পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
ব্লগের সকলকে ধন্যবাদ । আপনারা অনেক ধৈর্য্য ধরে আমার শেষ পোস্ট চারটা পড়েছেন । এখনো পড়ছেন । আপনাদের সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছেন । খুব সুন্দর আলোচনা হয়েছে , হচ্ছে ।
এই আলোচনাগুলো খুব জরুরী ছিলো । আপনাদের অংশগ্রহন আমাকে নানা ভাবে অনুপ্রাণিত করছে । আমি আশা করছি , যারা এখনো আলোচনায় যোগ দেন নাই , তারাও যোগ দেবেন ।
এর ভিতরে অনেক কিছু ঘটে গেছে । যেই পোস্ট থেকে আমার প্রতিবাদের শুরু , সেই লাল সালুর পোস্ট মডারেটররা ড্রাফট করেছেন ।
লাল সালু অটোজেনারেল হয়ে গেছেন । আমি মন্তব্যে প্রতিবাদ করেছিলাম । আমার পাশাপাশি ৪-৫ জন ব্লগার ( নাম বলতে পারছি না , সে পোস্ট নেই বলে) প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা । এঁদের মধ্যে একজন, অভিমানী মেঘ স্বীকার করেছেন উনি মডারেটরদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন ।
অন্য কেউ কেউ করে থাকতে পারেন , আমি জানি না । এর পরে লাল সালু অভিমান করে সমস্ত পোস্ট ড্রাফট করে লাল সালু নিকটি বন্ধ রেখেছেন । তার নিজের বক্তব্য অনুযায়ী লাল সালু ছাড়াও তার আরো কয়েকটি নিক আছে । হয়ত সেই সব নিকে ব্লগাচ্ছেন । লাল সালুর বন্ধু স্থানীয়রা ( আমি শত্রু নই , তবে এই মুহুর্তে ক্রস ফায়ারে আছি) পোস্ট দিয়ে তাকে ফিরে আসতে বলছেন ।
আমাদের অনেকের কাছে তার এই অভিমানী নিক ত্যাগ ( ব্লগ ত্যাগ করেছেন কিনা , সেইটা যেহেতু ঠিক শিওর না) সম্পর্কে মন্তব্য চাইছেন । যারা লাল সালুর পোস্ট দেখেন নাই, বা দেখলেও পরের দিকে ফলো করেন নাই , তাদের মনে নানা প্রশ্ন জন্ম হচ্ছে । কি হলো ? কেন হলো? কিভাবে হলো?
হতেই পারে । কারন ,
লাল সালু একজন জনপ্রিয় ব্লগার । রাগ ইমনের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং জননন্দিত ব্লগার ।
তার ছড়া , তার লেখা , তার কবিতার অনেক ভক্ত এই ব্লগে আছে । তার বন্ধুও কম নয়। সুতরাং, তার মত একজন ব্লগার যখন একটি জনপ্রিয় নিক ত্যাগ করতে বাধ্য হন, দিনে দিনে তিলে তিলে জনপ্রিয় করে তোলা নিকে একটা মাত্র পোস্টের কারনে হঠাৎ শাস্তি পেয়ে জেনারেল হয়ে যান , তখন সেইটা একটা দুঃখজনক ঘটনাই বটে ।
তিনি অনেক মানুষের সাথে ফান করেন । মডুদের নিষ্ঠুর ফান তিনি নিতে পারেন নাই ।
এইটাকে ফান বললাম কেন? খুব সোজা । ঐ পোস্টে ৫৪ টা প্লাস ছিলো । মন্তব্যকারী ছিলো অসংখ্য । যৌণ গন্ধা , আদিরসাত্মক ছড়া লাল সালু একলা লেখেন নাই , তাকে উস্কে তাল গাছে তোলার ব্লগারের অভাব ছিলো না । উনিও উৎসাহ পেয়ে , " যা লিখেছি , ঠিকই তো আছে, নাইলে পাব্লিক খাইলো কেন" ধরনের মনভাব নিয়ে আমার নামে পোস্টও দিয়ে ফেলেছিলেন ।
কিন্তু মুশকিল হইলো , যখন মডুরা সিদ্ধান্ত নিলেন ঠিক নাই , তখন একলা লাল সালু ফেঁসে গেলেন। বা তাঁর ঐ একটা নিক ফেসে গেলো । বাকি যারা বন্ধু বেশে , ভালোবেসে , মাথায় হাত বুলিয়ে তাল গাছে তুলেছিলেন , তারা এখনো দিব্যি খেয়ে দেয়ে ঢেকুড় তুলে বেড়াচ্ছেন , কারো কিস্যুটি হয় নাই । স্রেফ লাল সালু নিকটা রেগে মেগে গায়েব।
এইটা ফান না ত কি?
