আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোয়াখালীর ২৭৬টি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যের পাঠ্যবই পায়নি, অভিবাবকদের ক্ষোভ



নতুন শিক্ষাবর্ষে সরকারের বিনামুল্যে বিতরণ করা নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাবেনা নোয়াখালীর ২৭৬টি কিন্ডার গার্টেন কিংবা কেজি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাজার থেকে নিন্মমানের কাগজদিয়ে তৈরী বই উচ্চ মূল্যদিয়ে কিনে পড়তে হবে। এনিয়ে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের অভিবাবকেরা ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষা বিভাগের ভাষ্যমতে; শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বইয়ের চাহিদা পাঠানোর সময় তাঁদের কাছে এসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে কোন তথ্য চাওয়া হয়নি।

তাই এদের দেওয়ার মত কোন বই তাঁদের কাছে আসেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাওয়ার পর বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে তাঁরা ৩৫৬টি প্রতিষ্ঠানের নাম পেয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ২৭৬টি প্রতিষ্ঠান চালু আছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব সিলেবাসের বইয়ের পাশাপাশি বাজার থেকে কেনা সরকারি পাঠ্যবই পড়ান। বর্তমানে জেলার নয়টি উপজেলায় এধরণের ২৭৬টি কিন্ডারগার্টেন কিংবা কেজি স্কুল রয়েছে।

এর মধ্যে সোনাইমুড়ীতে ৬৮টি, কবিরহাটে ৭টি, সুবর্ণচরে ৭টি, হাতিয়ায় ৪টি, কোম্পানীগঞ্জে ২৩টি, সেনবাগে ৩৮টি, চাটখিলে ৩০টি, বেগমগঞ্জে ৬২টি ও নোয়াখালী সদরে ৩৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৬টি প্রতিষ্ঠান গত ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পাঁচটি কাসের প্রতিটিতে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। সে হিসেবে ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানে পাঁচটি কাসে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পড়া লেখা করছে। এঁদের প্রত্যেকেই বিনামুল্যের সরকারি পাঠ্যবই থেকে বঞ্চিত হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল খায়ের জানান, বেসরকারিভাবে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সরকারি কোন নীতিমালা না থাকায় এগুলোর উপর তাঁদের কোন নিয়ন্ত্রণ নাই। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সর্বশেষ সুনির্দিষ্ট কোন তথ্যও তাঁদের কাছে নেই। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরকারি পাঠ্যবই পাওয়ারও সুযোগ নেই। তাছাড়া তাদেরকে দেয়ার মত বইও তাঁদের কাছে নেই। এদিকে, জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা সদর এবং গ্রাম-গঞ্জের সব সরকারি, বেসরকারি রেজিষ্টার্ড ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, হাইস্কুল ও দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সরকারি বিনামূল্যের বই ইতিমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।

কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা এসব কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যের বই না পাওয়া অভিবাবকদের অনেকেই ুব্দ। আবার প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরাও শিক্ষার্থীদের সরকারি বই দিতে না পারায় প্রতিনিয়ত অভিবাবকদের তোপেরমুখে পড়ছেন। চৌমুহনী প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর প্রধান শিক্ষক জানান, তাঁর স্কুল গত কয়েক বছর ধরেই সরকারি বৃত্তি পরীক্ষা এবং এবছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল লাভ করে। এতদিন তাঁরা বাজার থেকে তাঁদের নিজস্ব সিলেবাসের বাহিরে বাজারে বিক্রি হওয়া এনটিবিসি’র বই কিনে শিক্ষার্থীদের দিতেন কিংবা অভিবাবকেরা নিজেরা কিনতেন। কিন্তু এবার সরকার সব শিক্ষার্থীদের বিনামুল্যে বই দেওয়ার ঘোষনায় বাজারে এনটিবিসির পাঠ্যবই পাওয়া যাচ্ছে না।

ফলে বই নিয়ে প্রতিনিয়ত অভিবাবকদের কথা শুনতে হচ্ছে। সেনবাগ শহরের চাইল্ড রাইজ কিন্ডার গার্টেনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, তাঁদের সরকারি রেজিষ্টেশন রয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায়ও তাঁদের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। তাই তাঁরা ভেবেছিলেন এবার তাঁরা বিনামূল্যে সরকারি পাঠ্যবই পাবেন। কিন্তু জেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করার পর তাঁদের সরকাবি বই দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। চৌমুহনীর প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাছনুবা তনয়ার মা নাহিদা সুলতানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি স্কুলে ভাল পড়ালেখা হয়না বিধায় মেয়েকে ওই স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।

সরকারি ঘোষনা শোনে ভেবেছিলেন তাঁর মেয়েও সরকারি বিনামুল্যের পাঠ্যবই পাবে। কিন্তু পায়নি। বই না পেয়ে তাঁর মেয়ে বাসায় কান্নাকাটি করছে। নিরূপায় হয়ে বাজারে যান বই কিনতে। সেখানেও পাননি।

একই বিষয়ে বেগমগঞ্জের গনিপুর এলাকার অভিবাবক মোঃ হানিফ চৌধুরী বলেন, বানিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠলেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানের দিক থেকে অনেক ভাল। তাই এদের সরকারি পাঠ্য বই থেকে বঞ্চিত রাখা ঠিক হয়নি। এই বিষয়ে সরকার জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছে। বিনামুল্যের সরকারি বইয়ের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানই ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

কিন্তু তাঁদের বই দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই এই বিষয়টি নিয়ে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.