ইচ্ছে টা বেশ কিছু দিনের। এই ব্লগের কবিদের একটি কবিতা নিয়ে আলোচনা করবো। লিখবো সেই কবিতাটি নিয়ে, আমার কাব্যচিন্তন।
হাঁ , আমি বেছে নিয়েছি দশজন কবি । যাদের, আমার দৃষ্টিতে নির্বাচিত একটি কবিতা নিয়ে আলোচনা করবো আমি ।
জানাবো আমার পাঠচিন্তা । আমার বেছে নেয়া প্রথম কবি
আকাশ অম্বর । তার এই কবিতাটি পড়ুন।
Click This Link
পথ-কথা
=======
ছোট একটি গলি। আর তার স্থানে স্থানে আট্কে থাকা অন্ধকার।
চুপচাপ। নিভৃত। আট্কে থাকা মুক্ত অন্ধকার। পৌষের এই হালকা শীতল রাত্রির আবেশে মৃদু শীতল-অনুভূতিগুলোও আট্কে থাকতে চায়। মৃদু বাঁধনে বশ মানতে চায়।
বিপ্লব চায় না। বিদ্রোহ চায় না। চায় না জেগে উঠতে। শুধু চায় ঘুমিয়ে থাকতে, শীতল থাকতে। উত্তাপ চায় না।
আলোড়ন চায় না। শুধু চায় উষ্ণ এই চাদরের তলায় লুকোতে। একাকী উষ্ণ এই চাদর। আর মৃদু শীতল অনুভূতিগুলো। উলের পরতে পরতে জমে থাকা তাপ শুষে তবে উদ্বায়ী হতেই হয় বুঝি তাদের।
আর তারপর শীতল বাতাসে ঘনীভূত হয়ে টপটপ করে ঝরে পরতেই হয় বুঝি মনের অতলে। জমাট বাঁধতে হয় দেহ-তাপে।
হ্যাঁ। ছোট্ট এই গলি। কিন্তু কত পুরোনো এই পথ! কত স্মৃতি! কত স্মৃতি! সব বুঝি আট্কে আছে ঐ ভাঙা দেয়ালের খাঁজে, শেওলা পরা ইটের প্রান্তে, দেয়ালের পদধূলিতে সিক্ত শিশিরভেজা ঘাসের ডগায়, আর কতদিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ল্যাম্পপোষ্টের আঁধার-বর্ধিষ্ণু আলোর ছায়ায়।
হালকা শিরশিরে বাতাসে বুঝি ফিস্ফিসে ওরা এখনও ছাড়ছে মৃদু উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস।
গাইছে কেউ...
দেখবো কি করে তারে
নীরব অহংকারে
আমার গহন মনে
সে যে গান হয়ে বাজে
নীরব অহংকার। তোমার। নীরব অহংকার। আমার।
নীরব অহংকার – গলির এই খুব্লে খুব্লে খাওয়া পৃষ্ঠভাগের। পিচ-ঢালা নয়। কংক্রীটের প্রলেপ হতে মুক্ত। বৃষ্টি হলে মাটির সোঁদা-গন্ধ বের হয় যার গা থেকে, সেই তুচ্ছ পথের নীরব অহংকার। মৃত্তিকার অহংকার।
সে যে গান হয়ে বাজে। আমার গহন মনে। তোমার গহন মনে। স্মৃতি, তুমি জানো কি তা?
কেন তুমি কাছে এলে
এত আশা দিয়ে গেলে
কাছে আসা। দিয়ে যাওয়া আশা।
ফেলে যাওয়া হতাশা। কে বুঝবে তার মর্ম! যারা একাকী পথ চলে, তারাই বোঝে। আর হে স্মৃতি, তুমি কেনো বুঝেও বোঝো না! এই পথ তো বোঝে। এই মৃত্তিকা তো বোঝে। দেখো দেখো, সে কতই না শান্ত।
কতই না শীতল। এই পথ তো দেখেছে দুটো উষ্ণ চাদরের খেলা। এই পথ তো শুনেছে মৃদু-শীতল হাওয়ায় কেঁপে উঠা দুটো উষ্ণ-অনুভূতির কাতরতা। এই পথই তো অনুভব করেছে এক একীভূত উষ্ণ আলিঙ্গনের ছোঁয়া। আর তারপর? এই পথই তো শুনেছে দুটো অশরীরী আত্মার মৃদু-কোলাহল।
ফিসফিস করে তখন কি কথা কইতে হে পথ-মৃত্তিকা? তোমার নরম শরীর মাড়িয়ে যাওয়া দুটো অতৃপ্ত-আত্মার মুখোশ কি খুলে পরেছে তোমার ওপর? তুমি কি লজ্জা পেয়েছো? হে পথ! তুমি কি মুখ লুকিয়েছো ঘৃণায়?
