আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি অপ্রত্যাশিত এবং কিছুটা উপেক্ষিত

কিছুটা কালোয়, কিছুটা সাদায়

আমি অপ্রত্যাশিত এবং কিছুটা উপেক্ষিত। পরিষ্কার করেই বলি। আমি বাবা-মা'র সপ্তম সন্তান। ছেলেবেলায় শুনেছি, বাবার অসতর্কতার কারণেই মা আমাকে নিয়ে গর্ভবতী হয়েছিলেন। মায়ের বয়স তখন ৪৫; বাবা ৫৭।

গর্ভধারণের কষ্টে কিছু সুন্দর স্বপ্নের যোগ না হলে বিষয়টা কত বিরক্তিকর, তা আমি এখন ভালো করেই জানি। মাঝে মাঝে ভাবি, অপ্রত্যাশিত কাউকে বহন করার কষ্টে আমার মা কি একটি রক্তপিণ্ডকে গালি দিয়েছিলেন? এরপর আমি যখন আরো বড় হই, মানে, পৃথিবীতে আসার আগ্রহ নিয়ে মায়ের গর্ভে হুড়োহুড়ি করি, মাকে বিনিদ্র রাখি রাতের পর রাত, তখন হয়ত বাবাও মায়ের কথা থেকে রেহাই পাননি। আমাকে জন্ম দেয়ার সময় মা সজোরে কাঁদতে পেরেছিলেন কিনা জানি না। নাড়ি ছিঁড়ে, রক্তের সাগর বইয়ে দিয়ে আমার মা একটি অপ্রত্যাশিত জীবনকে পৃথিবীকে সোপর্দ করেছিলেন- হয়ত লজ্জায়, ভয়ে, অসংখ্য সংশয় নিয়ে। এর জন্য সমাজ বাবা-মাকে নিশ্চয়ই হেয় করেছিল।

আত্মীয়-স্বজন পাগল বলেছিলেন তাদের। আর আমার ভাই-বোনেরাই বা কী বলেছিলেন! ভাই-ভাবি-ভাইপো-ভাতিজিরা আমার জন্মের দিন হয়ত লজ্জায় ঘর থেকে বেরোননি। এভাবে আমার জন্ম হয়। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, আমাকে সঙ্গে নিতে হবে বলে বাবা তার নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোথাও যেতেন না। এবং একই কারণে আমার ভাই-বোনেরা আমাকে সযতেœ এড়িয়ে চলতেন।

নিজেদের সংসার নিয়েই ব্যস্ত ওরা, তাদেরই বা সময় ছিল কোথায়! পৃথিবীটা বোঝে ওঠার আগেই বাবা-মাকে হারিয়েছি আমি। মৃত্যুর সময় বাবা বলেছিলেন, -কিছুই করে যেতে পারিনি তোর জন্য। এর ক'বছর পর মা মারা যান। মৃত্যুর সময় তিনি নির্বাক ছিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে কেবল অশ্রুপাত করেছিলেন তিনি।

দেশের চারপ্রান্তে বড় বড় চাকরি নিয়ে বড্ড ব্যস্ত তখন আমার ভাইয়েরা। তাদের অনেকেই বাবা-মা'র মৃত্যু দেখেননি। ভাই বোনেরা সময় পেলে আমার খোঁজখবর যে নিতেন না, তা নয়। 'স্নেহের ভাই' বলে চিঠি লিখতেন। খামে ভরে শ-দু শ করে টাকাও পাঠাতেন।

এদের স্নেহে ভর করে হোক, কিংবা স্কুলে ফ্রি পড়তে পারার বদৌলতে হোক, আমি এখন শিক্ষিত একজন। চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘোরা অসংখ্য শিক্ষিতের মধ্যে আমিও আছি। ভাইয়েরা মাঝে মাঝে উপদেশ দেন, -দেখ্, নিজের পায়ে দাঁড়া, ছোটখাট কিছু কর। বাঁচার জন্য আমাকে ছোটখাট কিছু করতে হয়। ছোটখাট কিছু করার জন্যই তো আমার জন্ম!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।