সর্বোচ্চ মাত্রা—আজীবন বহিষ্কারাদেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।