কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ
জাতিসংঘ মানবিক কার্যক্রমের জন্য অনুরোধ
কালারের সিকিউরিটি চিফ কাকা হাজারের মন বিষন্ন। সালাম দিয়ে বললাম কাকা চোয়ানী ? কেমন আছেন ? হালকা হাসি দিয়ে উত্তর দিল বাসি অর্থাৎ ভাল, বলতে হয় তাই হয়ত বলা।
সিকিউরিটি অফিস একতলা ভবন,ভবনের মাঝে ফাঁকা জায়গা একটা ভবন অতিক্রম করে ভেতর দিকে তার অফিস,বাইরে কালাসনিকভ হাতে পেসমারগার ও অন্যান্য নজরদারি আছে। আমাদের দেখে তার কাছেই সরাসরি নিয়ে আসল তার লোকজন। সোলেমানিয়া থেকে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার কালারের দুরত্ব, ইরানের সাথের সীমান্ত শহর, এর আরেক দিকে সাদ্দাম শাসিত ইরাক। ইরাক-ইরাণ যুদ্ধের বহু বছর পরে গোলার আঘাতের ক্ষত এখনো অনেক ভাংগা কিংবা পরিত্যক্ত ভবনে দেখা যায়। কালার ও কিফ্রি দুটো শহরই ইরান সীমান্তে।
শহর দুটোর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় লোকজন সবসময় ইরাকীদের আক্রমনের ভয়ে থাকে। পাশেই ইরানের সীমান্ত হওয়াতে কোন ঘটনা ঘটলেই ইরাকীরা জুজু বুড়ির ভয়ে কালার ও কিফ্রির কাছাকাছি এলাকায় সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। জনাব হাজার আস্বস্থ করলেন এই বলে যে,গত দুমাস ইরাকীরা তেমন কোন সমস্যা করেনি। তবে তার বিষন্ন মুখে হাসি ও নেই। হাসি থাকবে কি করে এ বছর তেমন ফসল ফলেনি, ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও এখানে আসছে না পরিমানমত। তাই তাদের ভেতর চাপা দুঃখ রয়েছে। দোকান গুলো খালি, বিক্রির মত তেমন কোন জিনিষ নেই। স্কুল বন্ধ, এনজিও কর্মীরা সেই যে কমাস আগে চলে গিয়েছিল এখনো ফিরে আসেনি। বিদেশী কর্মীরা এলে এলাকাতে প্রাণ সঞ্চার হয়,সাহায্য আসে।
আমাদেরকে দ্রুত খাদ্য ও ঔষধ পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানালো নিরাপত্তা প্রধান, চা দিয়ে আপ্যায়ন হলো সাথে বাদাম ও বিস্কিট। অভাব হলেও আন্তরিকতার কমতি নেই।
অফিস থেকে বের হয়ে আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখার জন্য অনুরোধ জানালাম। ইরাকী সীমান্তের কাছে যেতে মানা করল, তা ছাড়া অন্য যে কোন জায়গায় যাওয়া যাবে। বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।
দোকান গুলো প্রায় ফাঁকা। বৃদ্ধরা অলস অবসর কাটাচ্ছে। সাথে সিগারেট চা ও গল্পের আড্ডা চলছে। দেখে মনে হবে অভাব এদের কাবু করতে পারেনি। দুরে মাঠে ধুলোমাখা রংবেরং এর জামা কাপড় পড়ে ছোট ছোট বাচ্চরা খেলছে।
মাঠ খালি ফসল নেই,কিভাবে যে জীবন চলছে বোঝা যায় না। সোলেমানিয়া থেকে কালার ও কিফ্রির একই রাস্তা সমতল ভূমির উপর দিয়ে চলে গেছে। পথে আরাবাত, সাইদসাদিক হালাবজা পার হতে হয়। সাইদসাদিক ও হালাবজা আরেকটা কুর্দি উপদল ইসলামিক মুভমেন্টের দখলে, এখানে পি ইউ কে র কোন খবরদারী নেই। তাদের এলাকা পার হতে হলে তাদের সাথে আলাপ করে অনুমতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।
আমাদের প্রতি চেক পয়েন্টের লোকজন সদয় বলেই মনে হলো।
