যদি আজ বিরোধীদলীয় নেতাও প্রেস ব্রিফিং দিতেন তবে প্রোটোকল অনুযায়ী তার ভাষনের গুরুত্ব কমে যেত । তবে ভাবতে ইচ্ছা করছে যে এটা তার সহনশীল এবং সংঘাতের রাজনীতি এড়ানোর পদক্ষেপ ।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ১ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে ছাত্রদলের এক সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ভারত সফরে গিয়ে 'দেশবিরোধী' কোনো চুক্তি করলে প্রধানমন্ত্রীর ফেরার পথে এয়ারপোর্ট থেকে রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে দেবেন।
জবাবে শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছরে যে কাঁটা বিছানো হয়েছে তা পরিষ্কার করতেই তার সময় চলে যাচ্ছে।
আজ বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী তার ভারত সফর নিয়ে প্রেসব্রিফিং করবেন ।
আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভারত সফরের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি তিন চুক্তি ও দুই সমঝোতা স্মারকের পটভূমিসহ সুফল তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কে বিরোধী দলের অপপ্রচারে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বানও থাকবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। এ বিষয়ে বিরোধী দলের বক্তব্য সংসদে এসে তুলে ধরার আহ্বান জানাবেন তিনি। এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি ভারত সফর সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ব্যাখ্যা করবেন ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি দেশের জন্য ক্ষতিকারক নয়, বরং তা দেশের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প সম্পর্কে ভারতের মনোভাবে মোটামুটি ভারত সফর টীম দু;শ্চিন্তাগ্রস্হ নয় আগের মত । কারন টিপাইমুখী বাধ করলে বাংলাদেশের অনেক অনেক দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্হ হবার সম্ভাবনা আছে , সেক্ষেত্রে আমি আশা করি ভারত এই বাধ যদি করে তবে করার আগে বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরন দিয়েই করবে । আর আমার মনে হয়না এই বাধ না করা ছারা ইন্ডিয়ার আরকোন পথ আছে । রাইজিং ইন্ডিয়াকে তার প্রয়োজন মেটাতে এই বাধ দরকার তার থেকে বেশী দরকার ঐ বাধে আমার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কিনা তা নির্নয় করে আগে আগে দিয়ে দেওয়া । যাই হোক দেখি প্রধানমন্ত্রী কি বলেন ।
চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্কে নেমেছে সরকারি ও বিরোধী দল। বিরোধীদল একে 'দেশের স্বার্থবিরোধী' চুক্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন । মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে তারা এটদিনে একটা ইস্যু পেয়েছে । দলীয় ১০টি দাবিতে সংসদ বর্জন অব্যাহত রাখলেও জনস্বার্থে রাজপথে নামার তেমন কোনো ইস্যুও এতদিন ছিলনা । ভয় হচ্ছে আমরা কি আবার সেই সংঘাটের দিকে ফিরে যাচ্ছি ? আশাকরতে ইচ্ছা করছে মাননীয় প্রাক্তনপ্রধানমন্ত্রী আমাদের সামনে কোন সহিংস ভবিষ্যত দ্বারা করাবেন না এবং নো-পয়েন্ট অব রিটার্ন যোন তৈরী করে দিবেন না ।
প্রায় ১২ বছর পর কোন সরকার প্রধান ভারত সফর করল । এক সফরে কি নিয়ে আসতে পারে । আর কি দিয়ে আসল তা দেখার জন্য তো আমাদের ইকটু হলেও অপেক্ষা করতেই হবে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বছরের কাজের মূল্যায়ন করুন- প্রশ্নের ছিল জরিপে-- দুই হাজারের বেশি উত্তরদাতার মতামত বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়-
* যারা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করেছেন, তাদের একটি অংশও মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালোভাবেই দেশ পরিচালনা করছেন।
* উত্তরদাতাদের ৩০.৪০ শতাংশ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম সন্তোষজনক।
* অপরদিকে, মোটামুটি সন্তোষজনক মনে করছেন ৫৩ শতাংশ।
সরকারের প্রধান সাফল্য কী---এই প্রশ্নে কয়েকজন উত্তরদাতা জানিয়েছেন,
প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন কম, কিন্তু কাজ করেছেন বেশি।
উত্তর মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, সরকারবিরোধিতায় যারা সোচ্চার, তাদের একটি অংশও প্রধানমন্ত্রীর কাজকে মোটামুটি সন্তোষজনক মনে করছেন।
জরিপের রায় যদি এমন হয় তবে কি আমরা মাননীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে সামান্যতম এই আশ্বাশ আশা করতে পারিনা ?
সে তো দূরে থাক রাজপথে আন্দোলনের জন্য সমমনা রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার নাগরিকদের সমন্বয়ে সর্বদলীয় জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ভারতবিরোধী বামপন্থি দল এবং ছোট ছোট ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা।
তার মানে আবার 'আল্টিমেটাম' প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, গণমিছিল , আগুন , খুন , টিভি চ্যানেল গুলো পুলিশের বাশি আর চিৎকারে ভরে উঠবে ??
