আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
কিংবদন্তি কমরেড জ্যোতি বসুর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহতঃ
Click This Link
কিংবদন্তি পুরুষ
রাশেদ খান মেনন
কমরেড জ্যোতি বসু চলে গেলেন। তার সঙ্গে চলে গেল বাংলাদেশকে ভালোবাসার একজন মানুষ। পিতৃভূমি যদিও এই বাংলাদেশেই, তবে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন কলকাতার নাগরিক পরিবেশে। বড় হয়ে ওঠা, লেখাপড়াও সেখানে; কিন্তু তারপরও তিনি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ এক ধরনের টান অনুভব করতেন, যার প্রকাশ বিভিন্ন সময় দেখা যেত।
উনিশশ' একাত্তর সাল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তার কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয়
যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন হয়েছে। সিপিআই(এম) তখন একদিকে কংগ্রেস, অন্যদিকে নকশাল_ দু'ধারী আক্রমণের মুখে। অবস্থাটা এমন যে, কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে সিপিআই(এম) কর্মীরা উচ্ছেদ হয়ে গেছেন।
সেসব জায়গায় তাদের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ। এ রকম একটি প্রতিকূল পরিবেশ, তারপরও কমরেড জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে সিপিআই(এম) ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে। সে সময়ই তার সঙ্গে প্রথম দেখা। কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটির পক্ষ হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গেছি। সাধারণভাবে রাশভারী মানুষ।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রসঙ্গ শুনেছেন গভীর আগ্রহ ভরে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা বামপন্থিদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হতে সহায়তা করেছেন।
কেউ বলতে পারেন, সে সময় পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, সারা ভারতের মানুষই বাংলাদেশের সপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। কমরেড জ্যোতি বসুর সমর্থন আর ১০ জনের মতো ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতার প্রশ্ন তো বটেই, তবে তাকে আরও স্পষ্টভাবে যে বোধ আলোড়িত করেছে তাহলো বাংলাদেশের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা।
বাংলাদেশের প্রতি তার এই ভালোবাসা থেকেই তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধীয় বিষয় মীমাংসায় সব সময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। তিন বিঘা থেকে গঙ্গার পানি বণ্টন মীমাংসার ক্ষেত্রে কমরেড জ্যোতি বসুর একক উদ্যোগই প্রধান ভূমিকা রেখেছে। তিন বিঘার ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের শরিকদের কাছ থেকে, আর গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে খোদ কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে।
সেই জ্যোতি বসু ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন_ এই সম্ভাবনায় বাংলাদেশের মানুষই সর্বাপেক্ষা খুশি হয়েছিল। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে এদেশের মানুষের আশা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশে এলে তাকে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। একান্ত আলাপে তিনি অকপটে বলেছেন, সেটা ছিল এক 'ঐতিহাসিক ভুল'; কিন্তু কতখানি শৃঙ্খলাবোধ থাকলে এ ধরনের একটি সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা যায়, সেটাও আবার দেখিয়েছেন তিনি।
এ ধরনের কারণেই ভারতের রাজনীতির কিংবদন্তি পুরুষে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। একটানা তেইশ বছর বামফ্রন্ট সরকার চালিয়েছে। আর এই সময়কালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ চেহারাটা পাল্টে দিয়েছেন তিনি।
পাল্টে দিয়েছেন খোদ কলকাতার চেহারাটাও। গ্রামে ভূমি সংস্কারের বদৌলতে জমির ওপর অধিকার পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সেই মানুষের ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছেন তিনি। গ্রাম থেকে যে মানুষগুলো কলকাতায় গিয়ে ফুটপাতে ঘুমাত, তাদের তিনি গ্রামে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর এভাবে কলকাতার চেহারাও পাল্টে দিয়েছেন।
পাল্টে দিয়েছেন রাজ্যের চেহারাও। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের মধ্যে রাজ্যকে তিনি অগ্রবর্তী স্থানে নিয়ে গেছেন।
সেই পশ্চিমবঙ্গে আবার দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীলরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পরিবর্তনের নামে পুরনো ব্যবস্থায় তারা ফিরিয়ে দিতে চায় পশ্চিমবঙ্গকে। কমরেড জ্যোতি বসু তার নবতিপর বয়সেও ওই রাজনীতির বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন।
স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন সব পরিবর্তনই প্রগতি-অগ্রগতির জন্য নয়। তার ওই কথার মর্যাদা রেখে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ঠিক সেই সময়েই তিনি চলে গেলেন। এটা পশ্চিমবঙ্গ এবং তার রাজনীতির জন্য কত ক্ষতির, সেটা আমাদের পক্ষে পরিমাপ করা মুশকিল। যেটা উপলব্ধির, তা হলো পশ্চিমবঙ্গের কোনো পশ্চাদগমন বাংলাদেশের জন্যও বিপদ ডেকে আনবে।
আর সেখানে বাংলাদেশের জন্য দাঁড়ানোর যে লোকটি ছিলেন তিনি থাকবেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।