আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূতের কবলে (১৮ - গল্প)

আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেটে গেছি বিরান পথে! আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প; কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়!

ক্লাস শেষে স্যার বললেন, “আজতো অনেক পড়া হল, তাই তোমাদের আমি একটা গল্প বলি। এটা ঠিক গল্প নয়, আমার জীবনের একটি ঘটনা। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি, আমাদের গ্রামে তখন কেবল বিদ্যুৎ আসছে। আর আমাদের গ্রামটাও স্কুল থেকে অনেক দূরে। পায়ে হাটা একটা কাঁচা রাস্তা আছে, তাও আবার গেছে একটা বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে।

গ্রামের সবাইতো বোঝই সন্ধ্যার পূর্বেই বাড়ি পৌচে যায়, তার ওপর ঐ বাঁশ বাগান নিয়ে গ্রামে বেশ আলোচনা হয়। মানে এই ভূত প্রেত নিয়ে আরকি। রাতে তাই কেউ একা ঐ বাঁশ বাগান দিয়ে যায় না। আমার পরিচিত এক চাচা আছেন তিনি নাকি একবার ঐ বাঁশ বাগানে ভূতের কবলে পড়েছিলেন। আমার বাবার মুখেও সেম গল্প শুনেছি ঐদিন নাকি চাচাকে সকালে সবাই অজ্ঞান অবস্থায় বাঁশ বাগান থেকে উদ্ধার করে।

তো মূল ঘটনায় আসি, সেদিন আমাদের স্কুলে ইন্টার স্কুল ফাইনাল ফুটবল খেলা। ঐদিন আবার খেলার সময় দুইদলে গন্ডগোল শুরু হয়, ফলে খেলা শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তার ওপর আমরা জিতে যাওয়ায়, আনন্দ মিছিল বের হয়। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরছি, ভয় ভয় করছে; বুঝতেই পারছ। ” ছাত্রদের মাঝ থেকে একজন প্রশ্ন করল, “ স্যার আপনাকে ভূতে ধরে নি ?” “আরে ঐ ঘটনাই তো বলতেছি, শোন্।

আকাশে চাঁদ উঠেছে, আর বাঁশ বাগানে আলো ছায়ায় এক ভূতুড়ে পরিবেশ। আমি খুব দ্রুত হাঁটছি, হঠাৎ শুনি কেউ যেন হাত তালি দিচ্ছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। আমার তো আত্বা রাম খাঁচা ছাড়া। আমি আবার হাটতে যাব এমন সময় আবার হাত তালি, হঠাৎ দেখি ল্যাম্প পোস্টের পেছনে একটা গলা কাটা লোক।

আর দেখলাম তার কাটা মাথাটা উড়ে চলে যাচ্ছে। ” ক্লাসের সবাই নিঃশব্দে শুনছিল, এই পর্যন্ত এসে স্যার থেমে গেলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে স্যার বললেন, \াচ্ছা তোমরা কি বলতে পারবে আসলে আমি কি দেখেছিলাম?” কয়েকজন সমস্বরে বলে উঠল,“স্যার আপনি ভূত দেখেছিলেন!!” কয়েক জন অতি উৎসাহে প্রশ্ন করল,“ভূতটা দেখতে কি খুব ভয়ংকর ছিল?” কেউ কেউ জানতে চায়ল,“ভূতটা আপনার ক্ষতি করেনি, স্যার?” স্যার মৃদু হেসে বললেন, “ক্ষতি কিছুটা করেছিল, হার্টের রোগী হলে হয়ত অজ্ঞান হয়ে যেতাম। কিন্তু ভূত বলেতো কিছু নেই। আমি সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলাম, মাথা বিহিন লোকটা তখনও দাড়িয়ে।

যেই টর্চ জ্বাললাম, দেখলাম একটা গাছের গুড়ি। আমি যখন সকালে স্কুল আসছিলাম তখন গাছটাকে কাটা হচ্ছিল, নিশ্চয় পুরোটা কাটা হয়নি তাই ওভাবে সাত ফুট মত রেখে দিয়েছিল। আর আমি যে মাথাটা উড়ে যেতে দেখেছিলাম, ওটি আসলে কোন একটা পাখি ছিল। আর পাখির পাখা ঝাপটানোর শব্দকে ভেবেছিলাম, হাত তালির শব্দ। ” ক্লাসের সবাই একযোগে হেসে উঠল।

(২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর এই গল্পটির মাধ্যমে আমার লেখালেখিতে হাতে খড়ি। অবাক করার জন্য নয়, তবু বলি ঐ সময় আমি ক্লাস সিক্স এ পড়ি। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।