পার্থে এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে পা দিতেই গরম বাতাস চোখে মুখে ঝাপটা দিল। মনে হলো দুবাইয়ের কথা। সেদিন টেম্পারেচার ছিল ৩৯º সে: আমার ভুল না হয়ে থাকলে। ভিষন চামড়া পোড়া রোদের তাপ আর গরম। ঠিক যেমন দুবাই এর ওয়েদার গরমের সময়।
সোফি গিয়েছিল আমাদের রিসিভ করতে। এয়ার পোর্টে দেখা হলো হাইডি, জ্যমা আর গ্রেস এর সাথে। ওরা ৫টা র ফ্লাইটে ইউ কে যাচ্ছে। আর আমারা ওদেরই বাড়িতে থাকতে যাচ্ছি ওদের অবর্তমানে। সোফি হাইডির বোন।
অন দ্যা ওয়ে হাইডির বাড়ি একটু একটু শহর দেখছিলাম। পার্থ অনেকটা কান্ট্রি সাইড শহর বলা চলে। সাগর ঘেসে শহর আর শহর শেষে রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া চলে গেছে পাহাড় পর্যন্ত। বলা চলে পাহাড়ের পদতলে পার্থ, মিশেছে সাগরে গিয়ে। সারা বাতাসে ইউক্যলিপ্টাসের গন্ধ মৌ মৌ করছে।
প্রচুর ইউক্যলিপ্টাস আর গাম ট্রি সারা শহর জুরে। তাই বাতাসে ইউক্যলিপ্টাস ন্যচারাল এয়ার ফ্রেশনারের কাজ করছে। উমমম বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। যদিও বাতাস ওখানে খুবই রুক্ষ আর শুষ্ক ও গরমের সময় গরম।
রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া গুলো ছোট্ট ছোট্ট লাল টাইলের, ফায়ার প্লেস দেয়া একতলা বাড়িগুলো চমৎকার ফুলের গাছে সাজানো।
এত একটা রুক্ষ দেশে এত চমৎকার গন্ধ ওলা গোলাপ আরও কত রকমের ফুলে যে ভড়া প্রতিটি বাংলো বাড়ি!! সাবাই ওখানে গর্ডেনিং করে প্রত্যেকটি বাড়িতে। ফুল ও গাছ ছাড়া একটা বাড়িও আমার চোখে পরেনি। অসাধারন নিড়বতা বিরাজ করছে রেসিডেন্সিয়াল এড়িয়া গুলোতে। ওরা শহর আর রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া কে সম্পুর্ন আলাদা করে পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষা করেছে রেসিডেন্সিয়াল জীবনে।
হাইডির বাড়িতে যখন পৌছালাম অসাধারন লাগলো ওর আঙুর লতা আর জলপাই গাছে ঘেড়া ছোট্ট বাংলোটা।
সামনে পেছনে ছোট্ট বাগানে আঙুর লতা আর নানান গাস ফুল থেকে জলপাই গাছ গুলো এক শান্তির নিড়বতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
তার মাঝে ছোট্ট ফাউন্টেন আর ফিস ট্যাংকে গোল্ড ফিস খেলা করছে পেছনের বাগানে।
দেয়াল থেকে সিংহের মুখদিয়ে পানি এসে ফিশ ট্যাংকটাকে ভড়ে দেয় যখন ফাউন্টেনটা চালু করা হয়।
আর তার পাশে এক ব্যঙা বসে গান করছে।
বাইড়ে রাস্তার দুপাশ জুড়ে ইউক্যল্পটাস চারিদিকে ওর অদ্ভুত মাতাল করা গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সেই বিকেলে সোফির সাথে গল্প করেই আমরা কাটিয়ে দিলাম হাইডির বাড়ির সামনের ব্যলকনিতে বসে। এর মাঝে রাতের খাবার কিনতে আমরা বাইরে গেলাম কাছের এক চাইনিজ দোকানে। কার পার্কে দেখলাম এক সি-গাল হেটে বেড়াচ্ছে নির্ভয়ে মানুষের পাশা পাশি। সি-গাল আগে অনেক দেখেছি কিন্তু জনবসতীতে নির্ভয়ে হেটে বেড়ানো সি-গাল আগে কখনও দেখিনি। অসাধারন লাগলো ব্যপারটি।
কিনলাম স্পাইসি নুডুল্স "Wok in Box" থেকে। বাড়ি ফিরলাম সেদিনের মত। বিকেলটা বাগানে বসে নানান রকমের পাখি দেখে ও ইয়াম্মি নুডুল্স খেয়ে, গল্প করে কাটলো।
কাকাতুয়া, টিয়ে আর ঘুঘু গুলো বাগানের জলপাই গাছের ছোট ছোট জলপাই খেতে উরে এসে নির্ভয়ে বাগানে ঘুরে বেড়াতে লাগলো সন্ধ্যের আগ পর্যন্ত। সন্ধ্যা হলো ৭।
৪৫ শের পরে। অন্ধকার হতে ৮টা পেড়িয়ে গেল। আর তেমনই ভোরের আলো ফুটল ৪। ৩০শে। আমিত অবাক হয়ে ভেবেছিলাম সকাল ৯টা বাজে, ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই দেখি মাত্র ভোড় ৪।
৩০ বাজে।
সকালে ক্লিফ আমাকে শহর দেখাতে নিয়ে গেল। রেসিডেন্সিয়াল এড়িয়ার মত শহরটিকেও ওরা নানান রং এর ফুলে সাজিয়েছে।
কারো যেন কোন তাড়া নেই কোথাও যাবার কিছু করার। ওদের জীবনটা খুব "লে ব্যাক" টাইপের এমনিতই, তার উপর হলিডে সিজ্ন চলছিল ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারের জন্য।
আমরা একটা বিস্ট্রো তে বসে সকালের কফি নিলাম।
ক্লোয়ির সাথে আমাদের বেলটাওয়ারে দেখা করার কথা। সোফিরও ওখানে আসবার কথা, হাইডি, সোফি ও ক্লোয়ি - তিন বোন ওরা।
