আসাদ গেট, আড়ং-এর নিচতলা। বেশ জমজমাট। কেনাকাটা করছে দু/চার জন, বেশিরভাগই যেন রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে আর বার বার করে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। অপেক্ষার প্রহর। কেউ কারো জন্য কোনদিন অপেক্ষা করেনি এমন মানুষের সংখ্যা কম।
কিন্তু যে তার প্রিয়জনের জন্য কোথাও অপেক্ষা করেছে তার কাছে সময়ের সংজ্ঞাটা অন্য রকম। আর যাকে কারো জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি সে জীবনের একটা ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ঢাকা শহরে প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখা করার বা কোন রেস্টুরেণ্টে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য একটা ব্যাপার বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ধানমণ্ডি, উত্তরা, গুলশান, মৌচাক কিংবা আরো যেখানে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেখানে কম বয়সের ছেলে-মেয়েরা, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা একত্রিত হয়। আর আড়ং-এর নিচে যারা দেখা করতে আসে তাদের মধ্যে অল্প বয়সের প্রেমিক-প্রেমিকাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
এখানে অপেক্ষামান বেশিরভাগ প্রেমিক-প্রেমিকা বয়সে একটু বেশি। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখে অনেককেই গৃহিণী বলে মনে হয়। দেশের সমাজ ব্যবস্থা যে কত অসঙ্গতিপূর্ণ তা লিখে শেষ করার মতো সাহিত্যিক এখনো জম্মেছে কী না তা বলা কঠিন। অবিবাহিত দুজন মানব-মানবীর ভালোবাসাকে প্রেম বলা হয়, অনেকেই এই প্রেমকে পবিত্র বলে সংজ্ঞায়িত করে কিন্তু বিবাহিত পুরুষ-মহিলার প্রেমকে আখ্যায়িত করে পরকীয়া প্রেম বলে। আজকাল কোন কোন বিয়ে হচ্ছে মোবাইল ফোনে, আগামীতে হয়ত ইণ্টারনেট কিংবা আরো কোন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিয়ে হবে।
যে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমকে কয়েকমিনিট আগেও পবিত্র বলা হতো মোবাইল ফোনে বিয়ে করার পরেই তার প্রেমকে পরকীয়া প্রেম বলে তিরস্কার করা হয়। এটা সামাজিক অসঙ্গতির একটা প্রচলিত নিয়ম। আসলে দু’টি হৃদয়ের নি:স্বার্থ, শুভকামনাকে প্রেম বলে। এই সম্পর্কের মধ্যে বিভাজন করা অনুচিত।
কেউ কেউ শাড়ি পরে এসেছে, শাড়ির সঙ্গে রং মিলিয়ে লিপস্টিক, কপালে টিপ।
যাদের নিজেকে উচ্চতায় কম বলে মনে হয়েছে তারা উঁচু স্যাণ্ডেল পরেছে, বলতে গেলে সুন্দরভাবে সেজেগুজে তার প্রিয় মানুষটির সামনে নিজেকে সুন্দর হিসেবে যোগ্য করে উপস্থাপন করতে, ছেলেদের ক্ষেত্রেও নিজেকে আকর্ষনীয় করে তোলার চেষ্টার কমতি নেই।
একটা ট্যাক্সি ক্যাব এসে দাঁড়ালো, ভাড়া মিটিয়ে একজন ত্রিশোর্ধ ভদ্রলোক একবার এদিক সেদিক তাকাল। তারপর মোবাইলের বাটন টিপল। প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই একজন মহিলা পায়চারি করছিল, তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। মহিলাটির বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই।
সে রিসিভ করল, হ্যালো, আর কতক্ষণ সময় লাগবে?
আমি তো আড়ং-এর নিচে এসে পৌঁছালাম একেবারে ভিজে গেছি।
ভদ্র মহিলা কাছেই ছিল, সে এগিয়ে এসে একটা রুমাল বের করে দিয়ে বলল, আগে চুলের পানিগুলো মুছে ফেলো।
শ্যামলী?
হ্যাঁ।
ভদ্রলোক চুলের পানি মুছে ফেলল তারপর শ্যামলীর চোখের চোখ রেখে বলল, যার গায়ের রং এতো ফর্সা তার নাম শ্যামলী হলো কী করে?
