একজন বইপোকা।
হযরত "শাহ ওয়ালীউল্লাহ" (রহ.) এর মৃত্যুর পর ১৭৬৩ সালে শাহ ওয়ালীউল্লাহর চিন্তাকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে দেয়ার গুরু দায়িত্য পালন করেন তার সুযোগ্য পুত্র "শাহ আব্দুল আযীয" মুহাদ্দিসে দেহলভী। ১৮০৩ সালে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা ঘোষণা দেয় "সৃষ্টি স্রষ্টার, সাম্রাজ্য বাদশাহ বাহাদুরের আর শাসন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর" । সাথে সাথে স্বাধীনতার ডাক দেন "শাহ আব্দুল আযীয" । তিনি ঘোষণা দেন " আজ থেকে ভারতবর্ষ পরাধীন ।
স্বাধীনতার জন্য আমাদের সকলকে ঝাপিয়ে পড়া আমাদের উপর ফরজ" । সেই ঐতিহাসিক ফতোয়ার মাধ্যমে জেগে উঠে মানুষ। তার সেই ঐতিহাসিক ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য "সৈয়দ আহমদ শহীদ" ও "ইসমাঈল শহীদ" (রহ.) পেশোয়ার থেকে চট্টলা পর্যন্ত ঘোরে বেড়ান। স্বাধীনতা যুদ্ধের এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের লক্ষ্যে ১০ জানুয়ারী ১৮২৭ সালে "সৈয়দ আহমদ শহীদ" সিত্তানা নামক স্থানে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। এবং তিনি নিজে হন সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ।
আহমদ শহীদ সরকারের মাধ্যমে ইংরেজদের বিরোদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় ঐতিহাসিক "বালাকোটের ময়দানে"। সেখানে আহমদ শহীদ সহ অন্যান্য অনেক মহান নেতাদের মৃত্যু হয়। তারপর আর স্বাধীনতা যুদ্ধ থেমে থাকেনি। পশ্চিমবঙ্গে "মীর নিছার আলী ওরফে তিতুমীর" পূর্ব বঙ্গে "হাজী শরীয়ত উল্লাহ" ও "পীর মুহসিন উদ্দিন দুদু মিয়ার" বাশের কেল্লা ও ফরায়েজী আন্দোলন স্বাধীনতা যুদ্ধকে আরো বেগবান করে তোলে। ১৮৫৭ সালের দিকে ইংরেজদের যুলুম নির্যাতন সর্বভারতীয় রূপে আবির্ভূত হয়।
তখন ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিদ্যাপীট "দারুল উলূম দেওবন্দের" স্বপ্নদ্রষ্টা "হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজীরে মক্কী" "মাও. আহমদ উল্লাহ শাহ" সহ আরো অনেক আলেম মিলে "সিপাহী বিপ্লবের" গোড়াপত্তন করেন । "সিপাহী বিপ্লব"কে সফল করার লক্ষ্যে তাঁরা একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। সরকার প্রধান করা হয় " হাজী ইমদাদুল্লাহ" কে । সেনাবাহিনী প্রধান করা হয় " দারুল উলুম দেওবন্দে"র প্রতিষ্ঠাতা "মাও. ক্বাসিম নানুতুবী" কে। "হাফিজ জামিন" কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রি ও "মাও. রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী"কে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।
অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ঘোষণা করা হয় " থানা ভবন"কে । সেই সরকারের বাহিনীতে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয় । একসময় ঐতিহাসিক "শ্যামলী যুদ্ধ" অনুষ্ঠিত হয়। সেই যুদ্ধে পরাজিত হন আলেমরা । হাফিজ জামিন সহ অনেক ঊলামায়ে কেরাম শাহাদাত বরণ করেন।
১৯ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭ সালে দিল্লির সুলতানের আত্মসমর্পনের পর ইংরেজরা অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষভাবে আলেম সমাজ তাদের নির্যাতনের লক্ষ্যে পরিনত হয়। কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত শেরশাহ সুরীর গ্রান্ট ট্রাংক রোডের এমন কোন গাছ বাকী ছিলনা যেখানে কোন আলেমের লাশ ঝোলানো হয়নি। ইংরেজরা যে গ্রামে এক আলেমের খবর পেতো পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিতো । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে ৫২ হাজার আলেম শাহাদত বরণ করেন।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।