আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকায় মুসলিম বিদ্বেষ

Matha kharap

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে আসলেও কিংবা সেসব দেশে ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের নাগরিক অধিকার সংরক্ষিত থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবচিত্রটি ভিন্নরকম। একথাটি স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। স্বয়ং মার্কিন আইন ও বিচারমন্ত্রী এরিক হোল্ডার একথার সত্যতা স্বীকার করেছেন। আজ আমরা বিষয়টা নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো। মার্কিন আইন ও বিচারমন্ত্রী এরিক হোল্ডার স্বীকার করেছেন যে, তাদের দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণ-বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

১১ই সেপ্টেম্বরের বিপর্যয়কর দুর্ঘটনা মার্কিনীদের ওপর এবং সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছে। যদিও মুসলমানরাও মার্কিন জনগণের সাথে ঐ দুর্ঘটনালব্ধ দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার ক্ষেত্রে সমানভাবে অংশ নিয়েছে। মার্কিন আইন ও বিচারমন্ত্রী মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্য বৃদ্ধির ঘটনায় হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, এ রকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশগুলোতে জীবনযাপন করা মুসলমানদের জন্যে দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। একটি মার্কিন গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণার ফলাফলের প্রতি ইঙ্গিত করে এরিক হোল্ডার বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য ধর্মের তুলনায় মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি বর্ণ বৈষম্যের শিকার। পু নামক একটি গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দশজন নাগরিকের মধ্যে ছয়জনই বিশ্বাস করে, তাদের দেশে ইহুদি, প্রোটেস্টান্ট এবং নাস্তিকদের তুলনায় মুসলমানরাই বেশি বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার।

আমেরিকার মুসলমানদের সাথে বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত রিপোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধির ঘটনা পু গবেষণা কেন্দ্রের মতামত জরিপের এই ফলাফলকে যথার্থ বলেই প্রমাণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের সংখ্যার প্রকৃত পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারী মতে সেখানে প্রায় আশি লক্ষ মুসলমান রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী বরণকারী একটি দেশ। সম্ভবত এ কারণেই তাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে,আমেরিকায় বিভিন্ন ধর্ম ও মাযহাবের অনুসারীরা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। অবশ্য আমেরিকায় প্রচারিত গণতন্ত্রের কিছু কিছু শ্লোগানও সেদেশের জনমনে এই ধারণাকে দৃঢ়তা দিয়ে থাকতে পারে।

পক্ষান্তরে হলিউডও বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে চলচ্চিত্রের পর চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিশ্ববাসীর সামনে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা স্বাধীন ও ন্যায়কামী। যদিও বাস্তব অবস্থা হলিউডের চলচ্চিত্রে রূপায়িত চিত্র থেকে আলাদা। আমেরিকায় গত চার দশক ধরে নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং বর্ণবৈষম্য মূলক আইন বাতিলের আন্দোলন চালিয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ক্ষমতার শীর্ষস্থানে পৌঁছুতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার শীর্ষস্থানে পৌঁছানো থেকে প্রমাণিত হয় না যে আমেরিকায় বর্ণবৈষম্য নেই। এখনো আমেরিকার বহু রাজনীতিবিদ যখন বারাক ওবামার নীতির বিরোধিতা করে কিংবা সমালোচনা করে তখন মাঝে মাঝেই ওবামার চামড়ার রঙের প্রসঙ্গটি টেনে নিয়ে আসে।

এখনো রঙ্গিন বা অ-শ্বেতাঙ্গ চামড়ার লোকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের ওপর বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। এখনো কৃষ্ণ চামড়ার অধিকারী হওয়া কিংবা অ-ইংরেজি ভাষায় কথা বলাটা মার্কিন অ-শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠির সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ক্ষেত্রে একটি সূচক হিসেবে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গরা এখনো দ্বিতীয় সারির জনগণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। অবশ্য বর্ণ-বৈষম্যমূলক ব্যবহার কেবল কৃষ্ণাঙ্গদের সাথেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং মার্কিন সমাজে অ-খ্রিষ্টান বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠিই সেদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার।