শ্যামলীর মুখ উজ্জ্বল হলো, সে খুব খুশি হলো। আজ তুষারের সঙ্গে তার প্রথম দেখা, এসব ক্ষেত্রে প্রথম দেখায় পছন্দ না হওয়ার একটা আশংকা থাকে।
কিন্তু তুষারের কথায় সে যেন অনেকটা নিশ্চিত হলো।
দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ির দিকে চলে গেল।
সিঁড়ির সামনে তখন প্রতীক্ষার্থীনিদের একটা দল। হয়ত কারো সঙ্গে কারো পরিচয় নেই, তাই কারো মুখে কোন কথা নেই কিন্তু একটা কথার গুঞ্জণ আছে। প্রায় সকলের মধ্যে প্রতীক্ষা আর কৌতুহলী দৃষ্টি আছে, কেউ কেউ বার বার মোবাইলের বাটন টিপছে, কেউ কেউ এই বৃষ্টির মধ্যেও মাঝে মাঝে উঁকি মেরে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে।
প্রতীক্ষার্থীদের কোন দল নেই বিচ্ছিন্নভাবে নিচতলায় হাঁটাহাঁটি করছে প্রতীক্ষার্থী এবং প্রতীক্ষার্থীনিগণের হিসেব করলে সংখ্যায় হয়ত সমান সমান হবে।
শোভার সঙ্গে অর্ণবের পরিচয় একটা ফাস্ট ফুড-এর দোকানে। শোভার তখন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার প্রায় মাসখানেক হয়েছে। ঢাকা শহরে তার অভিজ্ঞতা ইউনিভার্সিটিতে ফরম তোলার পর থেকে। সে তেমন পথ চিনে না, বাসের রুট চিনে না।
সবকিছুতেই তাকে তার রুম মেট-এর ওপর নির্ভর করতে হয়। এই ফাস্ট ফুড-এর দোকানে সে তার রুম মেট-এর সঙ্গে আগেও একদিন এসেছে, আজ কিছুক্ষণ আগে সে রেস্টুরেণ্টে এসেই তাকে মোবাইল করেছে কিন্তু তাকে পাঁচ মিনিটের কথা বলে প্রায় পনেরো মিনিট হলো। সে খুব অশ্বস্থিবোধ করছে। তাছাড়া দোকানে খুব ভীড়, সিটে বসা মাত্র সেলস ম্যানদের চোখ যায় সেদিকে, কয়েকমিনিট অপেক্ষা করলেই চলে আসে, এমনিতেই প্রতিটি টেবিলে একটা করে প্রাইজ লিস্ট আছে, সেলসম্যানদের পিছনের দেওয়ালে বড় বড় অক্ষরে খাবারের মূল্য তালিকা দেওয়া আছে। তারপরও কোন বয় টেবিলের কাছে এসেই প্রাইজ লিস্টটা এগিয়ে দেয়।
যার অর্থ হলো আমাদের এখানে ভীড় আছে সিট তাড়াতাড়ি ফাঁকা করতে হবে।
শোভা একবার মোবাইল করল, কী রে দেরি হবে?
না, তুই একটু বস, আমি আসছি।
দোকানে কোন ফাঁকা সিট নেই, কেউ একা বসেও নেই। তবে সবার কথা বলার মধ্যে একটা মিল আছে, শুধু ঠোঁট দু’টো নড়ছে। কণ্ঠস্বরযেন শুধু দু’জনের কথা বলার মধ্যে সীমিত।
দু’সারি বসার ব্যবস্থা, এক সারিতে একটা টেবিলের উভয় পাশে একটা করে চেয়ার, আরেক সারিতে মুখোমুখি দু’টি করে মোট চারজন বসা যায় এমন আসন ব্যবস্থা। এই সময়টায় দোকানে বেশ ভীড় থাকে, সেলসম্যানরা ঘন ঘন তাকায়, বয় বার বার করে কাছ দিয়ে হেঁটে যায়। শোভা বেশ বিব্রতবোধ করছে।
এমন সময় একটা ছেলে ঢুকল হন্তদন্ত হয়ে। তার ভাবটা এমন ছিল যেন কেউ তার জন্য অপেক্ষা করছে, তার আসতে দেরি হয়েছে।
সে সমস্ত দোকানে একবার চোখ বুলালো তারপর ধীরে ধীরে শোভার টেবিলের সামনে এসে বিনীতভাবে বসার অনুমতি চাইল, এক্সকিউজ মী, এখানে একটু বসতে পারি?
শোভা সংকোচ করল, এদিক-সেদিক একবার তাকাল, না আর কোন সিট ফাঁকা নেই। সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলল, বসুন।
ছেলেটি টেবিলে বসেই মোবাইল টিপতে শুরু করল, তোমার কি আসতে দেরি হবে?
আমি রওয়ানা দিচ্ছি, একটু অপেক্ষা করো প্লিজ।
ছেলেটি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল তারপর আবার মোবাইলে কথা বলার পর তার চোখে-মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটে উঠল।
শোভাও মোবাইলে কথা বলে বিরক্তবোধ করল।
ছেলেটি কৃত্রিম হাসি হেসে বলল, এক্সকিউজ মী যদি কিছু মনে না করেন তবে বলি?
বলুন।
আপনি নিশ্চয় কারো জন্য ওয়েট করছেন?
