আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই, আমায় কতটা ভালবাসো সেই কথাটা জানতে চাই..
মুক্তি পাওয়ার ১৭ দিনের মাথায় জেমস ক্যামেরনের স্বপ্নের ছবি ‘Avatar’ একে একে ভেঙে ফেলছে আয়ের সব রেকর্ড। এ পর্যন্ত ছবির আয়ের পরিমাণ ১১৪ কোটি ডলার।
এভাটার চলচিত্রের মূল কাহিনী জেমস কেমেরন লিখেছিলেন অনেক আগে, চলচিত্র বানানোর ইচ্ছা থেকে। তবে যে সময় তিনি মুভির মূল কাহিনী লিখে শেষ করলেন তখন বুঝতে পারলেন, তা চলচিত্রে রূপ দেওয়ার মতো প্রযুক্তি চলচিত্র জগতে তখনও আসেনি। তাই কল্পনার কাহিনীকে বাস্তব জগতে অর্থাৎ সিনেমার ফিতায় বন্দি করতে পারেননি।
এভাটার (Avatar) শব্দটি ধার করা হয়েছে মহাভারতের অবতার শব্দ থেকে। অবতার হল মহাভারত অনুসারে দেবতা শ্রী কৃষ্ণ। আর জেমস কেমেরনের এভাটারের সাজসজ্জা তাই অনেকটাই ভারতীয় পূরানের চরিত্র শ্রী কৃষ্ণের মতোই। ছবিটিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তার সাথে মিল রয়েছে ‘লর্ড অব দি রিংস’ এবং ‘কিং কং’ চলচিত্রের। তবে কেমেরন আরো কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছেন কম্পিউটার ভার্চুয়াল জগতের সাহায্য নিয়ে।
এভাটার চলচিত্রে অভিনেতা অভিনেত্রীরা মূল যে অভিনয়টা করেছেন তা কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে রূপান্তর করা হয়েছে থ্রিডি ছবিতে। আর ‘এভাটার’ই হল হলিউডের প্রথম পূর্ণাঙ্গ থ্রিডি সিনেমা।
আসুন তাহলে দেখে নেই প্রায় এক যুগ পরে জেমস কেমেরন যে মুভি নিয়ে এলেন তার কাহিনী কেমন? তার আগে বলে রাখি এভাটার হল সায়েন্স ফিকশন মুভি।
যারা এখনো সিনেমাটি দেখেননি বা দেখবেন তারা যদি ছবির গল্পটি পড়ে নেন তাহলে মুভিটি বুঝা সহজ হবে...
এভাটারের কাহিনী হল ২১৫৪ সালের পটভূমিতে রচিত। ২১৫৪ সালে পৃথিবী নামক গ্রহটা প্রায় মৃত, শক্তির সকল উৎস শেষ হয়ে এসেছে।
তখন পৃথিবীর অধিবাসীদের একদল প্রতিনিধি (আমেরিকান সৈন্য বাহিনীর একটি দল) পাড়ি জমায় ‘প্যান্ডোরা’ নামের গ্রহে।
প্যান্ডোরা গ্রহে আছে পৃথিবীকে বাঁচানোর মত এক শক্তির উৎস, যার নাম ‘আনঅবটেনিয়াম’।
তবে পৃথিবীর জন্য এটি আহরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্যান্ডোরা গ্রহের স্হানীয় অধিবাসীরা। মানুষের মতোই বাহ্যিক আকার কিন্তু লম্বা ও লেজ বিশিষ্ট এ স্হানীয় অধিবাসীরা ‘ন্যা’ভি’ নামে পরিচিত। (সায়েন্স ফিকশন ছবির এলিয়েন বলা যায়) ন্যা’ভি রা নিজেদের গ্রহের ইকো-সিস্টেম বা জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বদ্ধ পরিকর।
