আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হ্যান্ডশেক পার্টির খপ্পরে ! ...............



. . . . ঢাকায় আমরা যারা থাকি তারা মনে হয় সবাই কম বেশি মলম পার্টি বা অজ্ঞান পার্টির ব্যপারে জানি। কিন্তু মনে হয় হ্যান্ডশেক পার্টির ব্যাপারে অনেকেরই জানা নেই। আমি নিজেও ঘটনাটা ঘটার আগে এই ব্যপারে জানতাম না। আজ সেই ঘটনা বলি। খুব বেশিদিন হয়নি ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি।

বনানী এলাকায় আমাদের ক্যাম্পাস। রাতে MBA এর ক্লাস হয় দেখে অনেক রাত পর্যন্ত ভার্সিটি খোলা থাকে। কিন্তু তখন খুব বেশি ছাত্র থাকেনা। ইন্টারনেট ল্যাবে তখন নেট এর স্পিড থাকে চরম। এই সুযোগ খুব ভালো ভাবে উসুল করা শুরু করলাম কয়েকদিন ধরে।

রাতে ইন্টারনেট ল্যাবে থাকতাম, বড় বড় ফাইল ডাউনলোড হয়ে যেত নিমিষেই। এরকমই এক রাতে ভার্সিটি থেকে নেটে কাজ শেষে বাসা ফিরছিলাম। বলে রাখি, আমি স্বাভাবিক এর চেয়ে একটু জোরে হাটি। সেদিনে তো দেরি হওয়ায় কথাই নেই, আরো তড়িঘড়ি করে হাটছিলাম। ভার্সিটি থেকে বাসস্ট্যান্ড টা কাছেই, ওইটুক রাস্তা হেটে গিয়ে বাস ধরি।

হাটছি। এমন সময় আমার হাত, বিপরীত দিকে হাটতে থাকা এক লোকের হাতে ধাক্কা লাগল। খুব ই সামান্য আঘাত, এরকম রাস্তাঘাটে প্রায়শই হয়। আমার কেন জানি মনে হল লোকটারই দোষ ছিল, আমি যথেষ্ট জায়গা রেখে হাটছিলাম। কিন্তু আমি সেদিকে মন না দিয়ে পাশ কাটিয়ে হাটতে লাগলাম।

অনেকদূর চলে গিয়েছি, এমন সময় দেখি আমার পেছনে হাত দিয়ে কে জানি ডাকল। পেছনে ফিরে দেখি সেই লোকটা! দেখতে মোটেই ভদ্রলোক মনে হয় না, কমবয়সি জোয়ান টাইপ এর লোক। আমি একটু অবাকই হলাম, সামান্য স্পর্শ লাগার জন্য এই লোকটা এতদূর ছুটে এসে আমাকে থামাতে এল! আমি ঝামেলা একদম পছন্দ করিনা, তাই লোকটি কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠি, “ভাই আমি একটু তাড়াহুড়ায় আছি তো তাই এত জোরে হেটে যাচ্ছিলাম, আপনার হাতে ভুলে লেগে গেছে, সরি,! ভুল হয়ে গেছে। ” “কোন প্রবলেম নাই” বলে লোকটা হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বড়িয়ে দেয়। আমিও ভদ্রতার খাতিরে আমার হাতটা বাড়ইয়ে দেই।

হ্যান্ডশেক করি। এবং তাতেই ভুলটা করি। যদি জানতাম কি এক বিপদে পড়তে যাচ্ছি কখনই তা করতে যেতাম না। “কোথায় পড়?” এরকম অচেনা এক লোক কথা নেই বার্তা নেই হ্যান্ডশেক করে কোথায় পড়ি জিজ্ঞাসা করায় উত্তর দিতে আজব লাগছিল তাও ইতস্তত করে জানালাম “এন.এস.ইউ তে পড়ি। “ “হুম, ... কোথায় বাসা?” এবার উত্তর না দিয়ে আমি হাত তা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলি “আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে যেতে দেন।

“ এরপর লোকটা যা বলা শুরু করল তা শুনে রীতিমত গা শিউরে ওঠে আমার! সে দাবি করে বসে করে সে এখানকার ‘লোকাল’ রংবাজ ! উনার হাতে আমার হাত ধাক্কা লাগায় আমি মহা অপরাধ করে ফেলেছি নাকি। এবং তার কোমর এ থাকা অস্ত্র তেও আমার হাত তা লাগিয়ে অনুভব করিয়ে দেখায়! আমি তো ভয়ে শুকিয়ে কাঠ! কি বলব ভেবে পাচ্ছিলামনা। আমি যে সাহায্যের জন্য চিল্লানো ঠিক হবে কিনা ভাবতে থাকলাম। এরা এই লাইনে এক্সপার্ট, তাই এমন পরিস্থিতিতে পড়লে- কে কি ভাবতে পারে তা এদের নখদর্পনে। তাই আমাকে আর ভাবতে না দিয়ে বলে , তার এক ইশারার তার আশেপাশে থাকা সঙ্গপাঙ্গ এসে নাকি আমাকে ঘিরে ধরবে আর আমাকে নাকি কি করবে তা নাকি কল্পনাও করতে পারব না! বুঝলাম মহা বিপদে পড়েছি।