সাইদ সাদিকে একবার হঠাৎ পি ইউকে ও ইসলামিক মুভমেন্টের মধ্যে মর্টার ফায়ার শুরু হয়ে গেল। দুদিকের সৈন্যরা মর্টার ফায়ার করছে। রাস্তার দুই পাশের মাঠে মর্টারের গোলা পড়ে ধুলো উড়ছে। গাড়ীর লম্বা লাইন লেগে গেছে চেক পয়েন্টে, ড্রাইভার গাড়ী গুলোকে রাস্তা থেকে নীচে নামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
এমন সময় রক্তাক্ত তিন/চার জন পেশমার্গারকে দেখলাম। এরা পি ইউ কের সদস্য, পরিচয় গোপন করে ইসলামিক মুভমেন্টের এলাকায় ঢুকে পড়াতে গোলমাল বেধে গেছে। কিছুক্ষণ পর বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই গোলাগুলি বন্ধ হলো। গাড়ীগুলো আবার গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করল। পথে যেতে দরবান্দিখান লেক ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
এই এলাকা আবার লাল ঝান্ডাধারী কমুনিষ্ট পার্টির দখলে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্লুইস গেইটের উপর লাল পতাকা পতপত করে উড়ছে। একটু উগ্র মনে হলো এদের পেশমারগারদেরকে যাক পরিচয় দিয়ে পার পেয়ে গেলাম। কিছুদুর সামনে এগুলেই রাস্তা দুভাগ হয়ে একটা কালার এর দিকে ও অন্যটা কিফ্রিতে চলে গেছে।
কিফ্রির মেয়র কাকা সেরওয়ান আমাদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালো এখানেও কালার এর মত একই সমস্যা ।
অনেক দিন হলো কোন সাহায্য আসছে না। বাচ্চাদের খাবার নেই। চাকুরী নেই,স্কুল গুলো শিক্ষকের বেতন দিতে পাছে না তাই সব বন্ধ। সাদ্দাম বাহিনীর ভয়ে এরাও সব সময় ভীত থাকে। মেয়র এর অফিস বেশ সুন্দর করে সাজানো।
কার্পেটে মোড়া, নতুন সোফা সেট। বাকলাভা চা,বাদাম দিয়ে আপ্যায়ন করল। আমাদেরকে বলল সবাই এসে খোজখবর নেয়। সমস্যা দেখে যায়,দুঃখ প্রকাশ করে, কিন্তু এখান থেকে চলে যাবার পর আর কোন খোজ খবর নেয় না। কথাগুলো একটু খেদ করেই বলল বলে মনে হলো।
বলবে নাই বা কেন প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য কোন দিনই তারা পায় না। ধুঁকে ধুঁকে বাঁচার জন্য এই সাহায্য অনেকটা প্রহসনের মত। বলল কদিন আগে এক সাহায্য সংস্থার লোকজন এসে তাদের অনেক কিছু দেবার প্রতিশ্র“তি দিয়ে গেছে কিন্তু তা এখনো পৌছায়নি।
আদৌ পৌছাবে কিনা তিনি জানেন না। তার লোকজন তাকে বিব্রত অবস্থায় ও চাপের মধ্যে রেখেছে।
আমাদেরকে জাতিসংঘ মানবিক কার্যক্রমের তরফ থেকে দ্রুত খাদ্য ও ঔষধ পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতে বললেন। আমরাও জানালাম আমরা নিজেরা তো সাহায্য দিতে পারি না। আপনার এই অনুরোধ আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিব। কিফ্রির ছোট্ট হাসপাতালে কোন ডাক্তার নেই, ঔষধ নেই, চিকিৎসা সমস্যাও প্রকট। কি এক অসহনীয় অবস্থায় তারা দিন কাটাচ্ছে তা কাউকেই বোঝাতে পারছে না।
তার কথা হলো আর কতকাল এভাবে জীবন চলবে। অপেক্ষার প্রহর কি শেষ হবে না ? আমরাই বা কি বলব তাকে। হতাশা কিংবা মিথ্যা আশা না দিয়ে ভারাক্রান্ত মনে আমাদের দায়িত্ব পালন করার আশ্বাস দিয়ে বিদায় নিলাম। জানিনা আমরা কতটুকু শান্তনা দিতে পেরেছিলাম। বহু নিরাশার মাঝে আশার একটা ঢেউয়ের স্পন্দন তার বুকে বেজে ছিল কি ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।