আর নিজেদের গ্রহের শক্তির উৎস আনঅবটেনিয়াম অন্য গ্রহের প্রাণীরা এসে নিয়ে যাক তা তারা চায় না। ছবিতে ন্যা’ভি’দের উপস্হাপন করা হয়েছে হিংস্র, নিষ্ঠুর, গর্বিত আর সাহসী যোদ্ধা হিসেবে।
এভাটার গল্পের নায়ক জেফ সুলি (অভিনয় করেছেন স্যাম ওয়র্থিংটন) যে একজন মেরিন সেনা সদস্য। পৃথিবীতে এক যুদ্ধে জেফ তার এক পা হারিয়েছে। তারই যমজ ভাই হঠাৎ মারা যায়, যে কিনা জীব বিজ্ঞানী ছিল।
তখন জেফ’কে আমন্ত্রণ জানানো হয় যমজ ভাইয়ের বদলে বিজ্ঞানী হিসেবে প্যান্ডোরাতে অভিযানে যাওয়ার। তখন সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সে যোগ দেয় বিজ্ঞানীদের ছোট একটি দলে
যেই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. গ্রেস অগাস্টিন (অভিনয় করেছেন সিগোর্নি উয়েভার)।
বিজ্ঞানীদের দলটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় প্যান্ডোরাতে গিয়ে সেখানকার আদিবাসী ন্যা’ভি দের সম্পর্কে বিষাদ তথ্য সংগ্রহ করার। অপরদিকে প্যান্ডোরা গ্রহের জলবায়ু ও পরিবেশ মানুষের জন্য খুব একটা প্রতিকূল নয়। লম্বা সময়ের জন্য সেখানে মানুষ অবস্হান করতে পারে না আর প্যান্ডোরা গ্রহের স্বাভাবিক বায়ুচাপ সহ্য করা মানুষের জন্য অসম্ভব।
তাই ন্যাভি’দের সাথে যোগাযোগ করা ও ভাব বিনিময় করা সম্ভব হচ্ছিল না। জীববিজ্ঞানী দলটি প্যান্ডোরা গ্রহের জলবায়ু ও জীব বৈচিত্র্যের তথ্য সংগ্রহ করে এমন এক ধরনের ক্লোন জীব তৈরি করে যার অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক ন্যাভি’দের মতো।
এই মানুষ আর ন্যাভি’র বৈশিষ্ট্যে তৈরি নতুন প্রজাতির নামকরণ করা হয় এভাটার।
এর শব্দের সঠিক অর্থ হচ্ছে: দুনিয়াতে মানুষের জন্য দেবতার প্রতিমূর্তি বা দেবতার দূত। তেমনি প্যান্ডোরা গ্রহে ন্যাভি’দের জন্য মানুষের প্রতিমূর্তি বা দূত হল এভাটার।
এভাটাররা সাধারণ চামড়ার বিছানায় ঘুমায়, ঘুমন্ত অবস্হায় তাদের দেহটি ঘুরে বেড়ায় প্যান্ডোরা গ্রহে আর ঘুম থেকে জেগে উঠলেই তারা ফিরে আসে মানুষের জগতে নিজের দেহে।
জেফ সুলি’কে কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই এভাটারে রূপান্তর করা হয়। অবশ্য জগতটি তার ভাল লেগে যায়, কারণ মানুষের জগতে তার একটি পা অকেজো কিন্তু ‘এভাটার জগতে প্যান্ডোরাতে তার দু’টি পা একদম কার্যক্ষম। এমনকি এভাটার অবস্হায় তার বয়সও কমে গিয়ে নবীন হয়ে যায়। নবীন বয়সের মেরিন সেনা হিসেবে নিজের কর্মদক্ষ পুরানো রূপটি ফিরে পায় জেফ এভাটার অবস্হায় রূপান্তরের মাধ্যমে।