ছোট্ট এক গলি। স্মৃতিকাতর এক পথ। তারা তো দেখেছে দুটো নীরব অহংকার।
আমার চোখের জলের মাঝে
তোমার স্বপ্ন কমল আছে
তুমি জানো কি তা?
-------------------------------------------------------------------
কবি বলেন এগুলো তার ছেঁড়া চিন্তা । চিন্তার স্বরূপ কী ?
চিন্তা হচ্ছে - যা ভাবে ও ভাবায়।
একটা ক্ষেত্র তৈরি করে। ভালোবাসার।
বিরহের। কাঁদার। হাসার।
কবিতাটি শুরু হয়েছে একটি গলি, একটি অন্ধকার, কিংবা একটি মন নিয়ে। যে মন দেহের প্রতিভূ।
এই মনটি বিপ্লব চায় না। বিদ্রোহ চায় না। জাগতে চায় না।
চায় ঘুমিয়ে থাকতে।
আচ্ছা , ঘুম কীসের প্রতীক । ঘুম প্রতীক মৃত্যুর। ঘুম শান্তির প্রতীক।
উষ্ণ উলের পরতে পরতে মিশে এই যে জমাট দেহতাপ- তা'ই জন্ম দেয়।
জন্মান্তর ঘটায়। যা একটি বিপ্লবের চেয়েও অধিক ।
ইটে শ্যাওলা পড়ে ঠিকই । কিন্তু স্মৃতিতে ? না পড়ে না । আমৃত্যু পর্যন্ত।
গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে অথবা মনের গলিগুলো সেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে
আর ভাবে বর্ধিষ্ণু আলো এসেই দখল করে নেবে প্রেমের ছায়া ।
এই কবিতায় কথামালার সাথে মৃদু সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন কবি।
গাইছে কেউ...
দেখবো কি করে তারে
নীরব অহংকারে
আমার গহন মনে
সে যে গান হয়ে বাজে
এই কৃতিত্ব কবির । তিনি নতুন প্রতীকে ভাবিয়েছেন আমাদেরকে।
অহংকারী মন, সেই মনের কাছে আসার বিনয় - সব মিলিয়ে তিনি
কবিতাটিকে করে তুলেছেন খুবই বহমান।
আর বহমান পংক্তিই কালের
ধারক।
কবিতার শেষপ্রান্তে কবি নির্মাণ করেছেন চলমান সমাজচিত্র।
ফিসফিস করে তখন কি কথা কইতে হে পথ-মৃত্তিকা? তোমার নরম শরীর মাড়িয়ে যাওয়া দুটো অতৃপ্ত-আত্মার মুখোশ কি খুলে পরেছে তোমার ওপর? তুমি কি লজ্জা পেয়েছো? হে পথ! তুমি কি মুখ লুকিয়েছো ঘৃণায়?
পথও লজ্জা পায়। মুখ লুকোয় ঘৃণায়। কখন ? যখন আমার- মানবেরা ,
মানবতা পরাজিত হয় ।
পরাজিত হয় প্রেম।
কিন্তু সেই গলি, সেই পথই তো আমাদের চলার মনন। শক্তির সড়ক।
একটি ধীমান আলো ছড়িয়ে কবি পৌঁছে গেছেন পাঠক-পাঠিকার
মননে খুব সার্থকতার সাথে ।
ধন্যবাদ - কবি আকাশ অম্বর ।
ছবি- হাজেল মাব্বট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।