আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেটে গেছি বিরান পথে! আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প; কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়!
রোবটের ভাইরাস
==============================
নিয়নের প্রচন্ড মন খারাপ। ধানমন্ডির ব্যস্ততম রাস্তা দিয়ে ও হাঁটছে। তারপরও ওর নিজেকে ভীষণ একা মনে হল। মনে হবার কারণও আছে, সম্ভবত ও একমাত্র মানব যে আজকের এই আধুনিক যুগে পায়ে হেঁটে পথ চলছে। নিয়ন ওর পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যাওয়া গাড়িগুলোর দিকে কিছুক্ষনণ তাকিয়ে থাকল, গাড়ির দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে যখন হাতের দিকে মনোযোগ দিল ততক্ষণে হাতের কোকটি শেষ হয়ে গেছে।
ফাঁকা ক্যানটি ও ফুটপাতের ওপরে ছুঁড়ে দিল, তারপর দৌড়ে গিয়ে সেটিতে পা দিয়ে কিক করল। জীবনে প্রথম ও কোন কিছুতে বোধহয় এভাবে কিক করল। এর আগেও অবশ্য এই মজা ও পেয়েছে, কম্পিউটারে ফিফা গেমস্-এ। ক্যানটি ছুটে গিয়ে একটি ল্যাম্পপোস্টে আঘাত করল, ফলে সেখানে বিদ্যুৎ স্পার্কিং হল। নিয়ন যদিও জানে কাজটি ঠিক হয়নি তবুও ওর মাঝে কোন অপরাধ বোধ নেই।
ও কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে যখন চলে যাবার জন্য হাঁটা ধরল ঠিক তখন ওর পাশে একটি দ্রুতগামী কার এসে দাঁড়াল, কার থেকে একজন লোক নেমে এসে বলল, “বোধহয় আপনি অসুস্থ, আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারি?”
“আমি ঠিক আছি; ধন্যবাদ। ”
“বোধহয় আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ। ” এই প্রথম নিয়ন লোকটির দিকে ভালভাবে খেয়াল করল, ওর আগেই বোঝা উচিত ছিল, লোকটি আসলে উচ্চ প্রোগ্রামের রোবট। এবং এটি বুঝতে পেরেই সম্পূর্ণ অকারণে রেগে গেল ও। এই রোবটগুলোই যত নষ্টের মূল।
তারপরও ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার কোন সমস্যা নেই, আপনি আপনার কাজের সময় শুধু শুধু নষ্ট করছেন। ”
“আপনাকে সাহায্য করতে পারলে খুশি হতাম। ”
“আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে আপনাকে খুশি করতে পারছি না। ” এরপর রোবটটি আবার গাড়িতে চড়ে চলে গেল। নিয়ন শিওর হয়ে গেল এখনও ওর ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
এই কথা মনে হতেই সে স্বাভাবিক হয়ে গেল, তার এমন কিছু করা উচিত নয় যেন নিরাপত্তা কর্মীরা ওকে ধরে জেলে পুরে দেয়। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে। ও হেঁটে হেঁটে ওর নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে এল। অ্যাপার্টমেন্টটি এখনও তেমনি ভাবে গোছানো আছে, চারমাস আগে যেমনটি দেখে গিয়েছিল, শুধু ছাদের কোণায় কিছু মাকড়শার জাল ধরেছে। নিয়ন ওর ম্যাসেজ রিসিভারটি অন করে দিতেই হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে বিভিন্ন চিত্র ভেসে উঠল যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়; পণ্যের বিজ্ঞাপন।
