বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৫ আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ পিটিশন) শুনানি শেষ হয়েছে। আগামিকাল বুধবার রায় প্রদান করা হবে।
আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের বেঞ্চে শুরু হয় তৃতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান শুনানি শেষ করার পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আনিসুল হক সকাল সোয়া ১০টার দিকে শুনানি শুরু করেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম আদালতে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা।
শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৪ সদস্যের বেঞ্চ বুধবার রিভিউ পিটিশনের রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন।
গতকাল রোববার তিন আসামি শাহারিয়ার রশিদ, কর্নেল ফারুক ও মহিউদ্দিনের (অ্যার্টিলারি) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার পর্যন্ত আদালত শুনানি মুলতবি করে।
আসামি শাহরিয়ার রশিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন তার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান।
আর কর্নেল ফারুক ও মহিউদ্দিনের (অ্যার্টিলারি) পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন তাদের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান।
শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। আদালতের বিভিন্ন গেটে জনসাধারণ প্রবেশে তল্লাশি করে র্যাব।
এরআগে গত রবিবার এ মামলার অন্য দুই আসামি বজলুল হুদা ও ল্যান্সার মহিউদ্দিনের পক্ষে তাদের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল মামুন আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আইনজীবীরা আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ প্রার্থনা করে যুক্তি তুলে ধরেন।
অন্যদিকে তিন আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ এবং একেএম মহিউদ্দীন আহমেদের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নিতে সময় চেয়ে আদালতে পৃথক আবেদন করেছেন। ফারুক রহমান ও একেএম মহিউদ্দীন আহমেদের পক্ষে অ্যাডভোকেট খান সাইফুর রহমান এবং সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের পক্ষে আবদুর রেজাক খান এ আবেদন করেন।
আদালত তিন আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যামামলায় আপিল বিভাগে বহাল থাকা রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে পাঁচ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একজন আসামি মারা গেছেন এবং বাকি ছয়জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। রায়ে পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। এ রায়ের পর ২০০১ সালে হাইকোর্টের দেয়া রায় অনুসারে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে কার্যত আর কোনও বাধা থাকলো না।
এদিকে শুনানিতে আবেদন অগ্রাহ্য হলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফাঁসি দিতে আইনগত কোনো বাধা না থাকায় ইতিমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
জানা গেছে, কারাবন্দি পাঁচ আসামির ফাঁসি চারটি কারাগারে কার্যকরের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
এরমধ্যে একটি কারাগারে দুজনের ফাঁসি দেয়া হবে। কোন কারাগারে কাকে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানো হবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
কারা সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগের ৪টিসহ সারাদেশে ১৫টি কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে। এরআগে ঢাকা বিভাগের তিনটিসহ ১৪টি কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ ছিলো।
শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের আগে কাশিমপুর-২ কারাগারে নতুন একটি ফাঁসির মঞ্চ বানানো হয়।
এখন ঢাকা বিভাগের কেন্দ্রীয় কারাগারে ১টি, ময়মনসিংহে ১টি, ফরিদপুরে ১টি ও কাশিমপুর-২ কারাগারে ১টিসহ সারাদেশে ১৫টি ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে।
জেলকোড ৯৯১ (৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আসামিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করার কপি যে দিন কারাগারে পৌঁছাবে তার ২১ দিন পর এবং ২৮ দিনের আগে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
কারাগারে থাকা বঙ্গবন্ধুর পাঁচ হত্যাকারী হলেন- ল্যান্সার (অব.) একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি)।
এদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ ও বজলুল হুদা গত ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জানুয়ারি তিন আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।
আর এ হিসাবে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিলো।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।