জি, আমার রুমমেট, আপনি?
আমার ফ্রেণ্ড আসার কথা।
আপনার নাম?
শোভা।
আমি অর্ণব।
শোভা আমরা কিছু খেতে খেতে গল্প করি?
না, লাগবে না।
একবার তাকিয়ে দেখুন সেলসম্যানরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, এদের বিজনেস পলিসিটাই এরকম, বলে অর্ণব শোভাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলল, কী খাবেন বলুন?
আপনি যেটা ভালো মনে করেন।
অর্ণব চলে গেল। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে এলো। দু’জনে খেতে খেতে অনেক গল্প করল, অর্ণব একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। শোভার চেয়ে দু’বছর সিনিয়র।
খাওয়া শেষ করে অর্ণব একবার মোবাইল করল, তোমার আসতে কি খুব দেরি হবে?
সরি অর্ণব আমার একটা সমস্যা হয়েছে আজ আসতে পারছি না।
তুমি তো আমাকে অনেক আগেই বলেছ রওয়ানা দিচ্ছি, তোমার কোন সমস্যা হলে আরো আগেই জানাতে। আমি তোমার জন্য বসে বসে ওয়েট করলাম আর তুমি সরি বলেই শেষ করলে, না? আসলে মেয়েদের জাতটাই এমন, বলে অর্ণব মোবাইলের লাইন কেটে দিল। তারপর আবার স্বাভাবিকহওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু না সে খুব সহজে স্বাভাবিহতে পারছে না।
শোভা অর্ণবকস্বাভাবিককরার চেষ্টা করল, আপনি কিন্তু একটা অবজেকশনেবল কথা বলে ফেলেছেন?
মানে?
এই যে আপনি মেয়েদের জাত তুলে কথা বললেন, এটা খুব অন্যায়, পৃথিবীর সব মেয়েরাই কিন্তু এমন না।
হয়ত আপনি যাদের সঙ্গে মিশেছেন তাদের বেশিরভাগের কাছেই এমন আচরণ পেয়েছেন তাই যে কোন মেয়ে সম্পর্কেই আপনার এমন ধারণা হয়েছে। ছেলেরা তো আবার একজনের সঙ্গে ফ্রেণ্ডশীপ করে সেটিসফাইড না।
অর্ণব কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে, সরি ম্যাডাম, আপনি কিন্তু একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন আরেকটা অন্যায় দিয়ে। দিস ইজ্ নট রাইট।
ওকে, আরো ভালো বন্ধু খুঁজুন, কাউকে খুঁজে পেলে তাকে বোঝারচেষ্টা করুন।
রিয়ালিটি বোঝার চেষ্টা করুন, একটা কথা মনে রাখবেন মেয়েদের সমস্যা অনেক, জবাবদিহিতাও অনেক। দেখবেন ভালো বন্ধু হতে পারে এমন অনেক ভালো মেয়ে আছে।
শোভার মোবাইলের রিং বেজে উঠল। সে রিসিভ করল, হ্যালো।
তুই নিচে নেমে আয়, আমি আর উপরে উঠছি না।
শোভা বলল, সরি আমাকে উঠতে হচ্ছে, আমার রুম মেট নিচে আমার জন্য ওয়েট করছে।
আমার মোবাইল নাম্বারসেভ করে রাখুন, রিং করলে খুশি হবো, বলে অর্ণব তার মোবাইলনাম্বারটাবলল।
ওকে বাই।
অর্ণব বলল, নাইস টু মিট ইউ।
অর্ণবের স্মার্টনেসটা শোভাকে আকৃষ্ট করেছে।
সে প্রায় দিনই তাকে মোবাইল করতে চায় কিন্তু একদিন কয়েকমিনিটের পরিচয়ে তাকে রিং দিতে শোভা সংকোচ বোধ করে।
একদিন সমস্ত সংকোচ কাটিয়ে শোভা অর্ণবকে মোবাইল করল।
অর্ণব রিসিভ করেছে, হ্যালো।
শোভা কানের কাছে মোবাইল নিয়ে চুপ করে রইল।
অর্ণব কয়েকবার হ্যালো, হ্যালো বলার পর শোভা বলল, হ্যালো।
কে বলছেন প্লিজ?
আমি শোভা।
ও এতদিন পর আমাকে মোবাইল করার সময় হলো।
শোভা কিছু বলল না।
দুজনে অনেকক্ষণ কথা হলো।
অর্ণব জিজ্ঞেস করল, এটা কি আপনার মোবাইলনাম্বার?
শোভা একটু জোর দিয়েই বলল, হ্যাঁ।
সব সময় চালু থাকে?
একথা কেন জিজ্ঞেস করছেন, বলুন তো?
