অস্ট্রেলিয়া যাবার আগে আপনাদের বলেছিলাম ফিরে এসে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে লিখব। কিন্তু এত কথা, এত সব নতুন অভিঙ্গতা, এত সব জায়গা তা তো এক লেখায় শেষ করা যাবে না তাই ধারাবাহিক ভাবে লিখব ঠিক করেছি যদি আপনাদের ভাললাগে। আমি যদি ভাল লেখক হতাম তো এটা অনেক সুন্দর একটা রচন হয়তো হতো। যাইহোক আমার পচা বাংলা ও ভুল বানানে আপনাদের সাথে আমার অসাধারন অভিঙ্গতা ও ছবি শেয়ার কারলাম।
এনজয় অস্ট্রেলিয়া :
এয়ার হোস্টেসের মিষ্টি হাসিতে কিছুটা স্বস্তি পেলাম পরের ৫ ঘন্টা প্লেন জার্নির এক ঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে।
মেয়েটার বসবার সিট টি ঠিক আমাদের সামনে আমাদের দিকে মুখ করা। ভাবলাম ভালই হলো পথে যেতে গল্প করা যাবে। অবশ্য সাথে নিয়েছিলাম বেস্টসেলার Mitch Albom এর "Have a Little Faith" - ক্লিফের দেয়া আমাকে ক্ররিসমাস গিফ্ট গুলোর মধ্য একটা।
তবে উত্তেজনা ও কম ছিল না। প্রথম অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি বলে কথা।
কত গল্প শুনেছি অস্ট্রেলিয়ার। মুভি দেখেছি "অস্ট্রেলিয়া" ও "উল্ফ ক্রিক"!! সত্যি ঘটনার উপর ভিত্তি করে বানানো "উল্ফ ক্রিক" মুভিটা দেখবার পরে অস্ট্রেলয়ার ব্যপারে আমার খুবই ভয় ছিল । মাথার ভেতর সব অস্ট্রেলিয়ানদের আমার কাছে ক্রিমিনাল মনে হতো। ফ্লাই করার আগের রাতে সারারাত "উল্ফ ক্রিক" শব্দটা মাথার ভেতর ঘুমের ভেতর স্বপ্নের ভেতর হাতুরির বারির মত বারি মারছিল। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে যেচেপরে খুনিদের দেশে যাচ্ছি - শুখে থাকতে ভুতে কিলায় - অবস্থা আমার।
খুনিদের দেশ থেকে জান নিয়ে ফেরত আসতে পারলেই হাজার শুকর!!
শুনেছি ১৮০ বছর বা তার কিছু বেশি আগে ইউ কে থেকে যারা সর্বোচ্চো পর্যায়ের ক্রিমিনাল মৃত্ত্যু দন্ড সাজা প্রাপ্ত, তাদের পাঠেনো হতো অস্ট্রেলিয়ায় মৃত্ত্যু দন্ডের বদলে। তাদের বেছে নিতে হতো যে কোন একটা এই দুয়ের ভেতর :
১) মৃত্ত্যু দন্ড অথবা
২) অস্ট্রেলিয়া গিয়ে জীবন যাপন করা
অস্ট্রেলিয়া এমনিতেই বিড়ান ভুমি, পানির বরই অভাব, পানি ওখানে সব চেয়ে বড় সমস্যা এখনও। ঐ সময় ওটা আরো বিড়ান ছিল। খুব কম লোকই অন্য কোন দেশ থেকে গিয়ে সার্ভাইভ করতে পারত ঐ সময়, একমাত্র এ্যবারজনিয়ানরা ব্যতিক্রম, কারন ওটাই ওদের মাত্বভুমী, ওরাই অরিজিনাল ও পিওর অস্ট্রেলিয়ান। পরে কোন এক ব্রিটিশ পর্যটক ভ্রমন করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দেখা পান ও ওখানে ব্রিটিশ ফ্লাগ উড়িয়ে ওটাকে পার্ট অফ ব্রিটেন বলে ঘোষনা দেন ব্রিটেনের রানীর কথামত।
