জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
সরকার বার বার ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করার চেষ্টা করছে। যুক্তিটা হল, ভারতীয় সিনেমা এলে আমাদের সিনেমা হলগুলিতে প্রচুর দর্শক যাবে। প্রদর্শকরা প্রচুর টাকা আয় করবে, তাদের আর সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে হবে না। সুন্দর যুক্তি । কিন্তু ভারতীয় সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মতো অবস্থা দেশীয় সিনেমার নেই।
ফলে ভারতীয় সিনেমার ঠেলায় দেশীয় সিনেমা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে পুরোপুরি। দেশীয় সিনেমা না থাকলে প্রদর্শকরা তো চিরকালের জন্য বিদেশী সিনেমা নির্ভর হয়ে যাবে। তাই ভারতীয় সিনেমা আমদানির আগে আমাদের নিজস্ব সিনেমার উন্নয়ন করতে হবে। প্রকৃত উন্নয়ন। যাতে করে ভারতীয় সিনেমা আমদানি করলেও আমাদের সিনেমা শিল্প টিকে থাকতে পারে।
তবে আমার মতে, নিজের সিনেমা শিল্পকে শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করানোর পর দরজাটা খুলতে হবে পৃথিবীর যে কোন সিনেমার জন্য, কেবল ভারতীয়দের জন্য নয়। তাহলে হবে প্রকৃত উন্নয়ন। তাহলে হবে প্রকৃত প্রতিযোগিতা। তখন দেশের সিনেমা শিল্পেরও উন্নয়ন হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে সেই সিনেমাগুলো যাদের পেছনে থাকবে মেধাবী নির্মাতারা।
আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প উন্নয়নে নিচে ৮ দফা প্রস্তাব দিলাম। মাত্র ৫ বছরেই এই কাজগুলো করা যাবে।
০১. একটি সরকারী ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা। এই ফিল্ম ইনস্টিটিউটে দেশী বিদেশী যোগ্য শিক্ষক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। শুনেছি, এই সরকার একটা আইন পাশ করেছে।
০২. সরকারী খরচে বড় পরিসরে একটা আধুনিক ফিল্ম সিটি তৈরি করতে হবে। এই ফিল্ম সিটিতে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে। পত্রিকায় দেখেছিলাম, গত বিএনপি সরকার গাজীপুরে একটা ফিল্ম সিটির কাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিল। সেটা এখন পর্যন্ত শেষ হয় নাই।
০৩. নতুন নতুন মেধাবী লেখক, পরিচালক ও অভিনেতা খোঁজা দরকার।
প্রতি বছর একটা আয়োজন করে নতুনদের ব্যাপক মাত্রায় সুযোগ দেয়া এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। এই আয়োজনটা প্রতি বছর হওয়া দরকার। 'নতুন মুখের সন্ধানে' নামে এফডিসি একটা অভিনয় শিল্পী খোঁজার কার্যক্রম চালায়। কিন্তু সেটা এত অনিয়মিত যে, ওটার মূল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়ে গেছে।
০৪. মেধাবী নতুন নতুন চলচ্চিত্রকার তৈরির উদ্দেশ্যে সরকারী অনুদান চালিয়ে যেতে হবে।
এখন অনুদান দেয়া হয় ৩৫ লাখ টাকা। এত অল্প টাকা দিয়ে ভালো সিনেমা তৈরি করা সম্ভব না। অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে পুরো ফিল্মের বিনিয়োগ দিতে হবে।
০৫. প্রতিষ্ঠিত প্রযোজক/পরিচালকদের সিনেমা নির্মাণে ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। ভারতসহ পৃথিবীর সব বড় বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত সিনেমা পরিচালক/প্রযোজকরা ব্যাংক ঋণ পান।
০৬. সরকার এই সেক্টরে পিপিপির মাধ্যমে দেশী বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে। বিনিযোগের ক্ষেত্রে যৌথ প্রযোজনা একটা ভালো বুদ্ধি। এর আগেও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং সেগুলো ভালো রকম ব্যবসা সফল হয়েছে।
০৭. সিনেমা হলগুলোকে ভেঙ্গে মার্কেট বানাতে হবে। তবে প্রতিটি মার্কেট হবে বহুতল বিশিষ্ট।
তবে শর্ত থাকবে প্রতিটি মার্কেটের উপর তলায় মাল্টিপ্লেক্স থাকতে হবে। কোন সিনেমা হল মালিক যদি এই রকম মার্কেট করতে চান, তবে অবশ্যই সরকার তাকে ঋণ দেবে। মাল্টিপ্লেক্সসহ নতুন মার্কেট বানালে সিনেমা হলের সংখ্যাও বাড়বে এবং অন্য দিকে হল মালিকরাও মার্কেট থেকে ভাড়া বাবদ প্রচুর আয় করবেন।
০৮. আপাতত ভারতীয় সিনেমা কেবল মাল্টিপ্লেক্সে চলতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, ভারতকেও বছরে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বাংলাদেশী সিনেমা তাদের সিনেমা হলে চলার অনুমতি দিতে হবে।
সারা বিশ্বের সিনেমা তাদের সিনেমা হলে চলতে পারলে আমাদের সিনেমা কেন পারবে না ?
আমাদের সিনেমা শিল্পের উন্নয়ন না করে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি বন্ধ করা হোক।
আমরা ফেসবুকে আমাদের কভার ফটো এবং প্রোফাইল পিক বদলে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নিচের দুটি পিক আপনাদের কভার ফটো ও প্রোফাইল পিক হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের আন্দোলনে আপনারাও একাত্ম হোন।
ইচ্ছে করলে ব্লগের প্রো পিকও পরিবর্তন করতে পারেন। আমি করেছি।
কভার ফটো ও প্রোফাইল পিকের ডিজাইন করেছেন বাংলা চলচ্চিত্র ও পাণ্ডুলিপি গ্রুপের এডমিন অন্তর রায় । তাকে মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানাই।
ছবির লিংক :
http://www.mediafire.com/?6ugt5gqug29sopy
ফেসবুক ইভেন্টে যোগ দিন :
Click This Link
এই একই বিষয়ে আমার পুরোনো লেখা :
ভারতীয় চলচ্চিত্রের আমদানি বন্ধ করা হোক
৩৮ বছর কাটল একটি ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের অপেক্ষায়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।