আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গার্মেন্টস না মৃত্যুকূপ ।। তালাবদ্ধ করে ২১ পোশাক শ্রমিক হত্যা করলো মালিক



গার্মেন্টস না মৃত্যুকূপ । । তালাবদ্ধ করে ২১ পোশাক শ্রমিক হত্যা করলো মালিক। তালাবদ্ধ থাকার কারনে প্রাণ দিলো ২১ পোশাক শ্রমিক । তালাবদ্ধ না থাকলে একজন শ্রমিকও মারা যেতোনা।

সেকশন ইনচার্জ মিজানুল ইসলামের দায়িত্বহীনতার কারনে এতোগুলো শ্রমিককে প্রাণ দিতে হয়েছে। ভবনের ছাদ খোলা থাকলে হয়তো এভাবে দম বন্ধ হয়ে শ্রমিকরা মারা যেতোনা। এমন কথায় বলছিলো গাজীপুরের গরীব এন্ড গরীব সোয়েটার কারখানার শ্রমিক ও প্রত্যক্ষ্দর্শীরা। বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত গাজীপুরের গরীব এন্ড গরীব সোয়েটার কারখানার ২১ শ্রমিকের লাশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে কারখানার মালিক নাজমুল হক ভুইয়া ।

নিহত প্রত্যেক শ্রমিককের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শুক্রবার ভোর থেকেই গাজীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে ভিড় করে নিহত শ্রমিকদের আত্মীয়-স্বজনরা। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ গ্রহনের আবেদন জানান আত্মীয় স্বজনরা। অনুমতি দেয়ায় সকাল সাড়ে দশটা থেকে লাশ হস্তান্তর শুরু হয়। কারখানার লিংকিং ইনচার্জ সুমন জানান, রাত ৯টার দিকে কারখানার দ্বিতীয় তলায় লিংকিং সেকশনে আগুনের সূত্রপাত হয়।

বিদ্যুতের লাইন থেকেই আগুন ধরেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তখন ঐ তলায় কেউ ছিলেন না। ফ্লোরটিতে প্রস্তুত করা সোয়েটারের স্তুপ থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ফ্লোরে। পরে আগুন নিভলে দেখা গেছে ফ্লোরের সমস্ত কিছুই পুড়ে গেছে। তবে তা অন্য ফ্লোরে ছড়ায়নি।

ঘটনার সময় কারখানার তৃতীয় তলার স্যাম্পল ও সপ্তম তলার উইন্ডিং সেকশনে সব মিলিয়ে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছিল। রাত দশটার পরে যখন সকলে জানতে পারেন দোতলায় আগুনের সংবাদ তখন আর বেরোনোর পথ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় তলায় অবস্থানরতরা কেউ কেউ দৌড়ে বেরিয়ে গেলেও ওপরে উঠতে গিয়ে আটকে যান অধিকাংশ। এরপর সপ্তম তলাতেই বন্দী হয়ে পড়েন ২১ জন। কলাপসিবল গেট আটকনো থাকায় তারা নামতে পারেননি।

পরে তৃতীয় তলার একাংশের জানালার গ্রিল কেটে গুরুতর আহতাবস'ায় উদ্ধার করা হয় ২৫/২৬ জনকে। সপ্তম তলায় ২১ জন আটকে থাকার বিষয়টি টের পেলেও তারা মারা যাবেন বলে ধারণা ছিল না কারও। আগুন উপরের দিকে না ওঠায় তারা অক্ষত আছেন বলেই ধরে নেন উদ্ধার কর্মীরা। পরে গার্মেন্টস কর্মীদের স্বজনরা ফায়ার কর্মীদের সহযোগিতায় সেখানে পৌছে হতবাক হয়ে যান। দেখতে পান সারি সারি লাশ পড়ে আছে সিড়ির কাছাকাছি নামাজ পড়ার স্থানটিতে।

আগুন লাগার পর কারখানা কতৃপক্ষ গেট খুলে দিলে এ মৃত্যু রোধ করা যেতো বলে অধিকাংশের অভিমত। কারখানা ভেতরে প্রবেশের রাস্তা সরু থাকায় এবং কারখানার উপরে উঠার বিকল্প সিড়িপথ তালাবদ্ধ থাকায় দমকল বাহিনীর সদস্যদের আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয়। বহু শ্রমিককে পার্শ্ববর্তী ভবনে উঠে তিন তলার জানালার গ্রিল ভেঙ্গে বের করে আনেন কয়েক জনকে। অগ্নিকান্ডে নিহতরা হচ্ছেন কারখানার লিংকিং সেকশনের অপারেটর গাইবান্ধার রওশন আরা বেগম (৪৪), কুমিল্লার রীনা আক্তার (২৬), জাহানার বেগম (৩৬) ও রহিমা আক্তার (৩৫), সিরাজগঞ্জের মমতাজ বেগম (৪০), নরসিংদীর সাফিয়া বেগম (৪০), রংপুরের সাবরিনা বেগম (৩৪), শাহিনুর (৩০), মোস্তাফিজার রহমান (৪০), জরিনা বেগম (৪৫), সালমা আক্তার (২৮), ঠাকুরগাঁওয়ের আলমগীর হোসেন (৪০), পিরোজপুরের ফরিদ উদ্দিন (৩৪), ফরিদপুরের সুফিয়া বেগম (৪০), জরিনা আক্তার (৪৫), ফরিদা বেগম (৩০), ময়মনসিংহের মজিদা বেগম (৩৫), আবুল কাসেম (৪১), রহিমা আক্তার (২৮), মাজেদা বেগম (৩০) ও প্রদীপ কুমার দে (৩০)। গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: হাসান সারোয়ারের নেতৃত্বে এ কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম। গরীব এন্ড গরীব সোয়েটার কারখানায় গত ৮ মাসে ৩টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন। গত ২০ আগস্ট আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন আবুল কালাম নামের একজন দমকল কর্মী। তারপরও মালিক নাজমুল হক ভুইয়া ব্যবস্থা নেননি।

এদিকে গাজীপুরের ভোগড়ায় গরীব এ্যান্ড গরীব সোয়েটার ফ্যক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে ২১ জন গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত সকল গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনসমুহের সমন্বয়ে গঠিত সর্বদলীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যের উদ্যোগে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে মুক্তাঙ্গনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গরীব এ্যান্ড গরীব সোয়েটার ফ্যক্টরির খুনি মালিককে গ্রেফতার,দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি,নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ,আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহত-আহতদের পরিবারকে পূনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয় প্রতিবাদ সভা থেকে। ২৩ টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম এ ঘটনার প্রতিবাদে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ ও মিছিল করে। নেতৃবৃন্দ বলেন,বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে এগিয়ে গেলেও যাদের জন্য এ শিল্পের অগ্রগতি সেই শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুকি নিয়েই কাজ করে চলেছে।

আজ তাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিও নেই । গার্মেন্টসগুলো যেন এক একটা মৃত্যুকূপ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.