আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী হাকালুকি হাওড় মাছশুন্য

রঙ্গিলা বন্ধুরে....... i_mahmud2008@yahoo.com

মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী হাকালুকি হাওড় মাছশুন্য বাজারে মাছের চরম সংকট ইসমাইল মাহমুদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার মৎস্যভান্ডার খ্যাত এশিয়ার সবচেয়ে বড় মিঠে পানির হাওড় হাকালুকি এখন মৎস্যশূন্য। অপরিকল্পিতভাবে বিল সেচা, কারেন্ট জালের যথেচ্ছ ব্যবহার, পোনা মাছ আহরন, কৃষি জমিতে অবাধে কীটনাশক প্রয়োগ এবং বৃষ্টির পানিতে তা হাওড়ের পানিতে গিয়ে মেশা ইত্যাদি কারনে হাকালুকি হাওড়ে মাছের বংশবিস্তার চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষেত্র। আর এ কারনেই হাকালুকি হাওড়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে দেখা দিয়েছে চরম মাছ সংকট।

বড়লেখা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওড়ে বিল রয়েছে ২৩৮টি। মাছের ডিম পাড়ার উপযুক্ত এলাকা রয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। প্রায় ২০ সহস্রাধিক মৎস্যজীবি এ হাওড়ের উপর নির্ভরশীল। বছরে এ হাওড় থেকে মাছ পাওয়া যায় প্রায় ২ হাজার ৫শত টন মাছ। এখানকার অধিবাসীদের প্রায় সবাই মৎস্য ব্যবসার সাথে জড়িত।

কিন্তু বর্তমানে হাকালুকি হাওড় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ায় মৎস্যজীবিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। সিলেট অঞ্চলে এখন আর হাকালুকি হাওড়ের মাছ পাওয়াই যায় না। মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, ইতোমধ্যে হাকালুকি হাওড়ে লাছো, গলদাচিংড়ি, টেংরা, গনিয়া, পাবদা, বাইম, লাইয়া, খইড়কা, বাঁশপাতা, বাঘমাছ, চিতল, আইর, সরপুটি, ঘাগট, রাণী, বাছা, বোয়ালসহ ৩২ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মৎস্য খামারের মাছ এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমদানী করা মাছে বাজার সয়লাভ। অথচ কয়েক বছর পূর্বেও পুরো সিলেট অঞ্চলে প্রসিদ্ধ ছিল হাকালুকি হাওড়ের মাছ।

যৎসামান্য যাও হাওড়ের মাছ পাওয়া যায় তাও থাকে সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বড়লেখার হাজীগঞ্জ বাজারে মাছ ক্রয় করতে আসা শাহবাজপুর গ্রামের তছলিম মিয়া জানান, ‘আছিলাম (এসেছিলাম) হাকালুকি হাওড়ের মাছ কিনতে (ক্রয় করতে)। বাজারে আইয়া দেখি মাছের গাত (গায়ে) যেন আগুন ণাগিগেছে (লেগেছে)। মনে লয় (হয়) মাছ লইতাম (কিনতে) পারতাম (পারব) না। ’ জুরী বাজারে দেখা হয় জুরীর সাংবাদিক সিরাজুল ইসলামের সাথে।

তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, ‘নানা কারনে হাকালুকি হাওড় মৎস্যশুন্য হলেও কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না’। গাজিটেকা প্রবাসী গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, হাওড় এলঅকা থেকে প্রবাসে আরো কম দামে মাছ কিনতে পাওয়া যায়। হাওড়ের পাড়ে থাকিয়া আমরার (আমাদের) লাভের মধ্যে লাভ হইল (হলো) এটুকুই। কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মনবাজারে আসা রতন দাশ জানান, বই পুস্তকে পড়েছি ‘মাছে-ভাতে বাঙালী’। এ নীতিকথা বই-পুস্তকেই মানায়।

বাস্তবে হলো ‘নুন (লবন) ভাতে বাঙালী’। কুলাউড়া উপজেলা সদরের মাছ ব্যবসায়ী মোঃ জসিম উদ্দিন সাপ্তাহিক ২০০০-কে জানান, ‘এক সময় হাকালুকি হাওড়ের মাছ এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য প্রেরণ করা হতো। বর্তমানে হাকালুকি হাওড়ে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ এ অঞ্চলে আনতে হয়। ভেবে দেখুন কত আছে নেই হাওড় পাড়ের মানুষ’। সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম জানান, হাকালুকি হাওড়ের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ আরো জোরদার করা, জলাশয় সেচা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা, কারেন্ট জাল দিয়ে যারা মৎস্য আহরন করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ আহরন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা আবশ্যক।

ইসমাইল মাহমুদ মৌলভীবাজার থেকে ০১৭১৫১৭১৯৫০ ০১১৯৬১২৮৫১৩ ০১৬৭০৫৮৪২৭৫

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.