বিজ্ঞাপন শুনতে শুনতে ও ঘরের মাকড়শার জাল গুলো পরিস্কার করল। এই কাজটি করতে গিয়ে সে আবিষ্কার করল ওর প্রতিটি রুমে খুব গোপনে একটি করে ছোট ক্যামেরা লুকানো আছে। কাজ শেষে নিয়ন রিসিভারটি অফ করে বাথরুমে এসে পুরো আধাঘন্টা শাওয়ারে ভিজল। তারপর ওর নিজের কম্পিউটারটি নিয়ে বসল, বসার আগে মনিটরটি ক্যামেরার বিপরীতে ঘুরিয়ে নিল। এই কম্পিউটারে ওর নিজস্ব কিছু গবেষণাপত্র আছে।
গোপন পাসওয়ার্ড প্রবেশ করাতে গিয়ে দেখল কেউ এটি আগে খোলার চেষ্টা করেছে। বেশ কয়েকবার ভুল পাসওয়ার্ড দেয়ার ফলে কম্পিউটার নিজে থেকে পাসওয়ার্ড পাল্টে নিয়েছে। তাই নিয়নকে দ্বিতীয় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হল। ডকুমেন্টটি ঠিক আছে দেখে কম্পিউটারটি বন্ধ করে দিয়ে নিয়ন বেডরুমে এসে শুয়ে পড়ল এবং সাথেসাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
যখন নিয়ন ঘুম থেকে উঠল, তখন ওর মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
তবু নিয়ন খুশি আনেকদিন পর এভাবে শান্তিতে ঘুমিয়েছে, ঘুমটা একটু বেশী হয়ে গেছে তাই মাথাটা ঝিমঝিম করছে। ঘুম থেকে উঠে ওর ট্রেডীর কথ মনে পড়ল। ট্রেডী ওর নিজের তৈরী একটি রোবট। ওর ঘরে ফেরা ১২ ঘন্টা হয়ে গেছে অথচ ট্রেডীর কোন দেখা নেয়, ট্রেডীকে শেষ পর্যন্ত ড্রয়িংরুমে শোফার পেছনে পাওয়া গেল অচল অবস্থায়। নিয়ন খুব আশ্চর্য হল, ট্রেডীকে ও নিজের হাতে তৈরী করেছে।
কেউ ওকে থামিয়ে না দিলে সে কখনও অচল হতে পারেনা। কারন ট্রেডী বাইরে বের হলে সৌরশক্তি ব্যবহার করে আর ঘরে থাকলে স্বয়ংক্রিয় অবস্থায় বিদ্যুৎ গ্রহণ করে। নিয়ন ট্রেডীকে চালু করে দিল, ট্রেডী যান্ত্রিক কন্ঠে বলে উঠল,
“স্যার আমার পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ ছিল, আপনাকে নতুন করে টাইম প্রদান করতে হবে। ”
“ট্রেডী তুমি কি আমার কম্পিউটারের পাশে গিয়ে বসবে, তোমাকে একটা জিনিস দেখানো দরকার। ”
“আপনি বললে অবশ্যই স্যার।
” ট্রেডী কম্পিউটারের পাশে এসে বসতেই নিয়ন তাকে অচল করে দিল, তারপর কম্পিউটার অন করে কম্পিউটারের সাথে ডাটা কেব্ল দিয়ে যুক্ত করে দিল। ওর বুঝা হয়ে গেছে পুরানো প্রোগ্রাম আউট করে কেউ ট্রেডীর মেমরিতে নতুন প্রোগ্রাম করেছে। কারন ট্রেডী নিয়নকে স্যার ডাকছে। নিয়নের এই জিনিসটা কখনই পছন্দ হত না তাই সে ট্রেডীকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছিল যেন ট্রেডী ওকে ওর নাম ধরে ডাকে। নতুন প্রোগ্রাম ইন্সটল করার পূর্বে নিয়ন ট্রেডীর ফাইলগুলো দেখে নিল।
ফাইল দেখতে গিয়ে নিয়ন বেশ কিছু নতুন ফাইল দেখতে পেল। সেই ফাইলগুলো নিয়ন কম্পিউটারে কপি করে রেখে ট্রেডীকে ফরমেট করল এবং তারপর ওর নিজের প্রোগ্রামগুলো ইন্সটল করল। ইন্সটল শেষে নিয়ন ট্রেডীকে চালু করতেই ট্রেডী বলে উঠল,
“গুড মরনিং নিয়ন। এখন সকাল দশটা বাজে, তোমার কফি পানের সময়। তোমাকে কি এক মগ কফি বানিয়ে দেব।
” নিয়ন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল, এই চার মাসে ওর অনেক অভ্যেস চেঞ্জ হয়েছে যা ট্রেডীর জানার কথা নয়।
“না ট্রেডী তার প্রয়োজন নেয়। তুমি আমার কমিউনিকেশন সিস্টেমটা একটু চেক করে দেখ সেখানে কোন আড়ি পাতার যন্ত্র থাকতে পারে। থাকলে তা অচল করে দেবে। ”
“তোমার এমন ধারনা কেন হল? কেউ তোমাকে ফলো করছে?”