মহা মহা বিপদ। আমার কাছে থাকা জিনিসপত্র চাবে এখন। মানিব্যাগ নিলে প্রবলেম নাই। বেশি টাকা ছিলনা তাতে। মূল্যবান বলতে আমার সদ্য কেনা sony ericsson এর cybershot মোবাইল।

খুব কষ্টে টাকা জমিয়ে পকেট খরচ বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে এটা কিনেছিলাম এবং একটা উটকো রংবাজের কাছে তা তুলে দিতে মোতেই প্রস্তুত ছিলাম না এবং মনও চাইছিল না। আবার ভাবছিলাম না দিয়েও উপায় নেই। আম্মু-আব্বুর কড়া নির্দেশ, এরকম অবস্থায় পড়লে যেন যা আছে দিয়ে দেই। তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম লোকটা আসলে কি চায়। কিন্তু তা না বলে ঐ লোকটা বলে, উনাকে নাকি হোটেলে নিয়ে গিয়ে নাস্তা খাওয়াতে হবে! বুঝলাম যে রাস্তায় আরো অন্য লোক যাতায়াত করছিল সবাই, তাই এভাবে ছিন্তাই করা সম্ভব না, কোন অন্ধকার ‘চিপায়’ নিয়ে গিয়ে আমার কছের মূল্যবান জিনিসগুলো দখল করাই নিরাপদ ভাবছে! এবার আমি শেষ চেষ্টা করলাম।

লোকটা তখনও আমার ডান হাতটি হ্যান্ডশেকরত অবস্থায় ধরে আছে, ছাড়েনি একটা মূহুর্তও। বললাম ভাই এখন তো আমার পকেটে আপনাকে খাওয়ানোর মত টাকা নেই। একটু দূরে না জানি কাকে দেখিয়ে বললাম ঐ যে আমার জন্য একজন wait করছে, (আসলে কিন্তু কেউ ছিলনা)। আমার তাড়া আছে ভাইয়া আমাকে যেতে দেন। আপনি আপনার মোবাইলে নম্বর টা দেন আমি কালকেই ভার্সিটি এসে আপনার সাথে যোগাযোগ করে আপনাকে নাহয় নাস্তা খাওয়াব।

বলে রাখা ভাল আমি দুইটা মোবাইল ব্যবহার করতাম। অন্য মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে নম্বর সেভ করার ভাব নিলাম। উনার নম্বর নিয়ে পরের দিন যে উনাকে খাওয়াব তা আসলে আষাঢে গল্প, আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল আমার অন্য মোবাইল টা উনাকে দেখানো,কেননা ওটা ছিল লর্ড ক্লাইভ এর আমলের (মানে অনেক পুরাতন) এক স্যামসং মোবাইল। ওটা ওরা নিয়ে ৫০০ তেও বিক্রি করতে পারলে ওদের ভাগ্য। দামি মোবাইল যে আরেকটা অন্য পকেটে আছে তা বুঝতে দিলাম না।

আর সামনে যে আমার জন্য একজন আছে তারও ভান করেছিলাম যেন বোঝে কোন জোরজবস্তি করলে সামনে কিন্তু আমার একজন আছে! এতে লোকটা মনে হয় আমাকে কিছু করার চিন্তা বাদ দিল। কাছেই থাকা কাকে জানি কি এক অদ্ভুত ইশারা করল। (উনার কোন সঙ্গপাঙ্গ হতে পারে আরকি)। আমাকে নাম্বার দিল। আমি মোবাইলে লিখে সেভ করে নিলাম।

এমনকি মিসকলও দিয়ে বোঝালাম যে ওটা আসলেই আমার নম্বর। এতক্ষনে আমার হাত ছেড়ে দিল। বিদায় নিলাম। ওখান থেকে প্রায় একরকম দৌড়েই কাছে মোড় এ থাকা ট্রাফিক পুলিশ এর কাছে এসে পেছনে তাকালাম। কেউ ফলো করছে কিনা বা সেই লোকটা কে দেখতে পাওয়া যায় কিনা তার চেষ্টা করলাম।

নাহ, কেউ ছিলনা। আমিও তাড়াতাড়ি বাস ধরে বাসা ফিরলাম। বাসায় ফিরে আমার ভার্সিটির এক ফ্রেন্ডকে ফোন লাগিয়ে ঘটনাটা বললাম। সে বলে এটা কিনা হ্যান্ডশেক পার্টি! এর ওর সাথে হ্যান্ডশেক করে কৌশলে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখায় তারপর কোথাও নিয়ে গিয়ে বা ওখানেই লুটপাট করে। অস্ত্রের ভয়ে ভিক্টিম চুপ থাকে তাই তাদের অসুবিধা হয়না।

আমি শুনে বলি হায়হায়! কি বিপদেই না পড়েছিলাম! সষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ আমাকে এরকম বিপদ থেকে বিনা ক্ষতিতে উদ্ধার করার জন্যে। আপনাদের কাছে শেয়ার করলাম সেই ঘটনা, যাতে আপনাররা যারা জানেন না তারা সতর্ক থাকতে পারেন। রাস্তায় অচেনা কারো সাথে হ্যান্ডশেক করতে যাওয়ার আগে একটু ভেবে দেখবেন। কে জানে কোনো ‘হ্যান্ডশেক পার্টি’ কিনা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।