১১ই সেপ্টেম্বরের দুর্ঘটনার পর মুসলমানদের ওপর বৈষম্যের মাত্রা আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা মার্কিন শাসক গোষ্ঠিকে অজুহাত সৃষ্টির চমৎকার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। সেই সুযোগটি হলো সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সংগ্রামের শ্লোগান তুলে আমেরিকার ভেতর এবং বাইরে মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করা। ইসলাম বিরোধিতার একটা প্রবাহ বা ধারাই যেন সৃষ্টি করা হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর। হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতারা এবং মার্কিন মিডিয়া সাম্রাজ্যবাদও আমেরিকার শাসক গোষ্ঠির ঐ বৈষম্যমূলক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই দুটি মাধ্যম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে একথা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে আসছে যে,ইসলাম হলো সহিংসতাকামী এবং সন্ত্রাস লালনকারী একটি ধর্ম। এইসব গণমাধ্যমের ইসলাম বিরোধী ব্যাপক প্রচারণার ফলে ইউরোপ এবং আমেরিকায় সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামাজিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্য ও চাপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আরবি ভাষায় কথা বলা,ইসলামী নাম থাকা,মুসলিম নারীদের হিজাব পরা ইত্যাদি যেন পাশ্চাত্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অজুহাত সৃষ্টির সুবর্ণ সুযোগে পরিণত হয়েছে। মার্কিন সরকার ও তাদের গণমাধ্যমের সৃষ্ট ইসলাম বিরোধী এই ধারার ফলে সেদেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। মজার ব্যাপার হলো ইসলামের বিরুদ্ধে এতো বৈষম্যের পরও এই ধর্ম যেহেতু ন্যায়নীতি ও স্বাধীনতাকামী বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত,সেহেতু পশ্চিমা সমাজে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ইসলাম ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে।

পশ্চিমা সমাজে যারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তারাই মূলত বেশি বেশি ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে। এ বিষয়টাই প্রমাণ করছে যে, ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণার ভয়াবহ ঝড় বইয়ে দেওয়া সত্ত্বেও চরিত্র গঠনকারী এবং ন্যায়নীতিকামী ধর্ম ইসলাম পশ্চিমা বিশ্বে তার প্রভাব ফেলছে এবং তাদেরকে সত্য গ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলছে। পশ্চিমারা অবশ্য নিজেদেরকে স্বাধীনতাকামী বলে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে,যেমন তারা ইসলাম বিরোধী প্রচারণা চালানোকে গণমাধ্যম এবং মানুষের বাক-স্বাধীনতা বলে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। মুসলমানরা যখন ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাতে যায় তখন তাকে বাক-স্বাধীনতা পরিপন্থী বলে ঘোষণা দেয়। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কিছু দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে যেসব দেশ ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিন্টন এই তালিকা প্রসঙ্গে ধর্মের অবমাননা করাকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। ক্লিন্টন তার এক বক্তৃতায় বলেছেন ধর্মের অবমাননা বন্ধের জন্যে মুসলিম দেশগুলো যে চেষ্টা চালায় তা বাক-স্বাধীনতার পরিপন্থী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন এক পরিস্থিতিতে বাক-স্বাধীনতার বিরূপ ব্যাখ্যা দিলেন,যখন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসলামের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছেন। এমনকি মুসলিম দেশগুলো এবং সমগ্র মুসলিম জাতির সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার পক্ষে কথা বলছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকগণ বলছেন বারাক ওবামা যে মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন,সেটা তাঁর একটা কৌশল।

বুশের শাসনামলে মুসলিম দেশগুলো এবং মুসলিম জনগোষ্ঠির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যে অবনতি ঘটেছিল তা পুনরুদ্ধার করার একটা প্রয়াস এটি। কিন্তু হিলারি ক্লিন্টন বাক-স্বাধীনতার ধুয়া তুলে ধর্মীয় অবমাননাকে বৈধ বলে বক্তব্য দিয়েছেন। এসব থেকে বোঝা যাচ্ছে, মুসলিম দেশগুলোতে মার্কিন আধিপত্যবাদী নীতির ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যে এবং নিজেদের দেশের জনগণের মাঝে ইসলাম-ভীতি প্রসারের স্বার্থেই মার্কিন কর্মকর্তারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সংক্‌লিত


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।