_________________সেলাই গাছের কারখানা _______________________________________
বিজয় আমাদের প্রজন্মের গৌরব
সৈয়দ আফসার
না-কিছুই বলবো না। কথা বলার আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে গলা। ওই যে আমি দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছি সকলের হেঁটে যাওয়া, আলোছায়া। হেঁটে যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে যতটুকু পথ আমাকে ছুঁতে পারেনি, ওই যে হেঁটে যাবাব পর আমি যা পেলাম সারি-সারি গাছের প্রেম, পাতাদের আসক্তি… চারপাশ নিয়ে উড়ছে যে বাতাস, গাছপালার শ্বাস তাকে কি আমরা ধরতে পেরেছি? আমাদের শত আর্তনাদ নীরব সাক্ষী। শুধু জেনেছি গাছের নিচে বসে গাছপাতার গান শুনলে নাকি কানের অসুখ সারে।
যাবার রাস্তা ধরে কেউ যদি যেতে চায়, দেখতে চায়, জানার আগ্রহ দেখায় আর কতদূরে… আর কতটুকু গেলে দেখা পাবো ‘বাড়ি নাম্বার ৩২’ তাঁকে যাবার রাস্তা বাতলে দেবে সব পথিকের আগে…
জানি বাকি পথ হাঁটলে সেও মনে মনে এঁকে ফেলবে সবমায়াজাল, থাকবে না পা-হাঁটা পথের গ্লানি…। চারপাশে ‘সামাজিক দুঃখ আছে’ জেনে দীর্ঘশ্বাস টেনে সামলাচ্ছি গ্লানি… তোমরা কি বলতে পারো, আমার গ্লানিমুক্তির শব্দগুলো কোথায় বাজে? নীরবতার শৃঙখল পরে যেখানে আত্নচিন্তার ঘ্রাণ পাওয়া যায়, সেখানেই হায়ানের থাবা। আজো আমার মনের দরজা জানালা একা একা কষ্ট পায় গোপনে। সকলেই চায়, নিজের মতো হউক সুখের নগর।
পূর্বসূরীদের বলা-কওয়ার ব্যবধান যেন মৃত আত্নার গান।
দীর্ঘশ্বাস বিগত দিনের মতো উড়ে যাচ্ছে না, ছায়া হয়ে নিজের সাথে মিশে আছে আত্নগরিমায়। অনুতাপ পরিতাপের ভাষা জপে আস্থায় ছানিপরা চোখে। তখন যদি জন্ম হত আমার, আমি কি লিখতে পারতাম সময়ের যত ভয়, যত অশুভ ব্যবধান? আবার যখন টেনে নেই শ্বাস, সব শ্বাসেরই থাকে আলাদা আলাদা মুগ্ধসঞ্চারণ, লেগে যায় আঘাত। ডিসেম্বর মাস ইংরেজি বছরের শেষ মাস। এই মাসকে খিষ্টানরাও ভাবে তাদের প্রিয় একটি মাস।
ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। একটি ধর্মকেন্দ্রীক। অন্যটি জাতীয়কেন্ধীক। ডিসেম্বর এলেই গর্বে ভরে ওঠে মন, ঠোটের ফাঁকে ফাঁকে জমে জমানো উচ্ছ্বাস। এইমাসেই চলে আসে মৃদুশীতের আমেজ দূর্বাঘাসে ফুটে হালকা জলফল, হাট বাজারে মিশে থাকে শীতসবজিরঘ্রাণ।
সেসবই একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে ভাবায়। গাছ-লতাপাতা, নদী-জল-ডোবা সবই এক, তবু মানুষের মাঝে এতো ব্যবধান… একই আবহাওয়া থেকে মানুষ, একই পৃথিবীর অক্সিজেন গ্রহণ করে, তবু মানুষই মানুষের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে। বাঙালির এই মাস ব্যবধান ভাঙার মাস, বিজয়ের মাস। এই দিন যে আনন্দ নিতে জানে না কবির ভাষায় সে আজন্ম কৃতদাস থেকে যায়। সমস্ত শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাঁরা এই দিনটি আমাদের
সামনে হাজির করেছিলেন, তাঁরাই মহিয়ান হয়ে উঠেছেন।
আমাদের অহঙ্কার হয়ে উঠেছেন। আর অনেক কিছু না-পাবার বেদনা তো আমাদের আছেই।
