বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে, অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে আবার অনেকের সাথে শত্রুতা ও হয়েছে। যা হয় সচরাচর। আমরা কয়েক বন্ধু ছিলাম, যাদেরকে সবাই হরিহর আত্না বলেই জানত। বিশেষ করে আমার ৫ জন। আর এই ৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত সবাই ৫ মাস্কেটিয়ার্স নামে ডাকত।
আজকের গল্পটা তাদের ২ জনকে নিয়ে। আমার বন্ধুদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে প্রকৃত নাম প্রকাশ করলাম না।
এক্স সবসময় সব বন্ধুদের শুধু নয় পরিচিত সবার জন্য ছিল নিবেদিত প্রাণ। একবার পরীক্ষার মধ্যে ওয়াই খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক্স ওয়াইকে নিয়ে খুব ছুটাছুটি করে এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
শুধু তাই নয়, ওয়াই অসুস্থ এজন্য ক্লাসের বাকি সবাইকে মোটিভেট করে পরীক্ষাই স্থগিত করে দেয়। ওয়াইএর সেবা করতে গিয়ে বেচারা এক্স নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ক্যাম্পাস থেকে তার বাড়ি বেশী দূরে না হওয়ায় (মাত্র ২৭ কি:মি তাকে আমরা সবাই মিলে তার বাড়িতে রেখে আসি। এবং পরবর্তী পরীক্ষার দিনে তাকে ছাড়া আমরা সবাই পরীক্ষা দিয়ে আসি যার মধ্যে ওয়াই ও ছিল। এক্স পরীক্ষা দিতে আসেনি জানতে পেরে আমাদের মনটা খুব খারাপ হলেও পরবর্তীতে এক্স এটা নিয়ে কোনদিন কোন কথা বলেনি।
যাই হোক এভাবে একদিন আমরা সবাই পাস করে বের হলাম।
এক্স এর আবার ক্যাম্পাসে খুব বেশী জনপ্রিয়তা ছিল, এবং সেই সাথে রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিদের একটা সুনজর তার উপর সবসময় থাকত, যদিও সে একবার মাত্র এই রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। সে বিষয়টিই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
ওয়াই এর খুব ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে, কিন্তু রেজাল্টের দৌড়ে সে কিছুটা পিছিয়ে, তাই তার মা এবং বড়ভাই এক্সকে খুব করে ধরল যেন ওয়াই এর জন্য সে কিছু করে। এক্স তখন আমাদের সাথে পরামর্শ করল। আমরা ও তাকে ধরলাম যে করে হোক ওয়াইকে শিক্ষক করতে হবে।
আমাদের অনুরোধে এক্স রাজী হলো সে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবে। আলোচনায় সে আমাকে সাথে রাখল। মোট তিন লক্ষ টাকার একটা রফা হলো, যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা অগ্রীম দিতে হবে আর নিয়োগ পেলে বাকী আড়াই লাখ। একটা ডেট ও ঠিক হলো অগ্রীম টাকা দেয়ার জন্য। আমরা দু'জন বিষয়টি ওয়াইকে জানালাম, সে বলল সময়মত সে টাকা দিয়ে দেবে।
কিন্তু যেদিন টাকা দেয়ার কথা সেদিন সকালে সে মোবাইলে জানাল যে সে কোনভাবেই টাকাটা জোগাড় করতে পারেনি, আমরা যেন টাকাটার একটা কোন ব্যবস্থা করি।
আমি খুব ভেঙ্গে পড়লাম। এক্সএর সাথে আলোচনা করলাম, সে বললো দেখি কি করা যায়। অনেক চেষ্টা করেও যখন কিছু করতে পারলাম না, তখন এক্স এর মা কোরবানী ঈদ এ গরু কেনা এবং পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করার জন্য যে ৫০০০০ টাকা বাজেট করেছিলেন সে টাকাটা এক্স এনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌছে দেয় এবং যথারীতি আমি সেখানে হাজির ছিলাম। এর কিছুদিন পর ওয়াই এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পায় এবং তারপরই সে এক্স এর অবদানের কথা বেমালুম ভূলে যায়।
এক্স তখন ওকে বলেছিল এডহক চাকুরী আজ আছে কাল নেই, স্থায়ী নিয়োগ পেতে চাইলে দূর্ভাষীকে সাথে নিয়ে বাকী টাকাটা যথাস্থানে দিয়ে দিও। কিন্তু ওয়াই এক্স এর সাথে সাথে আমাকে ও ভূল বোঝে। এরপর আমি বা এক্স ওর নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে আর কোনদিন কোন কথা বলিনি।
ছয় মাস পরে নিয়োগ বোর্ড থেকে ওয়াই ডিনাইড হয়ে ফিরে আসে এবং তার কিছুদিন পরে ইংল্যান্ড পাড়ি জমায়। যাওয়ার সময় বা যাওয়ার পরে ওয়াই এক্স বা আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি।
এমন ও হয়েছে আমরা বেশ কয়েকজন একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি তখন ওয়াই এমন কেউকে ফোন করেছে যার নাম আমরা পারতপক্ষে মুখে আনি না এবং সে আমাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ওয়াই এর সাথে কথা বলছে। এমন দু:খ নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি গত সাড়ে তিনটি বছর।
আজ বিকালে কোন কাজ ছিল না, এমনই বসে বসে নেটে ঘুরাঘুরি করছি। হঠাৎ মেসেঞ্জারে নক করল এক্স। বলল একটা অডিও ফাইল পাঠাচ্ছি রিসিভ কর এবং শুনে বলবি সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে।
যথারীতি ফাইলটা রিসিভ করে শুনে দেখি এক্স ও ওয়াই এর মোবাইলে কথোপকথন। ওয়াই আজ বিকালে এক্সকে কল করেছে এবং সে ১৪ মিনিট ৫২ সেকেন্ড কথা ও বলেছে। যার মূল কথা আগামী তিনমাসের মধ্যে মি. ওয়াই দেশে আসছেন এবং বিয়ে করতে চান, একটা মেয়েকে সে পছন্দ করে, সে মেয়ের কাছে বিষয়টি বলতে হবে এবং এ দায়িত্ব এক্সকেই নেয়ার অনুরোধ করেছে।
এক্স আমার কাছে জানতে চেয়েছে, একবার চাকুরীর জন্য মধ্যস্থতা করতে গিয়ে নাকানি চুবানি সাথে আক্কেল সেলামী দিতে হয়েছে, এবার বিয়ের মধ্যস্থতা করতে গিয়ে কি দিতে হবে, আর কাজটা করা কতটা ঠিক হবে।
ব্লগার বন্ধুরা আপনারাই বলুন এক্স এর এখন কি করা উচিৎ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।