এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
একদা ছিল বিশাল বঙ্গদেশ। তা দিখন্ডিত করে হলো পশ্চিমবাংলা আর পূর্ববাংলা। আমাদের পূর্ববাংলা ‘বাংলাদেশ’ নামে পরবর্তীতে আলাদা এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠলো। ছোট দেশ হলেও এই বাংলাদেশে দেখার কত না আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে। সমুদ্র, পাহাড়, অরণ্য, বৌদ্ধ স্থাপত্য, হিন্দু-মুসলিম কীর্তি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশজুড়ে।
সমুদ্র সৈকত দেখতে হলে কক্সবাজার, কুয়াকাটা আর পতেঙ্গায় যেতে হবে। দ্বীপের শহর-কুতুবদিয়া, মনপুরা, সন্দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, হাতিয়ার রূপের যে তুলনা নেই। শাহাপরী দ্বীপ আর সোনাদিয়া দ্বীপের রূপ যেনো চিকচিক করে। লালন-রবীন্দ্রনাথের কুষ্টিয়া শিলাইদহ দেখে মুজিবনগরে গেলে বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা মনে পড়ে। খেজুরের শহর মনিরামপুর ঘুরে মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাগরদাঁড়ি দেখায় আছে আনন্দ।
এরই দক্ষিণে বাগেরহাট দেখে সুন্দরবনে এলে দু’চোখ সার্থক হয়ে ওঠে। যদিবা দেখা মেলে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ তহালে ভ্রমণ হয়ে যাবে সফল।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গেলে দেখা মেলে চায়ের দেশ সিলেট আর মৌলভীবাজার। সুনামগঞ্জে রয়েছে হাওর-বিল, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ আর হবিগঞ্জের রূপ যেনো একই। তাই বলা হয়‘ভাটির দেশ’।
আবার হাওর-বিলের দেশও বলা হয়। সর্ব উত্তরে গেলে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির দেখে ঠাকুরগাঁও আর পঞ্চগড় হয়ে তেঁতুলিয়া। এই তেঁতুলিয়ার পাশ থেকে বয়ে গেছে মহানন্দা নদী। নদীর ওপারে ভারতের পশ্চিম বাংলা। দুই তীরের একই রূপ অর্থাৎ সবুজ শ্যামল।
তখন কী মনে পড়ে না‘দু’টি পাখি দু’টি তীরে মাঝে নদী বহেঃ ছিঁড়িল বীণার তার মুছে গেল পরিচয়ঃ’ গানের কথা!
বাংলাদেশ জুড়ে কত আকর্ষণীয় জায়গার ছড়াছড়ি। আমাদের এই চিরচেনা বাংলার কী অপরূপ উপচেনা রূপ। যেনো নানা ভাব নানারƒপে এ এক আশ্চর্য সংকলন। যত দেখি তত শিখি, যত ঘুরি তত জানি। এভাবেই ভ্রমণে মনের জানালা খোলে, অন্তরে আলোর আনন্দ আসে।
তবে প্রশ্ন, ভ্রমণে দেশের কত ভাগ মানুষের আগ্রহ? মনের তাগিদে দেখার আগ্রহ নিয়ে দেশকে ঘুরে দেখেন কত ভাগ মানুষইবা? একবার কক্সবাজার ঘুরে এসে দ্বিতীয়বার ওখানে যাওয়ার কথা খুব কমজনেই ভাবেন। ভ্রমণে খরচটা এতাটা বেশি, যেজন্যে এই অবস্থা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কপথে আসা-যাওয়ায় জনপ্রতি ভাড়া প্রায় দুই হাজার টাকা। হোটেল-মোটেলে একটু আরামে থাকতে হলে দৈনিক ভাড়াটা হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার কম নয়। ভ্রমণ করে বছরে এতোটা খরচ করার সামর্থয ক’জনারই বা আছে?
দেশ-বিদেশের মানুষকে ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলার ব্যাপারে পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বটা সবচাইতে বেশি।
অথচ তারা টুঙ্গিপাড়া মধুমতি মোটেল, খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল, বান্দরবান পর্যটন মোটেলসহ নিজস্ব বেশ কয়েকটি মোটেল প্রাইভেট সেক্টরে হস্তান্তর করেছেন।
এতে করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ট্যুরিস্টরা সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেন না। এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটন মোটেল নিয়েও জনগণকে ভ্রমণে উৎসাহিত করছেন না। তাহলে পর্যটন মোটেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া কতটুকু যুক্তিসংগত হয়েছে-তা অবশ্যই পর্যটন করপোরেশনকে সহসা ভেবে দেখতে হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে পর্যটনের মোটেল ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি এখন শুধু নিষ্ফলতাই মনে হচ্ছে।
সহজ কথা হলো, পর্যটন করপোরেশনের জন্মই হলো:দেশ-বিদেশের জনগণকে ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলা। ট্যুরিস্টদের সেবার মান বাড়ানো। ‘মায়ের দরদটা কখনও মাসীর দ্বারা সম্ভব নয়’এটা কেনা জানে! সুতরাং পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, তাদের প্রতিটি মোটেল নিজেদের হাতে রেখে নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা পরিচালিত করা। সেইসঙ্গে জনগণকে ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলার জন্য চাই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। আর এভাবেই আমাদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ‘স্বর্গস্থান’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
(ইত্তেফাক)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।