“এটা আমার ধারনা নয়, বিশ্বাস।
যাও কাজে লেগে পড়। ”
“ও-কে নিয়ন। ” কিছুক্ষনের মাঝেই ট্রেডী ফিরে এল। তার হাতে একটি ছোট্ট ট্রান্সমিটার।
“নিয়ন তোমার ধারনাই সত্য।
”
“ওখানে একটি ভিডিও ক্যামেরা আছে। ওটা অচল কর। ” ছাদের কোনা দেখিয়ে বলল নিয়ন। ট্রেডী এবার কোন কথ না বলেই কাজে লেগে গেল। নিয়নও যখন শিওর হয়ে গেল ওর ঘরে আর কোন আড়ি পাতার যন্ত্র নেয় তখন কম্পিউটারে ওর গোপন ফাইলটি খুলল।
এই ফাইলটি কোন সাধারন ফাইল নয়। এখানে ওর বেশ কিছু গবেষণা পত্র আছে। নিয়ন সেগুলো আবার প্রথম থেকে পড়তে থাকে এবং কিছু জায়গা পয়েন্ট করে রাখে। হঠাৎ ট্রেডী ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।
“ট্রেডী কিছু বলবে?”
“ হ্যাঁ।
সামনের ফ্লাট থেকে তোমাকে কেউ পর্যবেক্ষণ করছে। ”
“জানানোর জন্য ধন্যবাদ। ওখান থেকে কি আমার মনিটর দেখা যাচ্ছে? কিংবা কি বোর্ড? মানে আমি কী কমান্ড করছি এটা কি দেখা যাচ্ছে?”
“শক্তিশালী ক্যামেরা, স্পষ্ট দেখতে পাবার কথা কিন্তু তুমি তীর্যকভাবে বসে আছ তাই দেখতে সমস্য হচ্ছে। ” “ঠিকআছে কমিউনিকেসন সিস্টেমটা মুল তথ্য কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়েছে নাকি দেখ এবং ভালভাবে দেখে নিও যেন হলোগ্রাফিক চিত্র বাইরে থেকে দেখতে না পাওয়া যায়। ”
“তোমাকে একটি প্রশ্ন করার আছে।
”
“কী প্রশ্ন?”
“তুমি কি বে-আইনী কিছু করছ?” প্রশ্ন শুনে নিয়ন কিছুক্ষন নীরব থাকে তারপর বলে,
“না, আমি বে-আইনী কিছু করছি না। ”
“তবে এত গোপনীয়তা কেন?”
“তুমি সেটা বুঝবে না। কিছু লোক মানব সভ্যতা ধ্বংশ করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দাঁড় করার চেষ্টা করছি। ”
“তুমি নিরাপত্তা বিভাগে যোগাযোগ করছ না কেন?”
“তুমিতো জান আইন নির্দিষ্ট ধারায় চলে; তাই কোন বিশিষ্ট ব্যাক্তির নামে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করা যায় না।
”
“আমি দুঃখিত নিয়ন। শুধু শুধু তোমার প্রতি অভিযোগ করেছি। ”
“এতে দুঃখিত হবার কিছু নেই। আমি তোমাকে এমন ভাবে তৈরী করেছি যেন তুমি আমার ভুলগুলো বুঝতে পার। তুমি অবশ্যই তোমার প্রোগ্রামের বাইরে যেতে পারনা।
যাও কমিনিউকেশন সিস্টেমটা অন কর। ” ট্রেডী কমিউনিকেশনটা অন করতেই নিয়ন সরাসরি ইতিহাস ফোল্ডারে গিয়ে সার্চ দিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই পর্দাতে ভেসে উঠল অনেক বড় একটা চার্ট। নিয়ন বিড়বিড় করে বলল,
“সর্বনাশ! এত লোক বিভিন্ন সময়ে মানব সভ্যতা ধ্বংশের চেষ্টা করেছে?” এরপর নিয়ন চার্টটা ভালভাবে দেখতে লাগল। এক জায়গায় এসে থেমে গেল ও।
দশ বছর আগে এরিখ নামে ইতিহাসের এক প্রফেসর তার বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত অবস্থায় দুইজন পদার্থবিদকে হত্যা করে। তার মতে ধ্বংসাত্মক সভ্যতা সৃষ্টিতে পদার্থবিদরা দায়ী। এই হত্যাকান্ডে তার একজন ছাত্র জড়িত ছিল বলে ধারণা করা হয় কিন্তু তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপর নিয়ন এরিখ নামের সেই ইতিহাসবিদ সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারে এরিখের মৃত্যুদন্ড হয়, এবং এরিখের সেই ছাত্রের নাম জুনিয়র। জুনিয়র সম্বন্ধে বেশি কিছু জানা সম্ভব হল না।
