আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ান ইলেভেন (পঞ্চম পর্ব)

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।
ওয়ান ইলেভেন (চতুর্থ পর্ব) দূর থেকে একটা হট্টগোলের আওয়াজ ভেসে আসছে আমার কানে। শায়েস্তা খাঁর তোরণের ও পাশ থেকে এই আওয়াজ আসছে। একসাথে অনেক মানুষের শোরগোল, হৈ-চৈ, চীৎকার, কান্নাকাটির আওয়াজ পাচ্ছি।

কারও মুখ দিয়ে দোয়া-দরুদ এবং কলেমা পাঠও শুনতে পাচ্ছি। তোরণ বরাবর একসাথে অনেকগুলো কফিন এসে জড়ো হয়েছে। আমার সাইবর্গ আই দুটো দ্রুত ফোকাস ফেলতে থাকে কফিনগুলোর উপর। আরে! এ যে দেখি ৬ টি কফিন! এগুলো এই তোরণের কাছে কেন! তোরণ দিয়ে বের হয়ে যাবে নাকি! প্রশ্নগুলো আমার নিউরনে ঘুরপাক খেতে থাকে। ওয়ান ইলেভেনের পর গণতন্ত্রের বিজয় শেষে ছয় জন সামরিক উর্দি পরা ঘোড় সওয়ার এই তোরণ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল।

তারপর সবাই শুধু প্রবেশই করেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, দ্রব্যমূল্য সন্ত্রাসী, জেলখাটা কয়েদী, ঘুষখোর সুবিধাবাদী সবাই এই তোরণ দিয়ে প্রবেশ করেছে। এই দীর্ঘ দিনে আর কাউকে বের হতে দেখিনি। আজ অনেকদিন পর আবার বের হওয়ার জন্য ছয়টি কফিন তোরণের কাছে এসে জড়ো হয়েছে। কিন্তু এই কফিনগুলোতে কাদের লাশ আছে? আমার স্থায়ী মেমোরিতে নিশ্চয়ই এতক্ষণে এ লাশগুলোর ব্যাপারে সমস্ত তথ্য এসে জমা হয়েছে।

আমি এক নিমিষেই দৈনিক পত্রিকাগুলোর আজকের সংস্করণ উল্টেপাল্টে দেখি। "বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর। " বড় বড় শিরোনামে লাল অক্ষরে ছাপা সংবাদ শিরোনামটি দেখে আমি চমকে উঠি। আবারও দৃষ্টি দেই কফিনগুলোর দিকে। আচ্ছা আমার কি দৃষ্টি বিভ্রম ঘটছে? কিন্তু তা তো হওয়ার কথা নয়।

কারণ আমার অর্গান অব সাইট বা দৃষ্টি শক্তি তো প্রোগ্রামিং করা। এখানে ভুল হওয়ার অবকাশ নেই। তাহলে আমি ছয়টি কফিন দেখছি কেন? আমি আবারও গুণে দেখি। নাহ্, ঠিকই তো আছে। কফিনতো ছয়টি! পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আর আমি কফিন দেখছি ছয়টি! আমার দৃষ্টি বিভ্রম না ঘটে থাকলে নিশ্চয়ই এখানে অন্য কারও কফিন আমি দেখছি।

কিন্তু সেটি কার! ভাবতে গিয়ে আমার সাইবারনেটিক অর্গান গুলোর মধ্যে আবারও জট লেগে যায়। নিউরনগুলো অস্থিরভাবে ছুটোছুটি করতে থাকে। ঠান্ডা মাথায় আমি আবারও ভাবতে বসি। প্রথম পাঁচটি কফিনের মাঝে যে পাঁচজন খুনির লাশ আছে প্রথমে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করি। আমার কাছে এটি এক মুহূর্তের ব্যাপার।

