আগে জানতাম একটা সাধারন কথা "ঠান্ডা সর্দি জ্বর হলে সুস্থ হতে সময় লাগবে ওষুধ না খেলে সাতদিন ওষুধ খেলে এক সপ্তাহ "। কথাটা সত্য । ভাইরাস জনিত ঠান্ডা কাশি জ্বর এমনি ভাল হয়ে যায়। ভাইরাস তার জীবন চক্রটি শেষ করে আপনি আমাদের দেহ ছেড়ে চলে যায়। যদিনা কোন ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমন হয় তাহলে জটিলতা তেমন বাড়ে না।
এজন্য ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক দিতেও নিষেধ করেন ডাক্তাররা। এই ডাক্তাররা আবার সব ডাক্তার নয়। যারা নেহায়েত ভাল মানুষ ডাক্তার, তারা। যারা প্রতি বিকেলে চেম্বারে বসেন আর মোটা অংকের টাকা ঘরে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন, তারা এ গোত্রের লোক নন। দুর্ভাগ্য জনক হলেও আমাদের দেশের, দেশের না বলি এই শহরের বেশীর ভাগ ডাক্তারই পরের গোত্রের।
জেনে না জেনে এরা রোগীদের ভুলভাল ওষুধ গছিয়ে দেন।
ইউনিতে পড়ার সময় আমার সর্দি কাশির একটা বাতিক ছিল। কাশতে কাশতে গলা বসিয়ে ফেলতাম, কাশির দমকে বার বার ক্লাশ থেকে বের হয়ে যেতে হোত । গরম পানির কুলকুচি, গরম পানি খাওয়া, আদা চা কোনটাতেই কিছু হোত না। গলার ভেতরটা লাল হতে হতে জ্বরও হোত।
এবং গলা বসে কোলা ব্যঙের মতন ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর টাইপ স্বর বের হোত। আশ্চর্য হলেও সত্য ওই স্বরে কথা বলতে আমার মজা লাগতো। মনে হোত আমি না অন্য কেউ কথা বলছে, এই মজাটা এখনো হয়। সবাইকে বলি কাশতে কাশতে গলায় কোলা ব্যাঙের বাসা বানিয়ে ফেলেছি, দেখ না কেমন শব্দ হচ্ছে। তো বেশীর ভাগ সময়ই শেষমেষ এন্টিবায়োটিক খেতে হোত।
এরপর পুরোটা ভাল হতাম।
পড়াশোনা শেষ হবার পরও এ সমস্যাটা ছিল। মাঝে মাঝেই এই গলা জনিত সমস্যায় আমি ত্যাক্ত বিরক্ত। একবার এন্টিবায়োটিক খেয়ে সুস্থ্য হবার মাস খানেকের মধ্যেই আবার একই সমস্যা। সেবার ভাবলাম এন্টিবায়োটিক আর খাব না, কিছুতেই না।
তখন চাকরী করি। অফিসে আমাদের জন্য ডাক্তার আছেন.......একজন পুরুষ একজন মহিলা ডাক্তার। মহিলারা সাধারণত মহিলা ডাক্তারের কাছেই যাই। উনার সাথে স্বভাবতই ভাল ভাব আমাদের। তো তাকে দেখাই গলার এই হাল..........তিনি যথারীতি ছোট একটা কাগজে ওষুধ লিখে দেন।
আমি জানতে চাই সেটা এন্টিবায়োটিক কিনা। তিনি জানালেন, ঠিক তাই। আমি মিষ্টি করে বললাম, আপা এন্টিবায়োটিক ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা নাই? একমাস আগেই আমি ওটা খেলাম..........আপনি আমাকে এমন কিছু বুদ্ধি দেন........যাতে এন্টিবায়োটিক খাওয়া লাগবে না, আবার আমার কাশিও ভাল হবে। আপন মানুষ ভাবলাম কিছু সদবুদ্ধি পাওয়া যাবে। তিনি কঠিন মুখ করে বললেন...........এখন এন্টিবায়োটিক না খেলে............সমস্যা আরো বাড়বে.........ফলাফল...........আরো উচ্চ ক্ষমতার এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।
আমি আর কথা বাড়ালাম না, মনে মনে তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম। ওষুধ লেখা কাগজটা নিয়ে চলে এলাম..........আসতে আসতে সেটা রাস্তায় ফেলে দিলাম। আমি ধনুক ভাঙ্গা পণ করেছি এন্টিবায়োটিক আমি খাব না। দেখা যাক কি হয়। শুরু হল গরম পানি থেরাপি।
