ব্যস্ত শহর ঠাঁস বুনটের ভিরে আজো কিছু মানুষ স্বপ্ন খুজে ফিরে........
মোবাইল স্ক্রীনে private number ভেসে উঠায় অনেকটা নিশ্চিত ভাবেই রিসিভ করি,ওপাশে লাবন্য হবে ভেবে। কারন আমাকে দেশের বাইরে থেকে আর কেউ কল করে না। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো বাচ্চার কান্না।
কিছুক্ষন পর সেই অম্লান হাসি হেসে লাবন্য বলে উঠল,আমার মেয়ে। ঐদিন তো ঘুমিয়েছিল তাই ওর হাসি কান্না কোনটাই শুনাতে পারিনি।
তাই আজ জেগে থাকতে কল দিলাম।
হঠাত গম্ভির। আবারো অভিমান গলায় নিয়ে বলে উঠল,তুমি এত ভীতু ছিলে কেন?
আমি সাধারনত ফোনে যাদের সাথে প্রয়োজনের বাইরে লম্বা আলাপ করি,তারা সবাই জানে অধিকাংশ সময় কথা আমিই বলি। কথা বলতে আমার ভালোই লাগে। কিন্তু এই একজন যার সাথে আমি শ্রোতা।
তাই স্মিত হাসি ছাড়া কিছুই বলার ছিলনা তার ঐ অভিমানের জবাবে।
দু এক মাস পর পর লাবন্যের ফোন পাই। ও এখন ইটালীতে আছে,গত ডিসেম্বর তার কোল আলো করে একটা মেয়ে এসেছে। আমাকে অবাক করে দিয়ে কি সারল্য ভরা গলায় বলতে থাকল,জানো মেয়েটা নাকি আমার মত হয়েছে সবাই বলে।
আমি যখন বললাম ওমা সেতো ভালো কথা!মায়ের সৌন্দর্য পাওয়া মেয়ের জন্যতো ভাগ্যের বিষয়।
এক গাল হেসে বলে,জানো আমার মেয়ে আমার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে ।
এই এক ঘেয়েঁ জীবনে ওর এই অপ্রত্যাশিত কল অনেক বেশি ভালোলাগা হয়ে দাড়িয়েছে এখন।
এই তো বছর দেড়েক আগের কথা। হঠাত এক সন্ধ্যায় অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল,রহস্য ভরা কথা। মুঠোফোনে অচেনা রমনীর সাথে কথা বলার চেয়ে ওর পরিচয় জানিতেই আমি বেশি তৎপর ছিলাম।
কারন কোন এক অজানা কারনে খুব অস্বাভাবিক লাগছিল সব। দ্বিতীয় দিন যখন অনেক গুলি ক্লো দেয়ার পর,দৃঢ় গলায় বল্লাম...লাবন্য?
দুদিনের সকল উচ্ছলতা এক মুহুর্তে থেমে গেলো।
সব টুকু অভিমান গলায় তোলে,
- মনে আছে তাহলে নামটা?
- থাকবে না কেন!
- তবে আমাকেই কেন খুঁঝে বের করতে হলো।
- তুমি হারিয়ে গেছো,এটা বিশ্বাস করার তো কোন কারন ছিল না!
- কত না জায়গায় তোমার ফোন নাম্বার খুঁজেছি,তোমার স্যার,পুরাতন বন্ধু যাকে পেয়েছি সবার কাছে। কায়েশ,মানে আমার ছোট ভাইটা।
মনে আছে ওর কথা?ওকে দিয়ে এখানে ওখানে খুঁজিয়েছি।
মাকে বলেছি আমি তোমার নাম্বর না পেলে ইটালী যাবো না। তোমার সাথে যে আমাকে দেখা করতেই হবে।
দীর্ঘ ৭ বছর পর অপ্রত্যাশিত ভাবে লাবন্য এ যা বলছিল আমার কাছে তখন ঘোর মনে হচ্ছিল। ৭ বছর আগে সেই কৈশোরের ভালোলাগা,বন্ধুদের অনেকেই তা নিয়া মস্করা আর আড্ডার বিষয় বানাতো, সেইতো ছিল স্মৃতি!কোন দিন সাহস করে কিছুই বলা হয়নি।
কারন আমি কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছি আর সে না করেছে তেমনটি যে কখন হয়নি!বরং আমি চাওয়ার আগে আমার কাছেই ছেলে মেয়ে সবাই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে। সেখানে এই মেয়েটি নিজেকে তো আড়াল করে রাখতই,আর যে কবার চোখ পরেছে তাতে ভেবছিলাম আমাকে পাশ কাটাতেই চাচ্ছে। তাই নিজের ঈগো আমাকে আর এগুতে দেয়নি। কিছু দিন পর স্বাভাবিক নিয়মেই হারিয়ে গেল সরকারী চাকুরে বাবার এই মেয়েটি।
-অবশেষে তোমার এক বন্ধুর কাছ থেকে নাম্বারটা জোগার করতে পারলাম।
-লাবন্য আমার কাছে তো সবই অবিশ্বাস্য লাগছে!
-লাগবেই তো,ভীতুদের কাছে এমনটা মাঝে মাঝে মনে হয়!পারতে না সেদিন এক বার সামনে দাঁড়াতে?একবার বলতে?
-ওমা তুমি কি সেই পরিবেশ দিয়েছো?সব সময় তো আমার উপর চটে আছো সেই ভাব করে থাকতে!
-তা না হয় থাকতাম,কিন্তু তোমাকেই যে ভালোবাসতাম বুঝলে না কেন!আমি তো জানতাম তোমার কথা!তাই তো এত দিন পরে হলেও খুঁজে বেড় করেছি...
যাকে প্রথম ভালোবেসেছি,তাকে একবার হলেও বলে যেতে চাই...ভালোবাসি...
যা জানা গেল,পারিবারিক বন্ধু ইটালিয়ান ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে মাস খানেক আগে অনলাইনে। এখন ইটালী নিয়ে যাবার পালা। কোন ভাবেই খুঁজ পাওয়া যায়নি আমাকে তখন। কিন্তু দেশ ছাড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে শেষ চেষ্টায় খুঁজে এই পাওয়া।
-প্লিজ আমার সাথে দেখা করো।
-হুম তা ত করবই।
কিন্তু আমি পারিনি। তার টানা ১ মাসের চলা কথপোকথন আমাকে আবারো ভীতু করে তুলেছিল। নতুন জীবনে নাম লিখিয়ে ফেলা লাবন্যকে তার নতুন জীবনে চলতে শুরুর আগে আমি চাইনি আর এলোমেলো করতে। তাই আমার সাথে না দেখা করেই আবারো অভিমান নিয়ে চলে যায় ইটালী।
এখন যখন কথা হয়,আর শুনি স্বামী আর নতুন সন্তান নিয়ে ভালো আছে,হাসতে পারছে সেই লাবন্য ঝরা হাসি খুব ভালো লাগে।
আগামী জুনে দেশে ফিরবে লাবন্য...
এবার আমি অপেক্ষাতে আছি,কবে আসবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।