কোন রকমে টিকে থাকা শেষ, বেঁচে থাকার শুরু....
১.
পুরনো টিনের দুতলা বাড়ি। উঠানটা আধা পাকা করা। একদিন এক কোণে দেখা গেল ছোট্ট একটা পেয়ারা চারা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডালপালা মেলে চারাটা বড় হতে থাকলো। সবার অনেক আশা।
অনেক পেয়ারা হবে, সবাই মিষ্টি কচকচে পেয়ারা খাবে। কিন্তু মানুষগুলো যেন খুব ব্যস্ত। চারাটার যত্ন নেয়ার সময় হয় না। চারাটা পানি পায় না, কংক্রিট ভেদ করে শেকড় মেলতে পারে না। কিন্তু তার দুঃখের কথা কাকে বলবে? চারাটা বাড়তে থাকে তাও।
এভাবে অনেক দিন।
২.
পেয়ার গাছটা বড় হয়েছে। ফুল ফুটতে শুরু করেছে। ও যেন কি বলতে চায়, পারে না। কেও তো ওর কথা শুনে না।
মানুষগুলো খুব খুশি হয়। এই বুঝি পেয়ারা খেতে পারবে।
না, হলো না। সব ফুল ঝরে গেছে। গাছটা কেবল টলমল করে তাকিয়ে থাকে।
আকাশের দিকে। রোদ, আকাশ আর অন্ধকার ওর সব কিছু। ও কি যেন বলতে চায় চিৎকার করে, পারে না।
পেয়ারা গাছটা অবাক হয়। মানুষ ওর পাতা ছিড়ে, ডাল ভাঙ্গে।
ওর খুব কষ্ট হয়। ও বোবা বলে বলতে পারে না। এভাবে অনেক দিন।
৩.
তারপর একটা পাখি এলো কোথা থেকে যেন। ওর ডালে বসলো।
মিষ্টি করে কিচির মিচির করলো। পাখিটাকে ভালো লেগে গেল। পাখিটা যেন নির্বাক ওর কথাগুলো বুঝতে পারে। ওরা ভালো বন্ধু হয়ে গেল। গাছটা পাখির চোখে ওর সুখগুলো দেখতে পেতো।
এভাবে অনেকদিন।
৪.
পাখিটা আর পেয়ারা গাছটার ডালে বসে না। অনেক দূরে ও চলে গেছে। পেয়ারা গাছটা এদিক সেদিক দোলে; সরতে পারে না। খুব বেশিদূর দেখতেও পারে না।
এভাবে কিছুদিন।
৫.
পাতা ঝরার দিন আসে। নতুন পাতা গজানোর সম্ভাবনায় পেয়ারা গাছেরও পাতা ঝরে।
৬.
বসন্তের এক সকাল। সেই পুরনো দুতলা টিনের বাড়িটা খুজে পাওয়া গেল না।
পাওয়া গেল পাকা নতুন দুতলা দালান। আর সেই পেয়ারা গাছটা? নতুন পাতার সজীবতায় যে আবার রৌদ্র ছুতে চেয়েছিল সে? তাকে দেখা গেল না। ভাঙ্গা কংক্রিট উঠানটাকে পাকা করা হয়েছে।
কেবল এক কোণে কিসের যেনো শূন্যতা।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।