চলল নিয়মিত গড়গড়া, গরম পানি খাওয়া.............এইরকম চলতে চলতে বারো তেরো দিনের মাথায় আমি পুরোটা ভাল হলাম। মজার ব্যপার হল...........এরপর প্রায় ছয় মাস আর কাশির সমস্যাটা হয়নি।
নিজের উপর এরকম এক্সপেরিমেন্ট চালানোর পাশাপাশি জাফনার সাথ্রে চলে আমার এমনটি। তার ঠান্ডা কাশি হলে আমি যথারীতি গরম পানি, মধু, সরিষার তেল, তুলসীর রস, লেবু পানি, জাম্বুরা ...........পেট খারাপ হলে থানকুনি পাতার রস, বেলের সরবত........ইত্যাদি ইত্যাদি টোটকা চালাই...........কিন্তু বেশীদূর যেতে পারিনা। কারণ জ্বর হয় উথাল পাথাল।
একশত চার পাঁচ থাকে তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা। এ রকম যখন হয়...... জেদী মেয়েটি তখন মমতাময়ী ভীত মায়ের কাছে হার মানে। ওই বদ ডাক্তার যা বলে সব মানতে বাধ্য হয় । বাধ্য হয়ে এন্টিবায়োটিক সময় করে ঘড়ি ধরে ধরে দেয় সোনামনিকে। গেল রমজানে মেয়েটি জ্বরে পড়ল, ঠান্ডা থেকে কাশি, মায়ের মতন কাশতে কাশতে তারও গলা বসে গেল।
ডাক্তারের ভাষায় গলা সোর হয়ে গেল। তখন সোয়াইন ফ্লু এর প্রকোপ চলছে। ফেসবুকে আমার বন্ধুরা ক্রমাগত ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। আমি জানতাম ওটা ঠান্ডা জ্বর, কিন্তু জ্বর যে নামে না! গলার সোর.......গলার ইনফেকশনটা না গেলে জ্বর নামবে না........এরকমই ছিল ডাক্তার এর ভাষ্য। কাজেই সে মতই ব্যবস্থা নেয়া হল।
জ্বর নামল বটে, কাশিটা তেমন গেল না.....একসময় আবার সেটা ফিরে এল, কোন ভুল হয়ে থাকবে হয়তো যত্নে, সাবধানতায়। তখন আর কোনভাবেই কোন এন্টিবায়োটিক দেয়া যাবেনা। আবার আমার গরম জল টোটকা চলল.........কঠিন নিয়মে.......দুদিনের মাথায় সব কন্ট্রোলে এল। স্বস্তি এল মনে, পরিবারে।
কদিন আগেও প্রচন্ড ঠান্ডায় গায়ে জামা কাপড় এর ঘাটতি থাকাতে আবার বাঁধালো জ্বর।
এত শীতেও তার গায়ে জামাকাপড় রাখতে রীতিমত পাহাড়া দিয়ে রাখতে হয়। এবার তড়িৎ ব্যবস্থা নিলাম। গরম তরল খাবার ( গরম দুধ, গরম চা, গরম স্যুপ)........ বারবার.... গরম থাকা..... সরিষার তেল এবং মধুর মিশ্রন সরাসরি গিলে খাওয়া, এবং জ্বর হলে প্যারাসিটামল সিরাপ। বুকে পিঠে সরিষার তেল এর ম্যসাজ..........সব কিছু মিলে সাতদিনে সে সুস্থ্য হল ............সেই পুরোনো প্রবাদের রেশ ধরে ওষুধ না খেলে সাতদিন খেলে এক সপ্তাহ। এক সপ্তাহ স্কুল কামাই হল।
তবু ডাক্তারের ফি বাবদ ৫০০ টাকা, এন্টিবায়োটিক দুবোতলের দাম ৫০০ টাকা (এক বোতলে হয় না) সব মিলিয়ে ১০০০ টাকা বাঁচল । যদিও এর মাঝে এক বোতল মধু সাবার হয়েছে ( তবু ভাল, মধু তো খাবার জিনিস)। এরই মাঝে আদর করে মাকেও তার ভাইরাসটা ধার দিয়েছিল...........এবং মা ও যথারীতি ডাক্তারকে ফাঁকি দিয়ে একই নিয়মে সেরে উঠেছে। এবার সব ভয়কে জয় করে আমার এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে। ( দুই হাত তুলে নাচার একটা ইমো থাকার দরকার ছিল)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।