আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় কি সত্যিই বিজয়?! নাকি আরও এটি রাজনৈতিক আপোষ!

আজ আমার একটি academic assignment করতে গিয়ে আমি অনেক অবাক হয়ে গেলাম! আমরা অনেকেই কম বেশি ২০১২ সালের ১৪ মার্চের (ITLOS) আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন আদালতের রায়ে আমাদের সমুদ্র বিজয়ের কথা জেনেছি। কিন্তু আসলেই কি সেই রায়ে আমরা সমুদ্র বিজয় লাভ করতে পেরেছি, নাকি ওটাও ছিল একটি রাজনৈতিক মিথ্যে আশ্বাস! ব্যাপারটা একটু পরেই হয়ত বুঝতে পারবেন। আমার এই লেখার মাধ্যমে আমি যদি অন্তত কিছু মানুষকেও ব্যাপারটা বোঝাতে পারি তবেই আমার লেখাটি সার্থক। আর এ বিষয়ে আমার লেখাটি কতটুকু যুক্তিপূর্ণ হবে সে নিয়ে যদি কারো মনে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাই আমি আগেই একটা ব্যাপার জানিয়ে দিচ্ছি যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪র্থ বর্ষের একজন ছাত্রী এবং সমুদ্র আইন সম্পর্কে আমাদের একটি সম্পূর্ণ আলাদা course পড়ানো হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়ে আমরা মোটামুটি ভালোই ধারণা রেখে থাকি।

উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে সমুদ্র অঞ্চলের কতটুকু দাবী করার নিয়ম রয়েছে তা UNCLOS(United Nations Convention on the Law Of the Sea)-এ উল্লেখ করা রয়েছে। তবে এসব বোঝানোর জন্য যেসব পদ্ধতি রয়েছে তা এই ব্যাপারে গবেষণা না করলে অনেকেই বুঝবেন না বলে আমি একটি ছবি ব্যাবহার করব যাতে করে যারা এ বিষয়ে সব কিছু জানেননা তাদের বুঝতে সুবিধা হয়। বাংলাদেশের মানচিত্র এবং বঙ্গোপসাগরের অবস্থান অন্যান্য দেশ থেকে একটু ভিন্ন ধরণের বলে এর দাবী নিয়ে একটু বিতর্ক রয়েছে। নিম্নক্ত লিঙ্কের ছবিটিতে তা হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন যে বাংলাদেশের আকৃতি একটু চোঙের মত মানে দক্ষিণ দিক থেকে একটু বাড়তি ভূমির মত মনে হয়। কিন্তু সব কিছু হিসেব করে নিয়ম অনুসারেই ITLOS (International Tribunal on Law Of the Sea) -এর কাছে দাবী করা হয়েছিল।

সমুদ্র বিজয়, নাকি আপোষ! উপরোক্ত লিঙ্কের ছবিটিতে খুব স্পষ্ট ভাবেই দেখা যাচ্ছে যে কালো রঙের চারকোণা অংশটুকু বাংলাদেশ দাবী করেছে সমুদ্র আইন এর নিয়ম অনুসারে যে নিয়ম ১৯৮২ সালে UNCLOS-এ সকল UN সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্ত ২০১২ সালের ১৪ মার্চে বাংলাদেশের যে সমুদ্র জয়কে সমগ্র পৃথিবীর সামনে দেখানো হয়েছে সেখানে আসলেই কি একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে? নাকি এখানেও বাংলাদেশ গোপনে ভারত এবং মায়ানমার এর সাথে আপস করেছে? এই ছবিটিতে যে ত্রিবুজ আকৃতির অংশটুকু দেখা যাচ্ছে ITLOS বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় হিসেবে ততঃটুকু অংশকে বুঝিয়েছে। আর বাংলাদেশের সমুদ্র প্রকৌশলীরা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রিরা তাই নিয়েই হইচই করে ফিরে এসেছে এই বলে যে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য সমুদ্র অঞ্চল জয় করেছে। কিন্তু শুধু মাত্র এই ছবিটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে আসলেই বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় কতটুকু সার্থক করতে পেরেছে! এখানে ভারত ও মায়ানমার এর স্বার্থ আগে দেখা হয়েছে এবং আপস করে শুধু মাত্র দীর্ঘের দিক থেকে বাংলাদেশ যতটুকু দাবী করেছিল ততঃটুকু পেলেও প্রস্থের দিক থেকে তা পেয়েছে ১/৩ অংশ মাত্র। সমুদ্রের মানচিত্র ও একটা উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে কতটুকু দাবী করার অধিকার এসব বিষয়ক জিনিস গুলো নিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই সঠিকভাবে জানেননা বলে এটাকেই সমুদ্র জয় হিসেবে চালিয়ে দিতে বাংলাদেশের স্বার্থান্বেষী রাজনিতিবিদদের তেমন কোন ঝামেলাই পোহাতে হল না! অন্যসব ঝামেলার মধ্যে এই ব্যাপারটিও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে ধীরেধীরে।

ঠিক যেমন ভাবে অন্য সকল বিষয়ই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে আর বিদেশী স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে এদেশের সম্পদ ব্যাবহার করে। বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরাশক্তির কাছে আপোষ মেনে নিচ্ছে আর এই সমুদ্র বিজয়ের ব্যাপারটিও তার বেতিক্রম নয়। আমার এই লেখাটি পড়ে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে সামনে নির্বাচন আসছে তাই একটা পুরানো ব্যাপার কে নতুন ভাবে তুলে ধরছি সরকারের বিরোধিতা করার জন্য। কিন্তু আমি বলবো যে সরকারের কোন গোপন নীতি বুঝতে পেরে সবাইকে জানানোটা সরকারের বিরুদ্ধে গেলেও দেশবাসীর পক্ষে। সমুদ্র বিজয়ের ব্যাপারটা কতটুকু সত্যি আর কতটুকু আপোষ এই সম্বন্ধে একবার হলেও ভেবে দেখবেন।

আর আপনাকে একবার ভেবে দেখার ক্ষেত্রে আমার এই লেখাটি সামান্যতম যদি সাহায্য করতে পারে তবেই আমি সার্থক। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.