আমি কিছু জিনিস স্পষ্ট করে দিতে চাই ।
১। আমার চার সিরিজের পোস্ট লাল সালুর পোস্টের প্রতিবাদে লেখা হয় নাই । যারা এই রকম ভাবছে , তারা বিশ্ব বেকুব । প্রতিবাদ যা করার সেইটা লাল সালুর দুইটা পোস্টেই আমি করেছি, মন্তব্য লিখে । আমার পোস্ট আমি কিছুদিন থেকেই লিখবো লিখবো ভাবছিলাম ।
তবে নিঃসন্দেহে লাল সালুর পোস্ট বারুদে আগুন দিয়েছে । আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে , দিচ্ছি দিব করে দেরী করা ঠিক না , মানুষ সমস্যার মূলে না গিয়ে অনেক দূর থেকে ভুল টার্গেটে গুলি ছুড়ছে ।
২। লাল সালুর শেষ দুইটা পোস্ট শালীনতার মাত্রা ছাড়ালেও আমি তাকে গায়েব করতে চাইনি । চুপচাপ রিপোর্ট করলে হয়ত কাজ হইতো ।
তাতে আমার কি লাভ? আমি চাই মানুষের মন মানসিকতা , চিন্তা ভাবনার জায়গাটাতে স্পর্শ করতে । কাউকে গায়েব করে দিলে চিন্তা ভাবনা তর্ক বিতর্কের যেই ময়দানটা হারিয়ে যায় সেইখানে ফাকা মাঠে গোল দিয়ে কাউকে কিছু শেখানো যায় বলে আমি বিশ্বাস করি না । মানুষের ভুল আচরন গুলোর পাশে ঠিক আচরন , সংকীর্ণ মানসিকতার পাশে মুক্ত ভাবনার উদাহরণ গুলো রাখা চাই । এইটা খুবই জরুরী । আর একটা ভুল করলেই কেউ বাতিল হয়ে যায় না ।
মানুষই পরিবর্তনশীল । গরু ছাগল পরিবর্তিত হয় না , মানুষকে তাই পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া উচিত ।
আশা করি লাল সালু , নিজের ভুল বুঝতে পারলে অভিমান কাটিয়ে তার এই অন্যতম জনপ্রিয় নিকটাকে আবার চালু করবেন । নতুন কোন নিককে জনপ্রিয় করার চেয়ে এই কাজটা সহজ । এতে লজ্জার ও কিছু নেই ।
তর্ক বিতর্ক , মতের অমিল মানুষে মানুষেই হয় - কিন্তু তাই বলে একজনরে গাছ , আরেক জনরে পাথর হয়ে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই।
৩। প্রচুর মানুষ এর আলোচনায় উঠে এসেছে , তাহলে সমাধান কি?
আমি কি শুধুই সমস্যা আলোচনা করতে চেয়েছি? সমাধানের পথ নিয়ে কিছু বলার নেই? অবশ্যই আছে ।
এই ব্লগের বিভিন্ন পোস্টে পোস্টে মৃদু, কড়া , শালীন , অশালীন ভাষায় যখন লাক্স নিয়ে সমালোচনা হয়েছে , আমি ভেবেছি প্রথমত এইটা যে একটা সমস্যা এইটুকু মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে । অনেকেই এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার ভিতরে খারাপ কিছু দেখতে পান না ।
আর দশটা প্রতিষ্ঠা ও পেশার মতই এইটাও একটা কাজের মাধ্যম মনে করেন। ১০ হাজার প্রতিযোগীর অংশ গ্রহন প্রমান করে অন্তত ১০ হাজার পরিবার এইটাকে ভালো চোখেই দেখে । সুতরাং, এইটা যে একটা সমস্যা , ধর্মীয় নয়- সাংস্কৃতিক নয়- সামাজিক নয় , এইটা একটা অনেক গভীর অর্থনৈতিক সমস্যা এইটুকু সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাটাই আমার প্রথম লক্ষ্য ছিলো ।
আমার শেষের চারটা পোস্ট এ আমি তাই চেষ্টা করেছি । কর্পোরেট পুঁজিবাদ কি জিনিস , কি এর রুপ , কি ভাবে আমদেরকে প্রভাবিত করতে করতে এখন গ্রাস করে নিচ্ছে - তার সামান্য বর্ননা দেওয়ার চেষ্টা করেছি ।
খুব কি পেরেছি?