সেসব গোপনকথা, দাহকথা, প্রেম-প্রকৃতি-কথা কেউ লিখেন কবিতায়, কেউ গানে গানে বলে যায় মনের হাজারো অস্ফূটকথা, আর যে জন জনতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন খেটে খাওয়া মানুষের কবিতা, কাজ থেকে ছাঁটাই করা মানুষের কবিতা, আত্নবোধের কবিতা, বাঙালি জাতির ভেদাভেদের কবিতা, বাঙালি জাতির মুক্তির কবিতা, সুষমা-সমতার কবিতা…‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’ তিনিইতো হাজার বছরের বাঙালির শ্রেষ্ঠ কবি। যার আহবানে সাড়া দিয়ে পুরো বাঙালি জাতি তাঁর ধর্ম-বর্ণ-বৈষম্য ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ছিল! কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য মরণপণ লড়াই করেছেন, শহীদ হয়েছেন, যে মা-বোনেরা সম্ভম হারিয়েছেন তারাতো সেই কবিতাটিরই অংশ। সে সব ভাবলেই মনভরে উঠে।
ফিরতে চাই গর্বে তিনক্রোশ হেঁটে দূরপাহাড়ের চূড়ায় তুলে রাখি বিজয়ের সুখ, মুঠো ভরে তুলে আনি ধুলো; নাক বরাবর রেখে অনুভব করি প্রতিটি কণা যেন ডাকছে... বলছে গায়ে মেখে দেখ কি অনুভূতি জাগে তোর প্রতিটি শিরায়। জানিস্ আমি উড়তে পারি, আমি পায়ে পায়ে হেঁটে যেতে পারি; ‘আমি রোদে পুড়ি বৃষ্টিতে ভিজি’ যখন তোদের স্পর্শ আমার গায় ছুঁয়ে যায়; আমার ভালো লাগে খুব যেন ‘ফুরফুরে থাকে মেজাজ শরীফ’ আমার শরীরে বাঁধা সব প্রাণির সহজজীবন। আমার শরীর ছিঁড়ে-খুঁড়ে উৎপাদন হয় তোদের বেঁচে থাকার সকল আয়োজন। এই বিদেশ-বিস্তৃইয়ে এমনই কথা কয় জন্ম-ভূমি, আমাদের কানে কানে
সব আশ্চর্য কথা আমার কানে বাজে; কাঁচামাটির ঘ্রাণে কোন অস্পষ্টতা নেই, আছে সুখ আর সুখ। না-বলা যত কথা যেন অগ্নিবীণা থেকে হয়ে যায় বিনীত আরজ।
জন্মের পর যা কেটে দিলেই বাঁচি, দাদীমাই এই মাটিতে পুঁতে রেখেছেন আমার নাড়ি, এই মাটিতেই একদিন হবে চিরস্থায়ী আবাস। তখনই ড. ভূপেন হাজারিকার একটি গান কথা আমাকে আলোড়িত করে, ইচ্ছে করে গলা ছেড়ে গেয়ে যাই গান— ‘মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্য/ একটু সহানুভূতি কি(আমি) মানুষ পেতে পারে না...। ’
মানুষ আছে, থাকবে, প্রকৃতি যেভাবে চায় ঠিক সেভাবেই। আমার মরে যায় প্রকৃতির নিয়ম মেনে, মরার সাধ হয় না কারোই; তবুও সে স্বাদ নিতে হবে সবার। পালানোর যে কোন পথ খোলা নেই।
কিন্তু সব মৃত্যু যে মেনে নিতে পারে না সবাই। কোন মৃত্যু একটি জাতির ললাটে কলঙ্কের দাগ লেগে যায়। যে কবি অমর কবিতার মন্ত্রে বাঙালি জাতি পেল তাঁর বাক্ স্বাধীনতা, ভূখণ্ড, লালসবুজ পতাকা, পেল শহীদের রক্তে ভেজা বিজয়ের মালা। কিন্তু জাতি আবার দেখল ৭৫-এর ১৫ই আগষ্ট ইতিহাসের নির্মম ঘটনাই ঘটল। তখনও জন্ম হয়নি আমার! কলঙ্কের ভাগ নিয়েই জন্ম হল আমার।
কিছু বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে নিস্পাপ রাসেলসহ সপরিবারে খুন হলেন হাজার বছরের কাঙ্খিত পুরুষ, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেইদিন থেকে বাঙালি জাতি পূর্ণ বিজয়ের স্বাদ হারিয়ে ফেললো। দীর্ঘ ২১ বছর পর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ডিঙিয়ে (গত ১৯শে নভেম্বর ২০০৯) দীর্ঘ ৩৪বছর অপেক্ষার পর জাতির জনকের বিচার পেল জাতি। তাই এবাবের বিজয় দিবস আমাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিজয়। আজ এই বিজয়ের মাসে আরো একটি বিজয় আমাদের অর্জন করার প্রতীজ্ঞা করতে হবে; যারা আমাদের বাকশক্তি কেড়ে নিতে চেয়েছিল, পতাকা কেড়ে নিতে সাহায্য করেছিল, যারা আমাদের পরাধীন রাখতে চেয়েছিল, বুদ্ধিজীবি হত্যায় সাহায্য করেছিল, সেই সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাংলার মাটিতে যে দিন শেষ হবে; সেদিন বাঙালি জাতি পাবে তাঁর পূর্ণ বিজয়।
আমরাও পাবো পুরো বিজয়ের স্বাদ। তখনই এ বিজয় হবে আমাদের পূর্ণ গৌরবের বিজয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।