প্যান্ডোরা গ্রহে নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করার সময় প্রথমদিকে বিপদে পড়ে জেফ। সেখানে গিয়ে একবার জেফ হারিয়ে মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাকে মারতে গিয়ে বিপদ থেকে বাঁচায় সেই গ্রহের এক ন্যা’ভি অধিবাসী মেয়ে যার নাম ‘নেয়েত্তি’। নেয়েত্তি তাকে শেখায় কিভাবে প্যান্ডোরার গহীন অরণ্যে বেঁচে থাকতে হয়। ন্যাভি’দের ভাষা আর লোকাচারও রপ্ত করে নেয় জেফ।
জেফে’র সাথে নেয়েত্তি’র প্রেমের সম্পর্কও গড়ে ওঠে এক সময়।
অনেক ন্যা’ভি জেফ’কে সন্দেহ করে নকল দেহধারী এক শয়তান হিসেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেফকে ন্যাভি’রা গ্রহণও করে। মেরিন সেনার সকল জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এক সময় সে নিজেকে ন্যাভি’দের নেতার পর্যায়ে নিয়ে যায়। ন্যাভি’দের সাথে কয়েক মাস কাটানোর পর জেফ উপলব্ধি করে প্যান্ডোরা গ্রহই হচ্ছে তার জন্য আসল পৃথিবী।
সে যদিও তার কাজ ঠিকই শেষ করে, কর্নেল মাইল্স ফোয়াট্রিচ (স্টিফেন ল্যান্ড) এর কাছে ন্যাভিদের প্রতিরক্ষা সম্পর্কে সকল তথ্য ঠিক ঠাক সরবরাহ করে। কিন্তু যখন সে নেয়েত্তি’র চোখ দিয়ে প্যান্ডোরাকে দেখা শুরু করে, পৃথিবীর মানুষ আর ন্যাভিদের মধ্যে তখন শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করার মত যথেষ্ট বিশ্বাস স্হাপন করার ব্যাপারে সে আশাবাদী হয়ে ওঠে। কিন্তু কর্পোরেশন চায় ন্যা’ভিদের আবাসস্হল, যেখানে রয়েছে মহা মূল্যবান ‘আনঅবটেনিয়াম’। পৃথিবীর মানুষের কাছে তাই ন্যাভিদের সাথে শান্তির কোন কারণ থাকতে পারে না। আর তখনই দ্বন্দ শুরু হয়...
সিনেমার এক-তৃতীয়াংশ দখল করে আছে প্যান্ডোরার সাথে পৃথিবীর যুদ্ধ।
সেই গ্রহের পশুপাখি, মাটি এবং আকাশের প্রাণীরা, ন্যাভিদের সাথে এসব প্রাণীরা একসাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। আর মানুষ যুদ্ধ করে মারণাস্ত্র যা ন্যাভিদের ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
জেমস ক্যামেরন এরপর দর্শকদের যুদ্ধের দৃশ্য দেখিয়েছেন উত্তেজনাপূর্ণ থ্রিডি চিত্রের মাধ্যমে। দেখিয়েছে কিভাবে প্রতিটি বীরত্বপূর্ণ মৃত্যু অথবা কাপুরুষতা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। এই যুদ্ধের দৃশ্যগুলো একদম ‘যাদুর মন্ত্রের’ মতোই থ্রিডি ছবিতে রূপান্তর করেছেন তিনি।
কেমেরন কেন ছবিটি বানাতে চার বছর লাগিয়েছেন, তা এটি দেখলে বুঝা যাবে। যদিও আসল মজাটি পাওয়া যাবে থ্রিডি মুভি হলে ছবিটি দেখতে পারলে। এভাটার চলচিত্রটি সিনেমার জগতে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছে।
আইসবার্গের ধাক্কায় নয়, এবার ‘টাইটানিক’ ডুবতে পারে ‘Avatar’-এর ধাক্কায়! বক্স অফিস রেকর্ড সেই ইতিঙ্গই দিচ্ছে।
সংগৃহীত...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।