নাহ ।
আমি একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রী । অর্থনীতি , কর্পোরেট পুঁজিবাদ , বিশ্ব রাজনীতি এবং বাণিজ্য কোন ভাবেই আমার দক্ষতার জায়গা নয় । কিন্তু , এই সব কিছুই একজন ভোক্তা , ক্রেতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে সার্ভিসের উৎপাদক হিসেবে আমি এই সব কিছুর সাথেই এই পৃথিবীর ৬ বিলিওন মানুশের মতই ওতপ্রোত ভাবে জড়িত । এই সব কিছুই আমার এবং আমাদের জীবনের দৈনন্দিন প্রতিটা সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রন করে, এইটুকু আমি বুঝি ।
বুঝি বলেই যতটা সম্ভব বুঝার চেষ্টা করি। সচেতন থাকার চেষ্টা করি । পড়ালেখার এই পর্যায়ে এসে আমি বুঝতে পেরেছি , দুনিয়ার কোন বিজ্ঞানই এখন আর বিজ্ঞান নয় । সবটাই অর্থনীতি , সবটাই পলিটিক্স । কর্পোরেট পলিটিক্স ।
আমার সাধের ও ভালোবাসার চিকিৎসা বিজ্ঞান , আমার প্যাশন এর জায়গা - হিউমেন ডেভেলপমেন্ট- সবটাই এখন এই কর্পোরেট পুঁজিবাদের খপ্পরে । আমরা কেউই এর বাইরে বাস করি না এখন । করা সম্ভব না । হিমালয়ের গুহা কিংবা আমাজনের জঙ্গল - কোন জায়গাই এখন আর এই কর্পোরেট পুঁজিবাদের থাবার বাইরে নেই ।
এই বোধটাই আমাকে তাড়িত করেছে এই ব্যাপারে পোস্ট লিখতে ।
আমার ব্লগ আমার ছোট্ট একটা জানালা । আমি তা খুলে বিশ্ব দেখি । আমার প্রাণের বাংলাদেশ দেখি । আর দেখি , প্রতিদিন আশাদের মৃত্যু । আমরা যেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তলিয়ে যাচ্ছি , লড়াই করতে হবে জেনেও কার বিরুদ্ধে , কি ভাবে লড়াই করবো সেইটা না বুঝে নিজেদের ভিতরেই কামড়া কামড়ি করে ক্রমশ ডুবছি ।
এর কি কোন সমাধান নেই?
নিশ্চয়ই আছে । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তলিয়ে যাওয়ার বদলে লড়াই করতে করতে টিকে থাকাটাও একটা বেঁচে থাকা । তেলাপোকার মত কোন মতে টিকে থাকার চেয়ে বাঘের মত ঝাপিয়ে পড়াটাও বেঁচে থাকা । আমি তেলাপোকার জীবনটা ঠিক পছন্দ করি না ।
তাই মাঝে মাঝেই আমার জানালা থেকে আপনাদের জানলায় কড়া নাড়ি ।
আপনাদের নানা ভাবে বিরক্ত করে কথা শুনতে বাধ্য করি । জানি , চিকিৎসা বিজ্ঞানের আদার ব্যাপারি হয়ে আমার কর্পোরেট পুঁজিবাদের জাহাজ ধরে টানাটানি করা ভয়াবহ রকমের দুঃসাহস । কিন্তু , আমার মন বলে , আমরা যতই আদার ব্যাপারি হই না কেন , আমাদের প্রতিদিনের আদা জাহাজে চড়ে কার হাত দিয়ে বাজারে আসে , এত মুনাফা কই যায় , কি ভাবে বাজার আমার জীবন নিয়ন্ত্রন করে এইটা যদি আমি জানতে পারি , হয়ত কোন একদিন আমরা হাজার হাজার আদার ব্যাপারি ঐ জাহাজটা দখল নিতে পারবো । একবারে না পারি , বছরের পর বছর ধরে , একটা একটা করে কাঠ খুলে নিয়ে আমরা নিশ্চয়ই একদিন ঐ জাহাজটাকে আমাদের নিজের মালিকানাধীন ছোট ছোট নৌকা , আদার দোকানে পরিণত করতে পারবো ।
কেউ পাবে আর কেউ পাবে না - দুনিয়াটার একটা পরিবর্তন আনতে পারবো।
কি ভাবে?
সেইটা লেখার জন্যই এই ভূমিকা পোস্ট আজকে রাতে ।
আপনি থাকবেন তো ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।