এসবই আমার শোনা কথা আজকের অস্ট্রেলিয়ানদের কাছ থকে। অবশ্য কিছুটা ইতিহাস থেকে পড়া ও ছবিতেও দেখা।
অস্ট্রেলিয়া এখনও খুবই বিপদ জনক ভাবে বিষাক্ত পোকা মাকড়ে ভড়া। যেগুলোর একটা কামড়ে মানুষ মরে যেতে পারে। তাই অস্ট্রেলিয়া গিয়ে জিবন যাপন আর মৃত্ত্যু বরণ অনেকটা একই পর্যায়ের ছিল তাই সর্বোচ্চো পর্যায়ের ক্রিমিনালদের ওখানে পাঠানো হতো জনসংখা বাড়ানোর জন্য এবং দেশ গঠনের জন্য - ব্রিটেন থেকে।
এ সবই পার্ট অফ শোনা কথা অস্ট্রেলিয়ানদের কাছ থেকে কিছুটা ক্লিফের কাছ থেকে। ক্লিফ ব্রিটিশ অস্ট্রেলিয়ান।
তো এই সব সত্য গল্প থেকে আমার মাথার ভেতর এক রকম ধারনা ছিল আজকের যারা অস্ট্রেলিয়ান তাদের এটলিস্ট ৭০% আসলে সর্বোচ্চো পর্যায়ের ক্রিমানালদের বংশধর। তাছারা "উল্ফ ক্রিক" মুভিটা দেখবার পরতো আর কথাই নেই - সব অস্ট্রেলিয়ানই আমার কাছে ক্রিমিনাল । হা হা হা দুঃখিত যদি কাউকে এখানে অবমাননা করা হয়ে থাকে।
আশাকরি আমার বোকা মনকে ক্ষমার চোখে দেখবেন। আমার কোন দোষ নেই সব নষ্টের গোড়া ঐ ইতিহাস !!
যাই হোক পঞ্চম ঘন্টায় আকাশ থেকে যখন এই বিড়ান ভুমি চোখে পড়ল আমি যে কি এক্সাইটেড হয়ে পরলাম !!! গল্পে পড়া, শোনা আর ছবিতে দেখা দেশ এখন আমার ঠিক নিচে !!! চোখে পড়ল মাইলের পর মাইল ফার্ম ল্যান্ড, বুশ আর সল্টলেক। এই সল্ট লেক গুলো বিশাল বিশাল নদির মত। সাদা সাদা নদি!! সল্ট লেক ব্যপারটি আমার কাছে নতুন। আগে কখনও দেখিনি।
ক্লিফের কাছে জানতে চাইলে বলল। সল্টলেক হলো লবনাক্ত পানির লেক যেখানে পানির লেবেল মাটির চাইতে উচু। তাই ঐ পানি প্রচন্ড রোদের তাপে শুকিয়ে লাবনে পরিণত হয়ে সাদা লবন হয়ে জমে থাকে লেকে। অনেক বড় বড় কম্পানি এই সল্টলেক থেকে কমার্শিয়ালি লাবন উৎপদন করে অস্ট্রেলিয়ায়।
অসাধারণ এই সল্টলেক গুলো দেখতে।
প্লেন থেকে ছবি তুলতে পারিনি তবে পরে সল্ট লেকে নেমে ছবি তুলেছি সেটায় পরে আসব সল্টলেকের ছবি নিয়ে।
পার্থ এয়ার পোর্টে নামলাম দুপুর ২। ৩০শে। এক্সপেক্ট করে ছিলাম ইমিগ্রেশনে একটা ঝামেলা হবে আমার পাসপোর্ট নিয়ে । হয়তো অপরাধীর মত এক পাশে দাড়ঁ করিয়ে আমার পাসপোর্ট নিয়ে গবেষনা হবে ঘন্টা খানেক, অন্য সব দেশে যেমন করা হয়েছিল আগে।
ইমিগ্রেশন অফিসার যখন আমার পাসপোর্টে সিল মেরে ফেরত দিয়ে দিল আমি হা হয়ে দাড়িয়ে তখনও বুঝতে পারিনি এত সহজে অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশন পেরিয়ে গেছি !!! হাঃঃঃ অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে আমার প্রথম পজিটিভ অনুভুতি !!!!
চলবে ছবি সহ পরের পর্বে............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।