আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামীণ ব্যাংকের খসড়া আইনে নানা অস্পষ্টতা

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কীভাবে নিয়োগ পাবেন, ব্যাংকটি কোন কোন অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে, পরিচালকদের যোগ্যতা কী, মুনাফার ব্যবহারই হবে কীভাবে ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণে প্রস্তাবিত আইনে বড় ধরনের অস্পষ্টতার প্রশ্ন উঠেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের খসড়া আইনে ‘পরিবার’-এর সংজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে অসম্পূর্ণ। অর্থ মন্ত্রণালয় আইনের যে খসড়াটি দাঁড় করিয়েছে, তার কিছু ধারা বাংলাদেশ ব্যাংকই বুঝতে পারছে না। খসড়াটির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ও। আর যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (রেজসকো) খসড়া আইনের ওপর দেওয়া মতামতে যোজন-বিয়োজন কিছুই করতে পারেনি।


২৫ আগস্টের মধ্যে মতামত দেওয়ার কথা বলা হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাসহ (এমআরএ) আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় তাদের মতামত গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানায়নি।
আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে জারি হওয়া সব অধ্যাদেশই বাতিল হয়ে গেছে। সেগুলো এখন আইন করা হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর পরিবর্তে সরকার প্রণয়ন করতে যাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩।
গ্রামীণ ব্যাংকের খসড়া আইন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে পরিবারের সংজ্ঞাটাই অস্পষ্ট।

পরিবার বলতে কোনো ব্যক্তি এবং তাঁর স্ত্রী, পুত্র, অবিবাহিত কন্যা, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্র এবং পুত্রের অবিবাহিত কন্যাকে বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, স্ত্রীলোকের স্বামীও পরিবারের সদস্য, অথচ খসড়ায় তার উল্লেখই নেই। শিল্প মন্ত্রণালয়ের মতে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পিতা-মাতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
খসড়ায় পল্লি এলাকা বলতে পৌরসভা বা সেনানিবাসের বাইরের অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এতে সিটি করপোরেশন যুক্ত হবে।


আইনে পর্ষদ সদস্যদের ‘ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তা হবে ‘পরিচালক’। সভায় উপস্থিতির ক্ষেত্রে বর্তমানে চারজনে কোরাম হওয়ার বিধান থাকলেও নতুন আইনে তিনজনেই কোরাম হবে বলে বলা হয়েছে। কোরামের জন্য সরকার কেন আগের চেয়ে সদস্যসংখ্যা কমাতে চাইছে—এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা নেই।
নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী তিনজনকে পর্ষদ সদস্য নিয়োগ দেবে সরকার।

অবশ্য শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, নিয়োগ দেওয়ার আগে পর্ষদ সদস্যদের যোগ্যতা স্পষ্ট করা দরকার।
খসড়া আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান অংশে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকের বিষয়াবলি ও কার্যাদির সাধারণ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান এই আইনের বিষয়াবলি অনুযায়ী গঠিত একটি পরিচালনা পর্ষদের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং ব্যাংক যেসব ক্ষমতা প্রয়োগ এবং কার্য সম্পাদন করতে পারবে, উক্ত পর্ষদও তা পারবে। ’ বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এই কথাগুলো স্পষ্ট নয়, স্পষ্ট করা দরকার।
এমডি নিয়োগের ব্যাপারে আইনে বলা হয়েছে, ‘বাছাই কমিটির সুপারিশ করা তিনজন প্রার্থীর প্যানেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনক্রমে, পর্ষদ কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। ’ বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তিনজন প্রার্থী না একজন প্রার্থীর নাম পূর্বানুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবে, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার।


ভূমির পরিমাণ ৫০ শতাংশের কম হলে ‘ভূমিহীন’ বলার কথা খসড়া আইনে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু না বললেও শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, ৫০-এর পরিবর্তে ২০ শতাংশের কম হওয়া দরকার। তা ছাড়া চাষযোগ্য জমি না থাকলেই ভূমিহীন বলা যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
মুনাফার ব্যবহার নিয়েও খসড়া আইনে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মন্তব্য দিয়েছে।
এ ছাড়া খসড়া আইনে হিসাব খোলা ও সংরক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএসএ) অনুসরণের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিএসএ অনুসরণের ব্যাপারে মত দিয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি অংশ বর্তমানের মতো ২৫ শতাংশই থাকবে। বাকি ৭৫ শতাংশের মালিকানা থাকবে ব্যাংকটির ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের হাতে। এ ছাড়া ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৩৫০ কোটি টাকা, যা প্রতিটি ১০০ টাকার তিন কোটি ৫০ লাখ শেয়ারে ভাগ করা থাকবে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন করা হবে ৩০০ কোটি টাকা।


আইনে গ্রামীণ ব্যাংকে ২৫ শতাংশের মালিকানা সরকারের হাতে রাখার কথা বলা হলেও পাশাপাশি এ-ও বলা হয়েছে যে সরকার কর্তৃক স্থাপিত, পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত এমন কোনো সংস্থা বা সংগঠন কর্তৃক সরকার যে পরিমাণ স্থির করবে, তা-ই হবে সরকারি অংশের শেয়ার।
যোগাযোগ করলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার কাছ থেকে মতামত এখনো পাওয়া যায়নি। ’ অস্পষ্টতা দূর করার জন্যই মতামত চাওয়া হয়েছে এবং পাস হওয়া আইনে অস্পষ্টতা থাকবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.