শহর দেখতে দেখতে বেল টাওয়ারের দিকে হেটে চললাম।
চোখে পড়লো প্যন্থারের ডিজাইন করা ক্রিয়েটিভ বাস।
আর পুরোনো ধাচের ব্রিটশ বিল্ডিং গুলো মর্ডান আর্কিটেকচারাল বিল্ডিং গুলোর পাশে দাঁড়িয়ে।
হেটে গেলাম লন্ডন কোর্টের ভেতর দিয়ে, লন্ডনের ফিলে ভড়া ইন্টারেস্টিং ব্রিটিশ টাইপের দোকান গুলো দেখতে দেখতে। লন্ডন কোর্ট ব্যপারটা হলো - ১৯৩৭ সালে পার্থের প্রান কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয় এই ছোট্ট পায়ে চলা রাস্তাটি।
Hay Street Mall ও St Georges Terrace এর মাঝখানে গড়ে তোলা এই পায়ে চলা পথটি অনেকটা ইংল্যন্ডের Tudor style এর ফিল এনে দেয়। ওখান দিয়ে হেটে চলার সময় ছোট ছোট দোকান আর ক্যাফে গুলো এক ধরনের চার্মিং এটমোস্ফেয়ারের ফিলং দেয়।
আরো বেশি বলতে গেলে
There are also two clocks at London Court, one at each end of the lane. If you pay close attention you will notice the clock at the Hay Street entrance has four knights above it, which circle around when the clocks strikes every 15 minutes. At the St Georges Terrace end you will find St George battling a dragon above the clock, and both clocks are replicas of France's Great Clock of Rouen. London Court also has many fine details which you need to look for or else you may miss them, including statues of Sir Walter Raleigh and Dick Whittington, moldings, wind vanes and stairways which take you to the windows overlooking the court.
বেলটাওয়ারের চমৎকার আর্কিটেক্চার আমাকে মুগ্ধ করলো।
বেলটাওয়ারের ব্যপারটি হলো প্রতি আধা ঘন্টায় ওরা বেল টাওয়ারের বিশাল
বেল গুলো বাজাতে থাকে খুব সুন্দর রিদমে সাথে সাথে সময়টিও জানিয়ে দেয়।
রিভার সাইড ড্রাইভে সোয়ান নদির দিকে মুখকরে বেলটওয়ার দঁাড়িয়ে। ১৯৮৮ সালে এই ঐতিহাসিক বেল গুলো দেয়া হয়েছিল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসিকে ব্রিটেন থেকে। এইবেল গুলো ব্রিটিশ কিং জর্জ ২ এর প্রিন্স থাকাকালিন সময়ে তার আদেশে বানানো হয়।
বর্ননার বলা হয় :
Among its many attributes the Bell Tower includes the twelve bells of St Martin-in-the-Fields, which are recorded as being in existence from before the 14th century and recast in the 16th century by Queen Elizabeth I. The bells were again recast between 1725 and 1770 by three generations of the Rudhall family of bell founders from Gloucester in England, under the order of the Prince of Wales who was later crowned as King George II. They are one of the few sets of royal bells and are the only ones known to have left England.
There is nowhere else on Earth that visitors can get this close to historic bells – both to listen to their amazing sounds or be amazed at their immense size and the attraction acts as a custodian of tradition for the over six million Australians (2001 census) who regard their ancestry as English.
এর উপর একটা ভিডিও দেখুন ইউ টিউব থেকে:
Click This Link
টাওয়ারের সামনে ফাউন্টেন আর কতগুলো স্কয়ার স্লাব....তাতে চমৎকার সব ছবি আকা অস্ট্রেলিয়ান জীবনের।
এর সামনে ময়ুর আর সি-গাল ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মানুষদের আশে পাশে নির্ভয়ে।
সামনেই নদির পাশে লাকি শ্যাগ বারের পেছনে নদির উপরে খোলা ব্যলকনি তে বসলাম আমি, ক্লিফ ও ক্লোয়ি কিছু খাবার জন্য ও সোফির জন্য অপেক্ষায়।
একটু পরেই সোফি এসে হাজির। কিছু ছবি তোলা,
গল্প আর তার সাথে লাঞ্চ সারা।
বাড়ির পথে পা বাড়ালাম সেদিনের মত সোফি ও ক্লোয়ি কে ওদের ক্রিসমাস গিফ্ট গুলো দেবার জন্য।
চলব........আসছে কোয়ালা ও ক্যাঙ্গারুদের ছবি ও কথা পরের পর্বে!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।