আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোয়াখালী শহরের দুঃখ জলাবদ্ধতা ভাঙা সড়ক



কি শীত, কি গ্রীষ্ম! আর বর্ষা তো আছেই। যে কোনো মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি থৈ থৈ করে নোয়াখালী শহরজুড়ে। এ নিয়ে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের কাছে জমা আছে নাগরিকদের অসংখ্য অভিযোগ। বছরের পর বছর যায়, কিন্তু নোয়াখালী শহরের দুঃখ জলাবদ্ধতার সমাধান হয় না। এদিকে শহরের ফুটপাতগুলো বেদখলে।

ভাঙা সড়কে চলাচল আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিনে জমে থাকা ময়লার দুর্গন্ধ নিয়ে নিত্য বিড়ম্বনায় আছে পৌরবাসী। তবে পৌর মেয়র জানালেন, সমস্যা সমাধানে প্রকল্প আসছে। জানা যায়, দেশের পুরনো ১৭টি পৌরসভার একটি নোয়াখালী পৌরসভা। ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার মাস্টার প্ল্যান হয় ১৯৬০ সালে। এরই মধ্যে চার যুগ পেরিয়ে গেলেও সব পরিকল্পনা এখনও খাতাপত্রেই রয়ে গেছে।

পৌর সূত্র জানায়, নোয়াখালী পৌরসভায় বর্তমানে দুই লাখ লোকের বসবাস। প্রতিদিনই শহরে মানুষের চাপ বাড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। কিন্তু এসব ব্যবস্থাপনায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। জানা যায়, বাণিজ্যিক ঝামেলামুক্ত দেশের এক বৃহত্ জেলা শহর নোয়াখালী পৌরসভায় (যা মাইজদী শহর হিসেবে পরিচিত) জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে ভরাট হয়ে যাওয়া ছাগলমারা খাল ও গাবুয়া খাল।

শহরের প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাল দুটি বিভিন্ন স্থানে দখল করে আছে প্রভাবশালীরা। খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং শহরে পরিকল্পিত ড্রেনেজ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিই পৌরবাসীর বিড়ম্বনার কারণ হয়ে যায়। বৃষ্টির পানি দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা না থাকায় সবসময় ভোগান্তিতে থাকতে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সবাইকে। পৌরকেন্দ্রের ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম জানান, এ শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে অনেক লেখালেখি, মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু সমাধান হয় না।

অথচ গাবুয়া খাল এবং ছাগলমারা খাল দুটি বড় ড্রেনে পরিণত করে আশপাশের সঙ্গে সংযোগ ড্রেন করা হলে জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকবে না। পৌর সূত্র জানায়, খাল ভরাট ও দখলকারীরা চেয়ারম্যানদের চাইতেও ক্ষমতাশালী। তাই কেউই মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে মাথা ঘামাতে আগ্রহী হন না। এদিকে জেলা শহরের কোর্ট রোড হয়ে নোয়াখালী কলেজের দিকে যাত্রা করলে কেউ ভাবতেই পারবে না, এটা জেলা শহরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে কলেজের সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী।

ফ্ল্যাট রোড হয়ে পশ্চিমে, হরিনারায়ণপুর, লয়ার্স কলোনি, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, মিউনিসিপ্যালিটি বাজার সড়ক সর্বত্রই ভাঙা রাস্তা। পুরনো ফুটপাত সংস্কার নেই, নতুন ফুটপাত হয় না। যে ফুটপাত আছে তাও হকারদের দখলে। ফলে ফুটপাত দিয়ে চলাচলে রয়েছে বিড়ম্বনা। ভাঙা সড়কে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি নিত্যদিনের।

শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও বেহাল দশা। জানা যায়, পৌরসভায় ১৫০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং ৩টি বর্জ্যবাহী গাড়ি রয়েছে। কিন্তু শহরবাসীকে দুর্গন্ধেই থাকতে হয়। নোয়াখালী জেলা স্কুলের সামনে এক ব্যবসায়ী জানান, দক্ষিণ পাশের ডাস্টবিনে তারা রাতে যে বর্জ্য দেখে যান, সকালেও তাই দেখেন। বর্জ্য বাড়ে আর দুর্গন্ধ ছড়ায়, সপ্তাহ না গেলে সরানো হয় না।

তবে পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে যে সরকারি অনুদান পাওয়া উচিত, তা নেই নোয়াখালী পৌরসভার জন্য। বিদেশি সাহায্য ছাড়া সরকার মাত্র ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। অথচ এ পৌরসভাকে বছরে দেড় কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতা বাবদ। পৌর আয় দিয়েই গত ৫ বছরে এ পৌরসভাতে উন্নয়ন কাজ হয়েছে ৩২ কোটি টাকার। শত সমস্যার মাঝেও উন্নয়নকে নিজের সাফল্য দাবি করে পৌর মেয়র হারুন অর রশিদ আজাদ জানান, বিগত ২০ বছরেও নোয়াখালী পৌরসভায় এত উন্নয়ন কাজ হয়নি, যা তার সময়ে হয়েছে।

জলাবদ্ধতা ও রাস্তাঘাটের সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আমার দেশকে বলেন, ছাগলমারা ও গাবুয়া খাল সংস্কার এবং ড্রেনেজ করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়। কিন্তু এজন্য বাজেট পাওয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় বর্জ্য নিয়ে সমস্যা হয়ে থাকে। তবে তার সময়ে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। হকাররা গরিব তাই ফুটপাতে ব্যবসা করে খায় বলে মেয়র জানান।

লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে পৌর মেয়র বলেন, ‘জেলা শহর’ প্রকল্প নামে একটি বৃহত্ প্রকল্প স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। এতে নোয়াখালী পৌরসভার কিছু সমস্যার সমাধান হবে। ড্রেনেজ এবং স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনাও তার রয়েছে। নোয়াখালী পৌর শহরকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়তে বিউটিফিকেশন কর্মসূচি নেবেন তিনি। এছাড়া নাগরিক সেবায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে।

পৌরসভার জন্য নতুন মাস্টার প্ল্যানের কার্যক্রম চলছে বলেও তিনি জানান। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.