প্রত্যেকের বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড স্ক্যান করে নিমিষেই সবার পরিচয় নিয়ে নেই। প্রথম পাঁচটি কফিনে যথাক্রমে বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং একেএম মহিউদ্দিন এর লাশ। বাকি কফিনটিতে কার লাশ তা দেখার জন্য আতিপাঁতি করে খুঁজেও কোন আইডি কার্ডের সন্ধান পাই না। এবার আমি পুরো দশ মাত্রার দৃষ্টিশক্তি দেই কফিনের উপর। কিন্তু নাহ্।

আমার দৃষ্টিশক্তি সর্বশেষ এই কফিনের দেয়ালে আঘাত খেয়ে ফেরত আসছে। দেয়াল ভেদ করার ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্সর প্রযুক্তি আমার সাইবর্গ আই দুটোতে থাকলেও আমি কফিনের দেয়াল ভেদ করে দৃষ্টি ভিতরে দিতে পারছি না। আমার প্রচণ্ড জেদ চেপে যায়। সর্বশেষ এই কফিনটির রহস্য আমাকে উদঘাটন করতেই হবে। কফিনগুলো কাঁধে নিয়ে খুনীদের স্বজনরা একে একে কফিন নিয়ে বের হয়ে আসছে।

আমার সাইবার দৃষ্টির সামনে দিয়েই সবাই যাচ্ছে। কেমন একটা হীনম্মন্যতার মনোভাব স্বজনদের চোখে মুখে। আবার অনেকের চোখে মুখে জাতিকে ৩৪ বছরের লজ্জা থেকে নিস্কৃতি দেবার আনন্দও দেখতে পাচ্ছি। আমি প্রতিটি কফিনের লাশের নিউরনগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাই। আমার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো ক্রমাগত সংকেত পাঠিয়ে যেতে থাকে মৃত লাশগুলোর মস্তিস্কের নিউরনে।

ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা খুনিদের মস্তিষ্কে কোন নিউরনই জীবিত নেই। তাই খুনীদের মস্তিষ্ক থেকে কোন প্রত্যুত্তর আসছে না। আমার তা দরকারও নেই। কিন্তু আমার ভাবনায় সর্বশেষ কফিনটির কথাই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে গণতন্ত্রের লাইনচ্যুত ট্রেনটি যখন লাইনে উঠে চলতে শুরু করেছিল সেদিন এই তোরণ দিয়েই ছয় জন সামরিক উর্দি পরা ঘোড় সওয়ার বের হয়ে গিয়েছিল।

আজ আবার ছয়টি কফিন তোরণ দিয়ে বের হচ্ছে। আজ ২৯ জানুয়ারি ২০১০ সাল। খুনীদের ফাঁসিতে ঝুলানো নিথর লাশগুলো কফিনে করে এই তোরণ দিয়ে বের করে নেওয়া হচ্ছে। তাদের শেষ আশ্রয়স্থল জন্মভূমিতেই তাদের দাফন করা হবে। স্বজনরা চোখের পানি মুছতে মুছতে লাশ কাঁধে নিয়ে বের হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।

ছয় নাম্বার কফিনটিও আমার চোখের সামনে দিয়ে বের হয়ে চলে গেল। আমি কিছুতেই এই কফিনের ভিতরের রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি। ঢাকা নগরীর পশ্চিমে শায়েস্তা খাঁর তোরণের এ পাশে থেকে আমার ভাবনায় শুধু এই বিষয়টি ঘুরতে থাকে। সর্বশেষ এই কফিনে কি আছে! কেন আমার দৃষ্টি কফিনের দেয়ালে আঘাত খেয়ে বার বার ফিরে আসছে! কি রহস্য আছে এই ছয় নাম্বার কফিনে! আমি ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসি। ভাবতে ভাবতে আমি ৩৪ বছর আগের সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই।

সর্বশেষ এই কফিনটির রহস্য জানতে হলে আমাকে ৩৪ বছর আগের হিসাব নিকাশগুলো খুব সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। ছয় নাম্বার কফিনের রহস্যের সন্ধানে আমি দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তে আমার ভাবনা শক্তিকে কাজে লাগাই। চলবে...
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.