এই চুক্তি সম্পর্কে তাদের ভিউ হল :
** বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন :
- ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
- অতীতে তার বাবার এ ধরনের সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী। তিনি শুরু করে গিয়েছিলেন ইতি টানলেন তার কন্যা শেখ হাসিনা নিজেই। এ ধরনের চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না।
- প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর কিছুই আনতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে জনগণ আশা করেছিলেন, তিনি কিছু আনতে পারবেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি ভারতকেই বেশি দিয়ে এসেছেন। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রানজিটের সুযোগ দেওয়া জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ। এতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রানজিটে শুধু পণ্য পারাপারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যভাবে বাংলাদেশকে ব্যবহারের চেষ্টা হবে।
** বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ : তাদের অধিকাংশ সাংসদই সংসদে যেতে রাজি। সরকারের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সংসদের ভেতরে ও বাইরে দু'জায়গা থেকেই প্রতিবাদ করতে হবে। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে দেশবিরোধী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এখন আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না।
** বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে দেশের স্বার্থ পুরোপুরি জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।
রাজপথে আন্দোলন ছাড়া তাদের আর কোনো গত্যন্তর নেই।
** প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশের জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণই বেশি বলে দাবি করেছে বাসদের নেতা খালেকুজ্জামান । প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে যে সাফল্য ও আশাবাদ প্রচার করা হচ্ছে তা সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন ও সার্বভৌমত্বের বিবেচনায় নিলে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণই বেশি দাঁড়াবে। ভারত-বাংলাদেশের ভারসাম্যহীন শক্তি সামর্থ্যকে বিবেচনায় না নিয়ে যেভাবে হিসেব করা হচ্ছে তাতে বড় ধরণের শুভঙ্করের ফাঁক ও ফাঁকি থেকে যাবে।
** সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলছে :
- "ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ভারত সমাধান করবে।
আর আমাদের সমস্যা আমরা সমাধান করব। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা নাক গলাতে চাই না, কারো সঙ্গে সংঘাতেও যেতে চাই না। আবার নিরাপত্তা চুক্তি করে বাংলাদেশকে কোনো একটি পক্ষভুক্ত করে ফেলাও সমর্থন করি না। "
- "আগে যেভাবে আমেরিকাকে কন্টেইনার টার্মিনাল ব্যবহার করতে জনগণ বাধা দিয়েছিল তেমনি এবার ভারতকে বন্দর ব্যবহারেও বাধা দেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে জনগণ সক্রিয় হবেন। "
- "ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থের বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলেন, এটি হতাশাজনক।
"
- "মরহুম শেখ মুজিবর রহমান কী কারণে ৪৭ সালে ভারত থেকে বিভক্ত হয়েছিলেন সেই মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিষয়টি তার মেয়েকে বুঝতে হবে। আমরা চাই শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ মুজিবের নীতিতে ফিরে যাক"
- "ভারতের সঙ্গে বন্দর ব্যবহারের চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়েছে। আর এর ফলে চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই সফরের মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করল আসলে তারা চাণক্য। "
- "ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি করে সরকার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী কক্সবাজার পর্যন্ত দেশের স্পর্শকাতর এই সামরিক ক্ষেত্রকে চরম হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
"
- "এক সময় উলফার জন্য অবৈধভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো বলে প্রচারণা রয়েছে। এখন বৈধভাবে উত্তর ভারতের উলফা বিরোধীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্যই এই চুক্তি করা হয়েছে। "
- "এর চেয়ে অবমাননাকর ও লজ্জার কাজ আর কিছুই হতে পারে না। এ চুক্তি করে সরকার দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য করেছে। "
- "আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।
তার অর্থ এই নয়, আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা রপ্তানি করতে হবে, আবার ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আমদানি করতে হবে। "
** বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীসংঘের স্থায়ী সদস্য হওয়ার ব্যাপারে ভারতকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার আগে জাতীয় সংসদে আলোচনা করা উচিত ছিল। তিনি মনে করেন, এ ধরনের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে নিলে দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা পাবে।
** স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে আঁচল ভরে দিয়ে এসেছেন।
কিছুই নিয়ে আসেননি। এনেছেন শুধু আশ্বাস। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে জনগণ এ ধরনের আশ্বাস বিশ্বাস করতে পারে না। এপার-ওপারে পণ্য আমদানির মাধ্যমে চোরাচালানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে ভারতের বাজারে পরিণত হবে।
ভারতের পণ্যের চাপে বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
** বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান বলেন, তিনি মনে করেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মূলত 'সন্ত্রাস দমনে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা' চুক্তিটিই হয়েছে। বাকিগুলো এ চুক্তির 'এ', 'বি' ও 'সি' ক্রমিকের উপচুক্তি। বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে যে 'বিশেষ চুক্তি'র আশা করেছিলেন তার কিছু হয়নি।
তবে আমি আশাহত হয়েছি বিরোধীদলের আরো স্পেসিফিকলি বলা উচিত ছিল ।
প্রধানমন্ত্রী খারাপটা কি করেছে , কোন চুক্তি কিভাবে দেশের খারাপ করবে । তাদের কথার যৌক্তিকতা স্পেসিফিকলি না করলে জনগন কি তাদের এইসব কথা মেনে নেবে ? বিশ্বাশ করবে ?
দেখা যাক প্রধানমন্ত্রী কি বলেন ..
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।