পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়ে অভিভূত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মাত্র তিনটি শব্দে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করলেন, ‘অযাচিত, অভাবিত, অপ্রত্যাশিত। ’
মঙ্গলবারের বিকেল। দিল্লির অশোকা হোটেলের ড্রইংরুমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মন দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখতে দেখতে শব্দ তিনটি উচ্চারণ করলেন। তার পর বললেন, ‘আমি তো খুশিই। কিন্তু আমার বন্ধু-বান্ধবেরা ও আমাকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা আরও খুশি বলে আমার কাছে এই সম্মানের মূল্য এত বেশি।
’
আনিসুজ্জামান প্রথম বাংলাদেশি, ভারত সরকার যাঁকে পদ্মভূষণ সম্মান দিল। গতকাল সোমবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পুরস্কার নেন তিনি।
ক্রিকেট দেখতে দেখতে কথা বলতে বলতে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘এই উপমহাদেশে ক্রিকেট সত্যি সত্যিই একটা ধর্ম হয়ে গেল। কারণ, ক্রিকেট মানুষকে কানেক্ট করছে, মানুষকে জুড়ছে। এর একটা সম্ভাব্য কারণ মনে হয়, ঘরে বসে নিজেদের খেলা উপভোগ করা, যাতে আমরা একাত্ম হতে পারি।
ফুটবলও তো আমরা দেখছি। কিন্তু সেখানে একাত্মবোধ কাজ করে না। কারণ, ফুটবল বিশ্বে আমরা অকিঞ্চিত্কর। ক্রিকেটে ১০টা দেশের মধ্যে আমরা একজন। ফুটবলে দেড় শ দেশের মধ্যেও আমরা নেই।
ফুটবল তাই জাতিবোধে জুড়তে পারছে না, ক্রিকেট যা পারছে। ’
এই সম্মাননা বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তুলতে সাহায্য করবে বলে আনিসুজ্জামানের আশা। কিন্তু তবুও ৭৭ বছরের এই প্রবীণ চিন্তাবিদ ‘কালচারাল প্লুরালিজম’-এর লেখক চিন্তিত। তাঁর চিন্তা, তাঁর দেশে বহুত্ববাদের বিকাশের প্রয়োগের দিকটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ‘বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তাকে বাঙালি সম্মান দিতে পারছে না।
’ তিনি বললেন, ‘একদিকে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, অন্যদিকে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। আমরা বুঝতে পারছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও প্রোথিত করতে গেলে বহুত্ববাদকে মানতে হবে। কিন্তু হচ্ছে না। কারণ, অপর সম্পর্কে সহানুভূতি সম্পূর্ণ হতে পারছে না। মানুষের বিপদে মানুষ পাশে দাঁড়াচ্ছে না।
রাষ্ট্রের সহায়তা পাচ্ছে না। বহুত্ববাদের প্রসার তাই একটু জটিল হয়ে পড়ছে। ’
আনিসুজ্জামান এখানেই ভারতের দিকে তাকাতে পছন্দ করেন। কারণ, ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এটাই ভারতের সৌভাগ্য ও বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য বলে তাঁর ধারণা।
তবে দেশের প্রচারমাধ্যমগুলো ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। বহুত্ববাদ, গণতন্ত্রের প্রসারে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের উপান্তে এসে এখন তাঁর ইচ্ছা হয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করছে, আমলাতন্ত্র তার প্রশাসনিক ধর্ম থেকে বিচ্যুত হচ্ছে না এবং জাতীয় সংসদ তার ভূমিকা ঠিকভাবে পালন করছে—এগুলো যেন তিনি দেখে যেতে পারেন। আর একটা ইচ্ছাও তাঁর রয়েছে। তিনি চান, ভারতে শাসকের চরিত্র যদি বদলেও যায়, তা হলেও দুই দেশের সমঝোতার জায়গাগুলো অন্তত যেন অপরিবর্তিত থাকে।
সম্পর্কের অবনতি যেন না ঘটে। কোনো দেশই যেন বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পিছনে না হাঁটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।