শুধু জানা গেল এরিখের মৃত্যুর পর জুনিয়র ইতিহাস ছেড়ে ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড মেকানিক্যাল সাইন্স নিয়ে লেখাপড়া করে। এরপর নিয়ন ইলেক্ট্রনিক্সের বিভিন্ন ইতিহাস পড়া শুরু করে। ও এক জায়গায় এসে অবাক হল, এখানে লেখা আছে একবিংশ শতাব্দীতে সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়াররা এক ধরনের সফ্টওয়ার তৈরী করত যা কম্পিউটারের স্বয়ংক্রিয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা নষ্ট করে সম্পূর্ণ নতুন এবং কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর প্রোগ্রাম তৈরী করত। এই সব সফ্টওয়ারের নাম দেয়া হয় কম্পিউটার ভাইরাস। এইটুকু পড়ে নিয়ন দ্রুত তার কম্পিউটারটা অন করল।
ট্রেডীর মেমরিতে যে নতুন ফাইল পাওয়া গেছে তা অবশ্যই ভাইরাস। নিয়ন অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, কম্পিউটারে বিভিন্ন জায়গায় সেই ফাইলটি ছড়িয়ে গেছে। নিয়ন একটি ফাইল রেখে বাকিগুলো ডিলিট করতে গিয়ে দেখল ভাইরাস ডিলিট হচ্ছে না। নিয়ন কম্পিউটার অফ করে দিয়ে আবার মূল তথ্যকেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করল। সেখান থেকে এন্টিভাইরাস তৈরী করার ব্যাপারে কিছু ইন্সট্রাকশন নিয়ে কাজে লেগে পড়ল।
নিয়ন দিনরাত এক করে দিল এন্টিভাইরাস তৈরী করতে, শেষ পর্যন্ত সফল হল। এন্টিভাইরাসের একটি ক্রিস্টাল নিয়ে বের হয়ে পড়ল, এই কয়েকদিনে ওর ওপর যেরকম ধকল গেছে তাতে ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও মৃত্যুপুরী থেকে উঠে আসা কেউ। ওর জামার ভেতরে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র লুকানো আছে, একটি নিরাপত্তা রোবটকে অচল করে এটি সংগ্রহ করতে হয়েছে। রোবটটির মেমরীসহ প্রসেসরটিও ওর পকেটে, কিছুদুর গিয়ে প্রসেসর ও মেমরিটি ফেলে দিল। এই জিনিটি বের করে দেওয়ার কারণে ও মোটামুটি কয়েক ঘন্টার মত নিরাপদ।
নিয়ন সরাসরি তথ্যকেন্দ্র এক্স-৩৭ এ এসে ঢুকল, এখান থেকেই পৃথিবীর সকল সরকারী রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনেক বুদ্ধি করে মূল প্রসেসরের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারের কাছে পৌঁছল ও। তারপর একের পর এক পাসওয়ার্ড ভেঙ্গে দিয়ে ক্রিস্টালের এন্টিভাইরাস লোড করে দিল। শেষ পাসওয়ার্ড ভাঙতে গিয়ে ভুল করে দিল, ফলে কর্কষ শব্দে এলার্ম বেজে উঠল। নিয়ন দ্রুত আবার পাসওয়ার্ড প্রবেশ করিয়ে ইন্টার চাপ দিল।
ঘটাং করে পেছনের দরজাটা খুলে গেল, নিয়ন এমনভাবে পেছন ফিরে দাড়ালো যেন দরজা থেকে মূল কম্পিউটার দেখা না যায়। ওর দিকে একসাথে অনেকগুলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তাক করা আছে, এগুলোর যেকোন একটি গুলিই নিয়নের খুলি উড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। ভিড়ের ভেতর থেকে একটি লোক বলে উঠল,“ তুমি কে? এখানে কী করছ? তুমি পাসওয়ার্ড ভাঙতে চেষ্টা করেছিলে কেন?’
