কিছু ডাক্তার, নার্স, স্টাফসহ দালালদের দৌরাত্দ্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীরা। দূরদূরান্ত থেকে আগত রোগীদের দুর্ভোগ চরমে পেঁৗছেছে। নার্স, স্টাফ ও দালালরা চান রোগীদের তাদের পছন্দ মতো বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিতে। যাতে করে রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত টাকার একটি বড় অংশ পাওয়া যায়। অন্যদিকে ডাক্তাররা চান রোগী তার ব্যক্তিগত কোনো চেম্বারে দেখা করুক।
এতে করে ডাক্তার লাভবান হচ্ছেন। এভাবে রশি টানাটানিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন রোগীরা। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দালালদের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেলের রোগী পাঠানো হচ্ছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৭ আগস্ট গাজীপুর কলেজ রোড এলাকা থেকে গর্ভবতী ও জন্ডিসে আক্রান্ত উর্মি আক্তার লাইজু (২৪) তার ননদ নাসিমা বেগমকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসে। ওইদিন রাতে জরুরি বিভাগের ডাক্তাররা তাকে ২১২ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন।
ডাক্তাররা তার দেখভাল করে ভর্তি করেন। দুই দিন চিকিৎসার পর তার অবস্থার অবনতি দেখে নাসিমাকে ডাক্তাররা জানান, তার অবস্থা ভালো নয়। তাকে যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। পরে হাসপাতালের আইসিইউ খালি না পেয়ে ওয়ার্ডেরই একজন দালালের খপ্পরে পড়ে ১৯ আগস্ট রাতে তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। রাতেই ওই দালাল ধানমন্ডির রেনেসাঁ হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যান।
পরে আইসিইউতে রাখাসহ ওই রাতে রোগীর ৩৭ হাজার টাকা বিল করেন। রোগীর লোকজন বিল দেখে রীতিমতো হতবাক হন। হাসপাতালের স্টাফদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষ ২০ আগস্ট সকালে রোগীকে বের করে দেয়। তাকে পুনরায় ওইদিনই ঢাকা মেডিকেলে সকাল ৯টার দিকে ভর্তি করানো হয়।
পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা যায়, ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাইফুল নামে এক ওয়ার্ডবয় সম্প্রতি কলাবাগানের একটি হাসপাতালের এক দালালের সঙ্গে ১০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তার কাজ হচ্ছে ওই ওয়ার্ডের রোগীদের ওই হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠাবে। এ ছাড়া আবুল হাশেম, চায়না কামাল, আয়নাল, সাইফুল, শিপন, কবির, কালাম, আক্তার, আসলাম, আউয়াল, মুকুল ফরিদা, লাইলী বেগম, বেবি, নার্গিস, নাসিমাসহ ঢাকা মেডিকেলে প্রায় শতাধিক দালাল চক্র সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। ডাক্তার, নার্স, স্টাফদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশে রোগীদের বাগিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে।
ঢাকা মেডিকেলকে ঘিরে চাঁনখারপুল, আরাফাত, মৌসুমী জেনারেল হাসপাতালসহ অর্ধশতাধিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছে এমন কয়েকজন রোগীসহ তাদের স্বজনরা অভিযোগ করেন, ডাক্তার ওষুধ লিখে দিলে তা সহজে পাওয়া যায় না। নার্সদের কাছে চাইলে তারা বাইরে থেকে কিনে আনতে বলেন। ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ওষুধ চালানোর জন্য ডাক্তারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
যার কারণে ডাক্তাররা তাদের ওষুধই প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন। এসব সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে ডাক্তাররা আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন। ফলে ওই সময় আর রোগী দেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এসব নিয়মবহিভর্ূত কর্মকাণ্ড সবার সামনে ঘটতে থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন হরিদাস সাহা প্রতাপ জানান, রোগীদের বাগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ ও আনসারদের দৃষ্টি আকর্ষণী দেওয়া আছে।
এত বড় হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণ খুবই ডিফিকাল্ট। তারপরও দালালদের দৌরাত্দ্য কমাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। রোগী বাগিয়ে নিতে ডাক্তাররা জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ডাক্তারদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। রোগীর দর্শনার্থী সংখ্যা কম থাকলে দালালদের শনাক্ত করা সহজ হতো। কিন্তু একজন রোগীর পেছনে তার স্বজন গড়ে ৫-৬ জন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।