আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিঠুর অভিজ্ঞান



নিঠুর অভিজ্ঞান ...পৃথিবীর সব বই পরষ্পরের সঙ্গে যুক্ত। এবং সত্যিই পৃথিবীর সব বই মিলে আসলে একখানা বই। কাব্য, নাটক, ভুগোল, ইতিহাস, ইঞ্জিনিয়ারি, ডাক্তারি, ব্যাকরণ...যত বই আছে সব মিলে আছে একখানা বই মাত্র পৃথিবীতে। (আমার বাড়ি; বিনয় মজুমদার) আমাদের শরীরের নানাস্থান দিয়ে যা বেরোয় গুহ্যদ্বার দিয়ে বেরোয়, নাক দিয়ে সর্দি বেরোয়, লিংগ দিয়ে পেচ্ছাব বেরোয়্‌, সবি নোংরা ত্যাজ্য পদার্থ, কান দিয়ে খইল বেরোয়, মুখ দিয়ে কফ বেরোয় অর্থাৎ শরীর থেকে যাই বেরোয় সবি নোংরা ত্যাজ্য পদার্থ। (তিনদিন; বি.ম.) আমার বিশেষ্যপদ, শোনো, আমি সুর্যের ভিতরে থাকবো করেছি স্থির কয়েক শতাব্দিব্যাপি সুর্যদেব নামধেয় অগ্নির ভিতর (আমার বিশেষ্যপদঃ বি.ম.) কৌরব ছোট কাগজের সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ সঙ্খ্যার ক্রোডপত্র বিনয় মজুমদার অংশ থেকে উদ্ধৃত বিনয়ের দুটো গল্পাংশ ও একটি কবিতাংশ পাঠে আমরা দেখবো সাহিত্যের সব আংগিক বিনয় মজুমদারে এসে তলহারা।

গল্প আর গল্প নেই। কবিতাও নেই কবিতা। শুধু এক বোধের প্রতিমা আছে। যে বোধের বলে বিনয় মজুমদার এই বিপুলা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণপ্রবাহের গোপন সুত্রাবলির সন্ধান পেয়েছেন। এমনি এমনি সাদা চোখে তার দেখা পাওয়া অসম্ভব।

স্বাভাবিক বেচে থাকার আড়ালে লক্ষ বছর নিশ্চুপ হয়ে সুর্যদেব নামধেয় অগ্নির ধারে আর সমুদ্র নামধেয় দিগন্তের কিনারে বসে থাকলেই বোধহয় শোনা যায় সেইসব রহস্যভরা সত্যের কাকলি। কোন আধিভৌতিক জগতের কথা বলছিনা, শুধু বলতে চাইছি বিনয় মজুমদার সকল লোকের ভীড়ে ক্রমশ আলাদা হয়ে উপার্জন করেছেন সৃষ্টির রঙ রুপ রসের গুপ্ত সমুদয় চাবি। নক্ষত্রের আলোয়, অঘ্রানের অনুভুতিমালা, ভুট্টা সিরিজ বা শেষপর্যায়ি বিনোদিনী কুঠী পর্যন্ত কেবল তালা খুলে যাওয়ার চেষ্টা। কাব্য প্রসাধনের লিপ্সা বর্জিত বিনয় মজুমদার নিজস্ব রন্ধ্রে পঞ্চভুতের বিরল ব্যাথা ধারন করে আবিষ্কারের চেষ্টা করলেন বিন্দুতম মধুর। কিন্তু কোথায় পাবো তারে? মধু্রকে।

মধুর তোমার শেষ যে না পাই। তবু মধুরের শুরু কোথায়! এই হিংসা-সংক্রামক গ্রহের কোথাও বিনয় তার সন্ধান পাননি। তাই তার নিঠূর অভিজ্ঞান-মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়। যে বর্জ্যভারাতুর পৃথ্বির সাথে বিনয় কোন সমঝোতায় আসতে চাননি। চেখে দেখতে চেয়েছেন দ্বন্দ্বের স্বরুপ।

কুসুমের আড়ালে কীটের আনাগোনা-যা এড়িয়ে যাওয়া কোন সৎ শিল্পির বৈশিষ্টে পড়েনা। নিখিল শৈত্যের ভেতর, দাবদাহের ভেতর কখনো সনেটের রীতিবদ্ধ আঙ্গিকে, কখনো নির্বিকার ডাইরির ঢঙ্গে যেন শুধু লিপিবদ্ধ করে গেছেন তার রাত্রী ও ভোরের অনুভবমালা। অনেক ছোবল নিয়ে প্রানে তাই বিনয় জ়েনে গেছেন বিদীর্ণ হওয়া কাকে বলে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।