না মেয়েদের তো অনেকগুলো করে সিম থাকে। একবার একটা সিম চালু করে কথা বলার পর আর কোনদিনই সেই সিম চালু পাওয়া যায় না।
আচ্ছা আপনার কতজন গার্ল ফ্রেণ্ড আছে বলুন তো, আর কতজন আপনার সঙ্গে মিস বিহেব করেছে?
আপনার মধ্যে খুব ইজম কাজ করে, মেয়েদের কথা বলতেই আপনি রেগে যান।
ছেলেদের কথা বলতেই আপনিও রেগে যান, বলে দুজনে হেসে ফেলল।
প্রথম পরিচয়ের পর থেকে অর্ণব মাঝে মাঝে শোভাকে মোবাইল করতো।
দিনে দিনে তাদের দুজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ গড়ে উঠেছিল, যে বন্ধুত্বের মধ্যে ছিল কিছু প্রতিশ্রুতি এবং পরষ্পরের প্রতি জবাবদিহিতা কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অর্ণবের আচরণে শোভা কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করল। অর্ণব প্রায় দিনই দেখা করার কথা বলে দেখা করতো না, যেদিন দেখা করতো সেদিন একসঙ্গে বসে গল্প করতে করতে অর্ণবের মোবাইলের রিং বেজেই চলতো, কখনো কখনো অর্ণব মোবাইলের লাইন কেটে দিত, কখনো কখনো আড়ালে গিয়ে শোভার দিকে তাকিয়ে ফিস ফিস করে কথা বলতো। আবার কোনদিন মোবাইল অফ করে দিত। শোভা এটা পছন্দ করতো না, সে একদিন অর্ণবকে বলেছিল, অর্ণব এটা ঠিক না, আমি কিন্তু বন্ধুত্বের নামে আসলে তোমার প্রেমে পড়েছি।
কেন? তোমার তো আমার সঙ্গে প্রেম করার কথা ছিল না, শুধু বন্ধুত্ব করার কথা ছিল।
অর্ণব একজন ছেলে আর একজন মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্বটা এক সময় প্রেমে রুপ নেওয়াটা খুব স্বাভাবিক। আর আমাদের মধ্যে সেটাই হয়েছে, প্লিজ অর্ণব ডণ্ট ফরগেট মী।
অর্ণব শোভার এসব কথা শুনতো না, একদিকে মুখ করে আনমনা হয়ে বসে থাকতো।
বেশ ক’দিন শোভার সঙ্গে দেখা করার সময় দিয়ে দেখা করেনি, আজও অর্ণবের আড়ংয়ের নিচে দেখা করার কথা, সকালবেলা অর্ণবের সঙ্গে কথা হয়েছে। শোভা তাকে অভিমানের সুরে বলেছে, অর্ণব আজ তুমি না এলে আমি বুঝবো তুমি আমাকে এভয়েড করছ, তুমি আমার সঙ্গে কমিটমেণ্ট ভঙ্গ করছ, তুমি আমার বন্ধুত্বকে, আমার প্রেমকে ডিজঅনার করছ।
অর্ণব আড়ংয়ের নিচে শোভার সঙ্গে দেখা করার কথা সকাল দশটায়। শোভা দশটা বাজার দশ মিনিট আগেই এসে তখন থেকেই অর্ণবের মোবাইলে রিং দিচ্ছে, তার মোবাইল বন্ধ। এখন সকাল এগারোটা বাজে, এই এক ঘণ্টা সময় শোভা পায়চারি করেছে আর অর্ণবের মোবাইলে রিং করেছে। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ। শোভার চোখের সামনে যেন ভেসে উঠল অর্ণবের সঙ্গে তার গল্প করার সময়কার সেই দৃশ্য যা সে এতদিনে অনেকবার দেখেছে, তার সামনে অন্য মেয়েদের মোবাইল থেকে রিং আসতে থাকায় সে মোবাইল অফ করে দিত।
তার আর বুঝতে বাকি রইল না।
বৃষ্টি থেমেছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকারা বেরিয়ে পড়ছে যার যার গন্তব্যে, শোভার গণ্ডদেশ বেয়ে তখন ঝরছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। সে চোখ মুছে স্বাভাবিকহওয়ার চেষ্টা করল তারপর রাস্তা অতিক্রম করল।
রাস্তায় অনেক গাড়ির ভীড়, ট্রাফিক সিগনালে লাল বাতি জ্বলে উঠল। শোভা একটা বাসে উঠল।
সিট ফাঁকা নেই, মানুষে বাসটি গিজ গিজ করছে, সিট তো নেই দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন। শোভা কোনভাবে এক হাতে তার ব্যাগ আর অন্য হাতে লোহার রড ধরে দাঁড়িয়ে রইল। এমন সময় তার মোবাইলের রিং বেজে উঠল।
জিল্লুর রহমান
ঔপন্যাসিক ও প্রকৌশলী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।