নিয়ন মনে মনে ভাবল,” যাক অন্ততঃ এরা ভেবেছে আমি পাসওয়ার্ড ভাঙতে পারিনি। ” একটি লোক ছুটে এল। নিয়ন একে চিনতে পারল, জুনিয়র।
জুনিয়রকে দেখে নিয়ন শান্ত ভাবে বলল,“হ্যালো জুনিয়র হাউ আর ইউ?” জুনিয়রও নিয়নকে চিনতে পেরে চিৎকার করে উঠল, “ পাগলটাকে এক্ষুণি হত্যা কর। ” কয়েকটি ঘটনা একসাথে ঘটে গেল, কম্পিউটারে টিক করে একটি শব্দ হতেই নিয়ন এন্টার চাপ দিল। ফলে রোবটগুলির আঙ্গুল ট্রিগারেই থেকে গেল, কারন কম্পিউটার রি-স্টার্ট নিচ্ছে। নিয়নের ভাগ্য ভাল জুনিয়র ছাড়া উপস্থিত সবাই রোবট ছিল এবং জুনিয়রের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। নিয়ন জামার ভেতর থেকে ওর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা বের করে জুনিয়রের দিকে তাক করে বলল,“ বুঝতেই পারছ এখানে কী ঘটেছে? তুমি ধরা পড়ে গেছ জুনিয়র।
” জুনিয়র বড় বড় চোখে নিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিয়ন জুনিয়রকে বেঁধে ফেলে, নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে, এখন সারা পৃথিবী নিয়নকেসহ এই ঘরটিকে দেখতে পাচ্ছে। নিয়ন বলল, “পৃথিবীবাসী নিশ্চয় অবাক হয়ে আপনার প্রিয় রোবটটির দিকে তাকিয়ে ভাবছেন এটা কীভাবে অচল হল। আমি বলছি, এক্স-৩৭ তথ্যকেন্দ্র থেকে এগুলোকে অচল করা হয়েছে। এর কারন জানতে আপনাদের কিছুক্ষণ ধর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
এটা আপনারা অবশ্যই করবেন মানবসভ্যতা রক্ষার খাতিরে। ”
পরিশেষ
এরিখের মৃত্যুর পর জুনিয়র ইলেট্রনিক্স নিয়ে অনেক লেখাপড়া করে। যখন ওকে তথ্যকেন্দ্র এক্স-৩৭ এর দ্বায়িত্ব দেয়া হয়, তখন ওর স্বপ্ন অর্ধেক পূরণ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের সহকারী হিসাবে সকল জায়গাতেই রোবট ব্যবহার করা, আর এই রোবটকে তখন কাজে লাগিয়ে জুনিয়র বিজ্ঞানীদের হত্যা করতে শুরু করে। রোবটগুলোর মাঝে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়ে জুনিয়রের শুধু মজা দেখা ছাড়া কাজ থাকে না।
ভাইরাস চালূ হলে কিছু উলটপালট আচরণ শুরু করে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা সেই দিকে বিশেষ নজর দিতেন না। কিন্তু নিয়নের এক বিজ্ঞানী বন্ধু ব্যাপারটা ধরতে পারেন এবং নিয়নকে জানান, প্রথমে নিয়ন ব্যাপারটা বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু নিয়নের সেই বন্ধুকেও যখন হত্যা করা হল, তখন নিয়ন ব্যাপারটা নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে পড়ে। বন্ধুর ধারনা ঠিক ছিল, এটা বুঝতে পারার পর নিয়ন রোবটকে এসব বিজ্ঞানী হত্যার জন্য দ্বায়ী বলে ঘোষণা করে। কিন্তু নিয়ন এটা প্রমাণ করতে ব্যার্থ হয়, কারণ রোবট বিজ্ঞানীকে হত্যা করার পর নিজের মেমরীতে এক ধরনের নতুন তথ্য সৃষ্টি করে যা ব্যাপারটিকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে বিশ্লেষণ করে।
ফলে প্রশাসন নিয়নকে মানসিকভাবে অসুস্থ ঘোষণা করে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিয়ন রোবটের ভাইরাস ধরে ফেলতে সমর্থ হয়, এবং পৃথিবীবাসী একটি গোপন ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পায়। আর কিছুক্ষনের মধ্যে বাষ্প প্রকোষ্ঠে শ্বাসরুদ্ধ করে জুনিয়রের মৃত্যু কার্যকর করা হবে। কারণ যারা মানব সভ্যতা ধ্বংশের চেষ্টা করে তাদের এটিই শাস্তি।
আমার অনান্য সাইফাই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।